সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ৭৬টি ফুটবল দল। প্রায় ১২০০ খেলোয়াড়। আট দিন ধরে পাঁচটি মাঠে ছেলে ও মেয়েদের খেলা। প্ৰতিযোগিতা স্থল অযোধ্যা পাহাড়। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের আয়োজনে অযোধ্যা কাপ। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়ের মাঠে অযোধ্যা কাপ কি বাংলা ফুটবলের সাপ্লাই লাইন হবে? যেমনটা সৈকত কাপ, জঙ্গলমহল কাপ ও সুন্দরবন কাপ হয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়ের মতো জায়গায় ফুটবলের এই বিপুল আয়োজনে এই পাহাড়ের মাটিতে তরুণ-তরুণীদের খেলা দেখে শনিবার এমন কথাই বললেন দুই জাতীয় ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য ও দীপেন্দু বিশ্বাস। তাঁদের কথায়, “বেশ কিছু ফুটবলারকে দেখলাম যাদের বল কন্ট্রোল, পাসিং, বল রিলিজ, সব কিছু আলাদা ভাবে চোখে পড়ার মতো। এরা যদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পায় কলকাতার মত বড় জায়গায় খেলতেই পারবে।”
গত ১২ আগস্ট থেকে এই অযোধ্যা কাপ শুরু হয়। রাজ্য পুলিশের (West Bengal Police) উদ্যোগে জঙ্গলমহল কাপ হলেও এই পাহাড়ের ৯৮টি গ্রামকে নিয়ে অযোধ্যায় ফুটবলের এমন আয়োজন এই প্রথম। এই পাহাড়ের ফুটবল প্রতিভা খুঁজতেই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই অযোধ্যা কাপ (Ayodhya Cup)। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটা কাপ বা প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে প্রতিভা খোঁজা যায় ঠিকই। সেই প্রতিভার আরও বিকাশের জন্য একটা ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। একটা প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। অযোধ্যা কাপের মধ্যে দিয়ে এই পাহাড়ে আমরা একটা আলোড়ন তৈরি করলাম। ফুটবলে একটা নাড়া দিলাম। খুব শীঘ্রই পাহাড়ে ফুটবলের ক্যাম্প হবে। জাতীয় স্তরের ফুটবলারদের নিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেব। এই পাহাড়ের ছেলে-মেয়েরা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেভাবে যুদ্ধ করে তাতে সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। তাঁদের মধ্যে যে কাঠিন্য আছে, ফুটবল প্রতিভা রয়েছে। তাতে কোচিং ক্যাম্পের মাধ্যমে বাংলা ফুটবলের অন্যতম সাপ্লাই লাইন হতেই পারে।”
[আরও পড়ুন: যাদবপুরের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, টানা ৩ বছর ধরে ব়্যাগিংয়ের শিকার পড়ুয়া!]
অযোধ্যার রাঙা ফুটবল মাঠে শনিবার ফাইনাল খেলা হয়। মেয়েদের বিভাগে রাঙা মহিলা ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ন হয়। ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় অযোধ্যা হিল টাইগার ফুটবল টিম। ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন,”৭৬টি দল, ১২০০-র বেশি খেলোয়াড়কে নিয়ে একটা প্ৰতিযোগিতা চাট্টিখানি কথা নয়। কলকাতাতেও সেভাবে সম্ভব হয়নি। এই পাহাড়ের ছেলে-মেয়েদের ফুটবলের জন্য আমরা আছি। এই ফুটবলের আয়োজন থেকে আমরা সেটাই বলতে চাই।” কীভাবে অযোধ্যা পাহাড়ের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই উদ্যোগে ওই দুই জাতীয় ফুটবলার একটি সুসংহত পরিকল্পনা করছেন। ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য বলেন, “মহিলা ফুটবলারদের মধ্যেও বেশ কিছু ভালো ফুটবল প্রতিভা রয়েছে। ওদের রাস্তাটা একটু দেখিয়ে দিতে হবে। একটু ভালো প্রশিক্ষণ। তাহলে কিন্তু ওরাও বড় জায়গায় খেলতে পারবে। অযোধ্যার ফুটবলকে আরও ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে জেলা পুলিশের উদ্যোগের পাশে আমরা আছি।” প্রাক্তন ফুটবলার ও জেলা পুলিশের আধিকারিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো এবং সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুরের মধ্যেই ফাইনাল ম্যাচে রাঙা ফুটবল ময়দান ছিলো একেবারে রঙিন। নানান রঙের পতাকা, পুলিশের কুচকাওয়াজ। আকর্ষণ ছিল রণ-পা, আদিবাসীদের নাচও। দর্শকরা এতটাই উৎসাহিত ছিলেন, যে বৃষ্টির তোয়াজ না করে ছাতা মাথায় খেলা দেখলেন বহু মানুষ। সেই সঙ্গে মানস ভট্টাচার্যের একেবারে বিশ্লেষণমূলক ধারাভাষ্য। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিল কলকাতা ফুটবল লিগে ধারাভাষ্য চলছে। রাঙা মহিলা ফুটবল দলের গোলাপি মুর্মু, ফুলমণি হেমব্রম ও অযোধ্যা হিল টাইগার ফুটবল টিমের সাগুন সোরেন বলেন, “এই প্রথম অযোধ্যা পাহাড়ে এতো বড় ফুটবলের আয়োজন হলো। মনে হচ্ছে এতদিন পর পাহাড়ে যেন একটা আলাদা ফুটবলের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘গুরুত্ব দেয়নি তৃণমূল’, অধীরের হাত ধরে কংগ্রেসে যোগ দিলেন ফিরহাদের জামাই]
রাজ্যের টুরগা পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্টকে ঘিরে একটা অশান্তির মেঘ তৈরি হয়েছে এই পাহাড়ে। ওই পরিস্থিতির বাধা টপকে এই পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়নের ধারাকে যাতে আরও দ্রুত এগিয়ে নেওয়া যায় সেই চেষ্টাই করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। যার অন্যতম মাধ্যম বাঙালির প্রিয় ফুটবল।
ছবি: অমিতলাল সিং দেও