সব্যসাচী বাগচী: সামনের লড়াই আরও কঠিন। আর তাই চলতি আইএসএলে (ISL 10) আপাতত দুই নম্বরে থাকা এফসি গোয়ার (FC Goa) বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচ নিয়ে ভাবছে মোহনবাগান (Mohun Bagan)। অবশ্য শুধু তো প্রতিপক্ষ নয়, হায়দরাবাদ এফসির (Hyderabad FC) বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে জয় পেলেও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে একাধিক ফুটবলারের চোট ও কার্ড সমস্যা। যদিও আন্তোনিও লোপেজ হাবাস (Antonio Lopez Habas) দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেকেই মনে করছেন, বাগানে বসন্ত আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। সত্যি কি তাই? হাবাসের নতুন ইনিংস ও জনি কাউকোর (Joni Kauko) ফিরে আসা কতটা সবুজ-মেরুনকে উজ্জীবিত করবে? এ নিয়ে কথা বললেন চার প্রাক্তন সুব্রত ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অলোক মুখোপাধ্যায় এবং শিশির ঘোষ। তাঁদের বক্তব্য সংবাদ প্রতিদিন.ইন-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
হাবাসের কামব্যাক…
সুব্রত ভট্টাচার্য: হায়দরাবাদকে হারানোর পর অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করছে। এটা ঠিক নয়। এবারের পারফরম্যান্সের নিরিখে হায়দরাবাদ লিগ টেবলের শেষে থাকলেও, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যথেষ্ট লড়াই করেছে। আর তাই এই জয়কে নিয়ে কটাক্ষ করা একেবারেই উচিত নয়। যেকোনও পরিস্থিতিতে তিন পয়েন্ট দলকে উজ্জীবিত করে। মোহনবাগানের ক্ষেত্রেও তাই। এবং হাবাস আসার পর আমি তো খেলার মধ্যেও অনেক ইতিবাচক দিক দেখতে পেলাম। তবে এই জয় নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কারণ এফসি গোয়া খুবই শক্তিশালী দল।
[আরও পড়ুন: শ্বশুরের সঙ্গে সম্পর্ক কেন তলানিতে? প্রশ্ন শুনতেই চটে লাল রবীন্দ্র জাদেজার স্ত্রী]
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়: জনি কাউকোকে ফিরিয়ে আনা অনেক বড় ফ্যাক্টর। ও পুরো ফিট হয়ে গেলে মোহনবাগানের চেহাড়া বদলে যাবে। কারণ ও বক্স থেকে মাঝমাঠ পর্যন্ত অনেকটা জায়গা নিয়ে খেলে। আমার সঙ্গে অনেকে একমত হবেন কিনা জানিনা, তবে জুয়ান ফেরান্দোর কোচিংয়ে মোহনবাগানে একটা ছন্নছাড়া ভাব চলে এসেছিল। আশাকরি হাবাসের কোচিংয়ে আমরা পুরোনো মোহনবাগানকে দেখতে পাব। সেটা গত ম্যাচেই বুঝতে পেরেছি। হাবাস রক্ষণ মজবুত করে খেলতে নামে। তাই আমরা আশা করতেই পারি, আগামী ম্যাচগুলোতে মোহনবাগান একাধিক গোল হজম করবে না। আর গোল না খেলে এই দল যে কোনও সময় গোল করতে পারে। কারণ মোহনবাগানের স্ট্রাইকিং লাইন খুবই ভালো।
অলোক মুখোপাধ্যায়: হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জয় নিয়ে একেবারেই উল্লাস করা উচিত নয়। কারণ মরশুমের শুরুতে মোহনবাগান তারকাখচিত দল গড়লেও, এর প্রতিফলন কিন্তু মাঠে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। ফেরান্দো কোচ হিসেবে থাকার সময় হাবাসকে টিডি করে ওর মাথার উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দলের সাদামাটা পাফরম্যান্সের এটা অন্যতম বড় কারণ। সবাই হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জয় নিয়ে আলোচনা করলেও, বিদেশিহীন দলটা কিন্তু বেশ কয়েকবার গোল করার সুযোগ পেয়ে যায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচ। সেই ম্যাচে বোঝা যাবে হাবাসের কোচিংয়ে মোহনবাগান কতটা ঘুরে দাঁড়াল।
শিশির ঘোষ: তরুণ ফুটবলারে ভরা হায়দরাবাদকে দুর্বল দল বলে মনে করা হলেও মোহনবাগানকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। পুরোপুরি দেশীয় তরুণ ফুটবলার ও সাপোর্ট স্টাফে গড়া দলকে দুর্বল মনে করাটা বোধহয় বোকামিই হবে। তাই মোহনবাগানের জয়কে খাটো করে দেখা উচিত হবে না। জয় সবসময় অন্য মাত্রা যোগ করে। আগামী ম্যাচে মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া। কঠিন অ্যাওয়ে ম্যাচের আগে এই জয়টা অনেক দরকার ছিল।
হুগো বুমোসের বিদায় কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
সুব্রত ভট্টাচার্য: হুগো বুমোস ভালো ফুটবলার। কিন্তু ফুটবলে শেষ কথা বলেন একজন কোচ। হাবাস যদি বুমোসকে পছন্দ না করে তাহলে তো তাঁকে দলের বাইরে যেতেই হবে। আশাকরি দলের ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকিটা বোঝার জন্য সবাইকে মরশুম শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বুমোসকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত কোচের। বুমোস খুব ভালো ফুটবলার হলেও হাবাসের স্টাইলের সঙ্গে খাপ খায় না। বুমোস একা খেলতে ভালোবাসে। ফেরান্দো এই ব্যাপারটা পছন্দ করলেও হাবাস সবসময় দলগত খেলার উপর বিশ্বাসী। হাবাস চায় গোলকিপার ছাড়া বাকি ১০জন যেন একজোট হয়ে খেলে। প্রতি দলেই এমন কয়েকজন ফুটবলার থাকে, যারা একক দক্ষতায় ম্যাচের ফলফল বদলে দেয়। তবে হাবাস শুধু কোনও ফুটবলারের উপর বিশ্বাস করে না। ও সবসময় দলকে এগিয়ে রাখে। তাই জনি কাউকোর কামব্যাক হল।
অলোক মুখোপাধ্যায়: বুমোস যতই ভালো ফুটবলার হোক, ডিসিপ্লিন বজায় রাখাও কিন্তু জরুরি। শুনেছি কোচের সঙ্গে ওর ফুটবল দর্শনের তফাৎ ছিল। তাই ওকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। তবে এটা প্রথমবার নয়। এর আগে এফসি গোয়াতে থাকার সময়ও কোচের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিল বুমোস। ওর বদলে আসা কাউকো ভালো ফুটবলার হলেও, এখনই ওকে নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। ওকে আরও সময় দেওয়া উচিত।
শিশির ঘোষ: বুমোসকে ছেড়ে দেওয়া একেবারে কোচের সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে এতটুকু বলতে পারি জনি কাউকো ফিরে আসার জন্য মোহনবাগানের চেহারা বদলে গিয়েছে। এই দলে একজন যোগ্য নেতার প্রয়োজন ছিল। আশাকরি কাউকোর মধ্যেই সেই নেতাকে খুঁজে পাবে বাকি ফুটবলারা। কাউকোর ফেরার প্রভাব এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচেই দেখা যেতে পারে।