‘দেশের সব মেয়ের হয়েই ভারোত্তোলন করি, অলিম্পিকে লক্ষ্য সোনা’, বললেন মীরাবাই চানু

05:09 PM Mar 06, 2023 |
Advertisement

This browser does not support the video element.

বক্তা যিনি, তাঁকে আপাত দর্শনে মনেই হবে না ভারতবর্ষের ভারোত্তোলনে নতুন প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন টোকিও অলিম্পিকে রুপো জিতে। মীরাবাই চানুকে দেখলে পাশের বাড়ির মেয়েই মনে হয় বেশি, ভারোত্তোলক নয়। কিন্তু মীরাবাই চানু যে আদতে বহ্নিশিখা, তা বোঝা গেল দ্রুতই। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

Advertisement

প্রশ্ন: মীরা, কলকাতায় এসে পিৎজা অর্ডার করলেন?
মীরাবাই: নাহ্ (হাসি)। এখন নিউট্রিশিয়ানের কড়া রুটিনে আছি।
প্রশ্ন: সে কী! আপনার পিৎজা-প্রেম তো ভুবনবিখ‌্যাত। কলকাতা এসেছেন ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেল। এখনও পিৎজা অর্ডার করেননি?
মীরাবাই: না তো। বললাম না, নিউট্রিশিয়ান ডায়েট চার্ট করে দিয়েছে। নড়াচড়ার বিশেষ উপায় নেই। তবে কথা দিচ্ছি, এশিয়ান গেমসে পদক পেলে আমার পিৎজা সেলিব্রেশন আপনারা দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন: আপনার পয়া কানের দুল আর নেলপলিশও সঙ্গে থাকবে নিশ্চয়ই এশিয়ান গেমস খেলতে যাওয়ার সময়?
মীরাবাই: অবশ‌্যই। আমি সমস্ত টুর্নামেন্টে ওটা পরে যাই।
প্রশ্ন: বুঝলাম। একটা কথা বলুন। টোকিও অলিম্পিকে রুপো জিতেছেন আপনি। মাঝে এশিয়ান গেমস আছে, আগামী বছর প‌্যারিসে আবার অলিম্পিক। সোনা জিততে কী কী করা শুরু করেছেন?
মীরাবাই: নিজের খেলায় কিছু কিছু বদল এনেছি আমি। কড়া ট্রেনিং চালাচ্ছি। আশা করছি, এশিয়ান গেমস আর প‌্যারিস অলিম্পিকে সোনা জিতে ফিরতে পারব।
প্রশ্ন: অথচ একটা সময় আপনি ভেবেছিলেন ভারোত্তোলনই ছেড়ে দেবেন!
মীরাবাই: হুঁ। ভেবেছিলাম তো। রিওতে চরম ভরাডুবির পর। ২০১৬ রিও অলিম্পিক আমার জীবনের অলিম্পিক ছিল। জানেন, ট্রায়ালে ভাল করেছিলাম আমি। ভেবেছিলাম, সেই একই পারফরম‌্যান্স আমি অলিম্পিকেও করতে পারব। কিন্তু হল না। অথচ আমি রিওয় পদক জিততে কী যে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েছিলাম, বলে বোঝাতে পারব না। তাই পারলাম না যখন, ভেতরে ভেতরে চুরমার হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, কী হবে আর খেলে? আমার দ্বারা হবে না অলিম্পিক পদক জয়। তাই খেলা চালিয়ে গিয়ে আর কোনও লাভ নেই।

[আরও পড়ুন: ‘একেবারেই ভাল লাগে না’, বিরাটের সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন স্মৃতি মন্ধানা]

