shono
Advertisement

Breaking News

ICC ODI World Cup 2023: বিশ্বজয়ী হওয়ার স্বপ্ন অধরা, পর্দার আড়ালেই থেকে গেলেন রাহুল দ্রাবিড়

পর্দার আড়ালেই থেকে গেলেন ‘ইন্দিরানগর কা গুন্ডা’!
Posted: 10:01 PM Nov 19, 2023Updated: 11:11 PM Nov 19, 2023

সব্যসাচী বাগচী: ৪৭ রানে বিপক্ষের ৩ উইকেট চলে যাওয়ার পর তাঁকে একবার টেলিভিশন স্ক্রিনে দেখা গেল। চিন্তিত মুখে এক চিলতে হাসি। তবে কালের নিয়মে সেই হাসি বিলীন হয়ে গেল। ট্রাভিস হেডের (Travis Head) মারমুখী শতরান দেখে বিচলিত হয়ে গিয়েছিলেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (Glenn Maxwell) উইনিং শটের পর দেখা গেল টুপি খুলে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয় রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। যিনি ১৯ নভেম্বরের রাতে নীরব যোদ্ধা থেকে ‘ইন্দিরানগর কা গুন্ডা’, ২০ বছর পর বিশ্বজয়ী হতেই পারতেন। তবে সেটা হল না। পর্দার আড়ালেই থেকে গেলেন ‘দ্য ওয়াল’।

Advertisement

ইয়ান চ্যাপেল (Ian Chappell) একবার বলেছিলেন, ‘দল বিপদে পড়েছে? কার দিকে তাকাবে? রাহুল দ্রাবিড়।’ ঠিকই বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট। ভারতীয় ক্রিকেটের একজন নীরব যোদ্ধা, একজন ভাবলেশহীন সাধককে তো এভাবেই বিশ্লেষণ করা উচিত। ক্রিকেটার হিসাবে প্রচারের আলোর বাইরে থাকতেন। হাই প্রোফাইল টিম ইন্ডিয়ার (Team India) হেড কোচ হয়েও নিজেকে বদলাতে পারেননি। তবুও ক্রিকেট দেবতা তাঁকে বিশ্বজয়ী হওয়ার সুযোগ দিল না।

ক্রিকেট জীবনের পুরোটা সময় মহাতারকাদের গ্ল্যামারের ছটায় পর্দার পিছনেই থেকে গেলেন। অনেকটা সেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’ মতো। কেরিয়ারের শুরুতে শচীন তেণ্ডুলকর (Sachin Tendulkar), সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। পরবর্তী সময় বীরেন্দ্র শেহওয়াগ (Virender Sehwag), মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni), যুবরাজ সিং-দের (Yuvraj Singh) প্রভাবে দ্রাবিড় যেন স্কুলের সেই ‘ মিডিওকার ছাত্র’-এর মতো। যার কাজ শুধু নীরবে পারফর্ম করে যাওয়া। কোচ হিসাবেও তো রাহুলের বায়োডাটা তেমনই। বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), জশপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah), রবীন্দ্র জাদেজাদের (Ravindra Jadeja) তারকাখচিত ড্রেসিংরুমে, রাহুল শুধুই একজন ‘মাস্টার মশাই’। তবুও সেই দ্রাবিড় বিশ্বজয়ী কোচদের তালিকায় নাম লেখাতে পারলেন না। হল না তাঁর প্রতি পোয়েটিক জাস্টিস।

[আরও পড়ুন: কুড়ি বছরের কাটা ঘা পেল না বদলার মলম, তৃপ্তির হাসি হাসা হল না সৌরভের]

২০ বছর আগের কথা। ২০০৩ সালের ২৩ মার্চ। জোহেনেসবার্গের সেই রাতটা রাহুল জীবনে ভুলতে পারবেন না। রিকি পন্টিংয়ের ১২১ বলে ১৪০ রানের সেই অপরাজিত বিধ্বংসী ইনিংস এখনও রাহুলের মনকে নাড়া দিয়ে যায়! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডেপুটি হিসাবে কাপ জেতা তাঁর অধরা রয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চেও সেই একই ছবি। সেই কলঙ্কিত বিশ্বকাপে রাহুল আবার ছিলেন অধিনায়ক। বাংলাদেশের কাছে হেরে সেই কাপযুদ্ধ থেকে তাঁর দলকে বিদায় নিতে হয়েছিল। আর এবার কোচ হিসাবেও খালি হাতে ফিরলেন তিনি।

বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পাওয়া তো অনেক দূরের কথা, খেলোয়াড় জীবনে তিনি যেন মহাভারতের কর্ণের মত আখ্যা পেয়েছিলেন। যাঁর কাজ শুধু উপরতলার লোকজনদের কথা শুনে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে স্রেফ অর্ডার পালন করা। সেটাই বছরের পর বছর ধরে করেছেন পেশাদারিত্বের সঙ্গে। তবে এবার ব্যাট হতে নয়, সাজঘরে বসে মাথা খাটিয়ে দেশকে কাপ জেতার দোরগোড়ায় এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু চায়ের কাপ ঠোঁটের মধ্যে তফাৎ থেকেই গেল।

তবে তাঁর মতো ব্যাক্তিত্বের নতুনভাবে প্রমাণ করার কিছুই নেই। তবুও রাহুলকে বারবার কেরিয়ারের বিভিন্ন ধাপে নিন্দুকদের সামনে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। একগাদা অখ্যাত জুনিয়রকে নিয়ে কোচ হিসাবে জিতেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। সামলেছেন জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দায়িত্ব। তবুও তিনি কটাক্ষের শিকার হয়েছেন। গত বছর রোহিতের নেতৃত্বে টি-টিয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ভারত। ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে হার হজম করে। চলতি বছরের জুনে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে ২০৯ রানে হারতে হয়েছিল। সিনিয়র দলে রাহুলের কোচিং সত্ত্বা নিয়ে উঠে গিয়েছিল প্রশ্ন। এবার অজিদের হারিয়েই তাঁর কোচ হিসাবে ‘কুলীন’ হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা হল না। ২০০৩ সালের ২৩ মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর। পুরো ৭৫৪৬ দিন লেগে গেল। ক্রিকেটার থেকে কোচ রাহুলের স্বপ্ন পূরণ হল না।

‘ইন্দিরানগর কা গুন্ডা’ পর্দার আড়ালেই থেকে গেলেন। গত ২০ বছর ধরে রাহুলের ঘরের ট্রফি ক্যাবিনেটে একটি রুপোর মেডেল একা থাকত। এবারও সেই মেডেল একাই রয়ে গেল।

[আরও পড়ুন: হৃদয়ে দেশ! বিশ্বজয় না হলেও দ্বেষের মোকাবিলা করেই মন জয় মহম্মদ শামির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement