ইস্টবেঙ্গল: ০
মোহনবাগান: ২ (ডিকা)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডাগআউটে নেই সঞ্জয় সেন। মাঠে নেই সোনি নর্ডি। তা সত্ত্বেও আই লিগের ফিরতি ডার্বির রং রইল সবুজ-মেরুনই। আন্ডারডগ হিসেবে নেমে ইস্টবেঙ্গলকে দুরমুশ করে মাঠ ছাড়লেন আক্রম-ডিকারা।
প্রথম মিনিটের একটা গোলই জমিয়ে দিল রবিবাসরীয় যুবভারতীর লড়াই। নিখিল কদমের ক্রস আক্রমের মাথা ছুঁয়ে পৌঁছে যায় ডিকার পায়ে। গোল করতে কোনও ভুল করেননি তিনি। আর এই গোলই দু’দলের খেলার চেহারাটাই বদলে দিল। আক্রমণাত্মক, গতিময় ফুটবলের সাক্ষী থাকলেন দর্শকরা। শেষ কবে আই লিগ ডার্বি এমন উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল, মনে করা কঠিন। ২-০ গোলে খেলা শেষ হল ঠিকই, কিন্তু ফিরতে পারত ৫-৩ ম্যাচের সেই স্মৃতি। এদিন পাঁচ গোলে জিততে পারত দল।
[ছন্নছাড়া ফুটবল, পুণে সিটির কাছে জঘন্য হার এটিকের]
চোটের জন্য নিজে থেকেই দল ছাড়ছেন সোনি। খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য ছেঁটে ফেলা হয়েছে ক্রোমাকেও। দুই বিদেশি ওয়াটসন ও আক্রমের কাছে ডার্বির অভিজ্ঞতা এক্কেবারে নতুন। তাই নিজেদের আন্ডারডগ মেনে নিয়েও ডিকার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সবুজ-মেরুন ভক্তরা। ডিকা নিজেও জানেন, টুর্নামেন্টের এমন পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে বাইরের পথ দেখতে দেরি হবে না। ইতিমধ্যেই তাঁকে সতর্কও করা হয়েছে। তাই সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপে সঙ্গে ছিল ক্লাব হারানোর দুশ্চিন্তাও। সেই চাপ সামলে মাথা ঠান্ডা করে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিলেন ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড। তাঁর এদিনের দ্বিতীয় গোলটি দেখলে হয়তো ওয়েন রুনিও গর্ববোধ করতেন। রেনিয়ারের কর্নার কিক থেকে বাঁ-পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে ব্যবধান বাড়ান তিনিই। যে ডিকাকে আদৌ ডার্বিতে দেখা যাবে কিনা, সে নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, এদিন মোহনবাগান গ্যালারি সেই ডিকা নাম ধরেই গলা ফাটালো। তবে এদিন হ্যাটট্রিকের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে নিঃসন্দেহে হাত কামড়াবেন তিনি।
খালিদ জামিলের কোনও তুকতাকই এদিন কাজে এল না। ম্যাচ যত গড়াল, পরিবেশ পরিস্থিতি ততই মোহনবাগানের অনুকূলে চলে গেল। প্রথম মিনিটে গোল হজম করতেই সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে পড়েন কাটসুমিরা। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমনার চোট ফের সমস্যায় ফেলে দেয় ইস্টবেঙ্গলকে। মাঝমাঠ থেকে বল সাপলাইয়ে ভাটা পড়তে শুরু করে। কাটসুমি একাই লড়ে গেলেন। কর্নারকে কাজে লাগিয়ে যাও বা প্লাজা বল জালে জড়িয়ে দলে স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা করলেন, লাইন্স ম্যানের বাঁশিতে তাও জলে গেল। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে সহজ গোল হাতছাড়া করেন নিখিল কদম।
[শারজায় পাকিস্তানকে হারিয়ে দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয় ভারতের]
এদিন শুধুই ফুটবলারদের নয়, পরীক্ষা ছিল কোচ শংকরলাল চক্রবর্তীরও। প্রথমবার আই লিগে হেডস্যার হিসেবে দলকে পরিচালনা করলেন। আর প্রথমেই হাসি ফোটালেন। জোড়া গোলে এগিয়ে গিয়েও ডিফেন্সিভ ফুটবল না খেলিয়েই বাজিমাত করলেন তিনি। এই বুঝি গোল খেয়ে যাই। দুরন্ত ফর্মে থাকা প্রতিপক্ষকে এই আতঙ্কে রাখা চারটিখানি কথা নয়। এদিন সেই কাজটাই করলে সফল শংকরলালের ছেলেরা। দ্বিতীয়ার্ধেও বজায় ছিল আক্রমণ। দু’টি নিশ্চিত গোল আক্রম মিস না করলে ঐতিহাসিক জয় পেতেই পারত গঙ্গাপারের ক্লাব । তবে গোটা ম্যাচে দুই নয়া তারকা ওয়াটসন ও আক্রম ভালই নজর কাড়লেন। ওয়াটসনের উপস্থিতিতে মাঝমাঠের ভগ্নদশায় এদিন অনেকটাই প্রলেপ পড়ল। আক্রমও বুঝিয়ে দিলেন, তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া।
আর সোনি? না থেকেও তিনি সারাক্ষণ ছিলেন প্রিয় দলের সঙ্গে। মাঠে তাঁর মুখোশ পরে হাজির সমর্থকরা। আর তাঁকে সম্মান জানাতে তিন পয়েন্ট ঝুলিতে ভরলেন সতীর্থরা। বিদায় বেলায় এর চেয়ে মধুর উপহার আর কীই বা হতে পারত সোনির জন্য। সবমিলিয়ে লিগ তালিকায় এগিয়ে থেকেও ডার্বি হারের খোঁচাটা এ মরশুমের মতো রয়েই গেল ইস্টবেঙ্গল শিবিরে।
The post ডিকা ম্যাজিকে সম্মানের ডার্বির রং সবুজ-মেরুন appeared first on Sangbad Pratidin.