প্রশ্ন: ২০১৬ রিও অলিম্পিক (Rio Olympics) আপনার থেকে সব কেড়েকুড়ে নিয়েছিল। আর টোকিও অলিম্পিক আপনাকে সব প্রাপ‌্য সম্মান ফেরত দিয়ে গেল। ভাবলে অবাক লাগে না?
মীরাবাই: রিওর পর যে দুঃসহ সময়ের মধ‌্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলে আজও শিউরে উঠি। তবে সেই সময় আমি আমার পরিবারকে প্রবল ভাবে পাশে পেয়েছিলাম। আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, প্লেয়ারের জীবনে এরকম উতরাই আসবে। সেটার সঙ্গে সহজাতও হতে হবে। চেষ্টা করতে হবে, সেই ব‌্যর্থতাকে ভিত করে সাফল‌্যের ইমরাত গড়তে। পরে মনে হল, ঠিকই তো বলছে মা। আমার বয়স কম, আমার হাতে সময় আছে, এত সহজে হাল ছাড়ব কেন আমি?
প্রশ্ন: তাই?
মীরাবাই: হ‌্যাঁ। আরও একজনের কথা এখানে বলব। আমার কোচ বিজয় শর্মা। উনিও আমাকে বুঝিয়েছিলেন যে, অলিম্পিক পদক জিততে গেলে মাঝে মাঝে এরকম ব‌্যর্থতার আগুনে পোড়াটাও দরকার। সেটাকে কাঠিন‌্য আরও বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে মানসিক ভাবে রিল‌্যাক্সড থাকারও চেষ্টা করতাম আমি। আমি নিয়মিত সাইকোলজিস্টের কাছে যেতাম। মানসিক ভাবে ঝরঝরে রাখার পাঠ নিতাম নিয়মিত।
প্রশ্ন: কিন্তু সেই সময় মাঝে মাঝে ক্লান্ত লাগত না? একদিকে চরম ব‌্যর্থতা। আর একদিকে লাগাতার চোট। কম ভোগান্তি তো হয়নি আপনার।
মীরাবাই: আমার উপায় কী ছিল বলুন? আমাকে তো জবাব দিতে হত। আমাকে তো সফল হয়ে দেখাতে হত। নিজের জন‌্য। পরিবারের জন‌্য। সেই সমস্ত মুখগুলোর জন‌্য, যারা বলেছিল মীরাবাই চানুর দ্বারা কিছু হবে না।

Advertising
Advertising

প্রশ্ন: কী রকম? বলুন না একটু।
মীরাবাই: দেখুন, আমি গ্রামের মেয়ে। আমার পক্ষে সহজ ছিল না এত ঝড়-ঝাপটা সামলে এত দূর আসা। তার পর প্রতিনিয়ত খোঁটা সহ‌্য করতে হয়েছে। অনেকে বলেছে, কী হবে ট্রেনিং করে? দু’দিনের শখ ছাড়া আর কিছু নয়। আমি শুনতাম, আর ভেতরে ভেতরে প্রবল রাগ হত। মিথ‌্যে বলব না, একটা জেদও কাজ করত ভেতরে ভেতরে। মনে হত, কেন পারব না আমি? কেন আমি সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারব না মীরাবাই চানু কী পারে? প্রবেলম অনেক ছিল আমার। খাওয়াদাওয়া নিয়েও ছিল। কিন্তু ক্রমাগত মনে হত, দেশের জন‌্য, পরিবারের জন‌্য, সমালোচকদের জন‌্য আমাকে সফল হতে হবে। আর দিনের শেষে তো পেরেছি আমি, তাই না?
প্রশ্ন: শুধু পারেননি, একই সঙ্গে আপনি এখন দেশের মহিলাদের অনুপ্রেরণাও। মীরা, আপনার এক-একটা ‘লিফটে’র সঙ্গে ভারতবর্ষের মহিলাদের প্রত‌্যাশাও জুড়ে থাকে, জন্ম নেয় তাঁদের স্বপ্ন। এরও তো একটা স্বতন্ত্র চাপ আছে। সামলান কী ভাবে আপনি?
মীরাবাই: আমি ওটাকে চাপ হিসেবে দেখি না। বরং ওই আকাশচুম্বী প্রত‌্যাশা আমাকে শক্তি জোগায়। আরে, ওঁরা আমার মধ‌্যে কিছু দেখেন বলেই না প্রত‌্যাশা করেন। আমার মনে হয়, আমি আমার দেশের জন‌্য কিছু করছি, দেশবাসীর জন‌্য করছি। আর মনে হয়, গোটা দেশ আমার পিছনে রয়েছে, প্রার্থনা করছে। আমার তো মনে হয়, দেশের মহিলাদের হয়েও ভারোত্তোলন করি আমি।

[আরও পড়ুন: কলকাতায় যাওয়ার পথে অনুব্রতকে নিরাপত্তা দেবে পুলিশই, নির্দেশ আসানসোল সিবিআই আদালতের]

This browser does not support the video element.

Advertisement
Next