হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো: কলকাতা ডার্বি। এটা মাত্র দুটো শব্দ নয়, একটা গোটা জাতির আবেগ। প্রায় ১২ বছর সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলার সুবাদে এই আবেগ নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়েছে আমার। এবার তো আড়াই বছর পর কলকাতায় ফের ডার্বি হতে চলেছে। ফলে দুই প্রধানের সমর্থকদের আবেগ যে অন্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
ডুরান্ড কাপ (Durand Cup) দিয়ে এবার ভারতীয় ফুটবলের মরশুম শুরু হয়েছে। দুই প্রধানই এখনও পর্যন্ত মাত্র ২টো করে ম্যাচ খেলেছে। শুনেছি, মোহনবাগানে স্ট্রাইকার নিয়ে সমস্যা রয়েছে। কোচ জুয়ান ফেরান্দো কেন কোনও বিদেশি স্ট্রাইকার দলে নেননি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সব কোচই নিজের মতো করে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে। ফেরান্দোও ব্যতিক্রম নয়। আর মোহনবাগানে গোল করার লোক নেই, এমন না। পাশাপাশি ইমামি ইস্টবেঙ্গলে গোল করার সুযোগ তৈরি হলেও তা গোলে পরিণত হচ্ছে না। ডুরান্ডের প্রথম দুই ম্যাচে এখনও গোল করতে পারেনি তারা। কিন্তু আমি তা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন নই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলব, মরশুম সবে শুরু হচ্ছে। এই সময় গোল করা নিয়ে সমস্যা হওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়। ইস্টবেঙ্গলের গোটা দলটাই প্রায় নতুন, মোহনবাগানেও বেশ কয়েকটা নাম যোগ হয়েছে। দুই দলই সেভাবে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেনি। ফলে এখনও নিজেদের মধ্যে সেভাবে বোঝাপড়া তৈরি হয়নি। তার মধ্যেও ফুটবলাররা সুযোগ তৈরি করছে, সেটা ইতিবাচক দিক। সুযোগ তৈরি হচ্ছে, গোলও হয়ে যাবে।
[আরও পড়ুন: ছিল গগনচুম্বী অট্টালিকা, হল ধুলোর স্তূপ, নিমেষে ধ্বংস নয়ডার টুইন টাওয়ার, দেখুন ভিডিও]
রবিবারের ডার্বিতে আমি অবশ্য কিছুটা হলেও মোহনবাগানকে (Mohun Bagan) এগিয়ে রাখব। কারণ কয়েকজন নতুন ফুটবলার এলেও ওরা গতবারের দলের প্রায় পুরোটাই ধরে রেখেছে। পাশাপাশি কোচ হিসেবে ফেরান্দোও নতুন নয়। ফলে ওদের খেলার স্ট্র্যাটেজিতে খুব একটা বদল হয়নি। আগের বছর থেকে অধিকাংশ ফুটবলার ফেরান্দোর (Juan Ferando) কোচিংয়ে খেলছে। ফলে তাঁরা জানেন কোচ ফেরান্দো কোন স্ট্র্যাটেজিতে খেলাতে চান। এর ফলে ফুটবলারদের কাছে নতুন করে নিজের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে না ফেরান্দোকে। আবার ফেরান্দোও জানে, দলের কোন ফুটবলারকে কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এটা যে কোনও দলের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্টেজ। বিশেষত ডার্বির মতো ম্যাচে যা দুই দলের মধ্যে তফাৎ গড়ে দিতে পারে। সেখানে ইমামি ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) গোটা দলটাই নতুন ভাবে তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ ফুটবলারই নতুন। গত মরশুমে থেকে জনা তিনেকের বেশি ফুটবলার নেই। ফলে টিম হয়ে উঠতে ওদের একটু সময় লাগবে। পাশাপাশি মোহনবাগানে ডার্বি খেলা ফুটবলারের সংখ্যাও বেশি। লিস্টন কোলাসো, জনি কাউকো, হুগো বুমোসরা এর আগেও ডার্বি খেলেছে। প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসুরা তো ডার্বি দেখেই বড় হয়েছে। এর সুবিধা রবিবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে যুবভারতী স্টেডিয়ামে মোহনবাগান পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
একসময় ডার্বিতে ভাল খেলে সমর্থকদের নজরে পড়েছি। পরের দিকে ডার্বির বহু আগে থেকেই গোলের আবদার পেতাম সমর্থকদের কাছ থেকে। কখনও সেই আবদার রাখতে পেরেছি, কখনও পারিনি। একটা বিষয় শিখেছি যে, কলকাতা ডার্বি সবসময় নতুন তারকার জন্ম দেয়। এই একটা ম্যাচে ভাল বা খারাপ পারফরম্যান্স একজন ফুটবলারের কেরিয়ার বদলে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে বহু ডার্বি খেলার সুবাদে সেটা ভালভাবেই জানি। যেমন শেষ ডার্বির নায়ক মোহনবাগানের কিয়ান নাসিরি। ডার্বির আগে ওকে সেভাবে কেউই চিনত না। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের পর কিয়ান রাতারাতি নায়কের আসনে উঠে আসে। রবিবার তেমন কোনও নতুন নায়ককে দেখার আশা নিয়েই মুম্বইয়ের বাড়িতে ডার্বি দেখতে বসব।