তপন বকসি, মুম্বই: অজস্র পরস্পরবিরোধী তথ্য। বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যাহীন ঘটনা। আর অনেক গুলো জবাবহীন প্রশ্ন- যতই শ্রীদেবীর মৃত্যুরহস্যের সন্ধানে নেটিজেনদের শার্লক-ফেলুদা-টিনটিন করে তুলুক, শেষমেশ তাঁদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে দুবাই পুলিশ অথোরিটি। তাঁর মৃত্যু নিয়ে যতরকম অস্বাভাবিকতা ও চক্রান্তের তত্ত্ব সামনে এসেছিল, তার সবক’টি খারিজ করে সোমবার ফরেনসিক রিপোর্টে জানিয়েছে, ভারতীয় অভিনেত্রীর মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনাবশত। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে সংজ্ঞা হারিয়ে বাথটবের জলে ডুবে। আর এখানেই ধন্দে শ্রীদেবীর ভক্তরা। প্রিয় তারকার ইমেজের সঙ্গে অতিরিক্ত মদ্যপানের বিষয়টি একেবারেই যায় না যে। তবে কি সম্প্রতি কোনও হতাশায় ভুগছিলেন? স্বাস্থ্যসচেতন অভিনেত্রী খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে ছিলেন ভীষণভাবেই ডিসিপ্লিনড। এমন কী হয়েছিল যে তাঁকে আকণ্ঠ মদ্যাপান করতে হল? এতটাই যে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলতে হয়। প্রশ্ন উঠেছে দাম্পত্যের সমস্যা নিয়েও?
[চাঁদনি এসেও এল না তাঁর জীবনে…]
প্রশ্ন ১ : দাম্পত্য কলহ!
শ্রীদেবীর বিবাহিত জীবন কখনই সুখের হয়নি। দু’বারই তাঁর বিয়ে করা পুরুষরা আগে থেকেই বিবাহিত। সংসারী। তবে কি শ্রীদেবীকে নিয়ে বনির পরিবারে গত ২৫ বছর যে অশান্তির চোরাস্রোত বয়ে চলছিল, তা থেকেই গিয়েছিল তলায় তলায়? বনিকে বিয়ে করে শ্রীদেবী আলাদাই থেকেছেন জীবনের বেশিরভাগ সময়। অনিল কাপুর, অনিলের স্ত্রী সুনীতা, সঞ্জয় কাপুর শ্রীদেবীকে সাহায্যের চেষ্টা করে গিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের একটা বড় অংশ শ্রীদেবীকে কখনওই মেনে নিতে পারেননি। পরিবারের এই অংশের কাছে শ্রীদেবীও স্বাভাবিক হতে পারেননি সেভাবে। পরে তাঁদের সম্পর্কে সেই অস্বচ্ছন্দের ছাপ পড়েছে। তবে কি সেটাই ধীরে ধীরে হতাশার অন্ধকারে ঠেলেছে শ্রীদেবীকে। তবে কি দাম্পত্য কলহ চলছিল? তা নাহলে শ্রীদেবীকে একা দুবাইয়ে ফেলে আসার আর কী কারণে থাকতে পারে?
প্রশ্ন ২ : ডেটনাইট
২২ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে মেয়ে খুশিকে নিয়ে মুম্বই ফিরে আসেন বনি কাপুর। শ্রীদেবী দুবাইয়ে থেকে যান। আত্মীয়দের বলেন, বোন শ্রীলতার সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটাতে চান। অন্য একটি সূত্রে খবর দুবাইয়ে শ্রীদেবীর আঁকার এগজিবিশনও ছিল। সেজন্যই থেকে যান। প্রশ্ন উঠেছে এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে কেন স্ত্রী-র সঙ্গে না থেকে দেশে ফিরলেন বনি। আবার ২৪ তারিখ বিকেলে ফিরেই বা এলেন কেন? পুলিশকে তিনি জানান, মুম্বইয়ে নামার পরই তাঁর মনে হয়েছিল, শ্রীকে সারপ্রাইজ দিয়ে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরবেন। তাই হঠাৎ এসে হাজির হন জুমেইরা টাওয়ারে। ভক্তরা প্রশ্ন তুলেছেন এই হঠাৎ প্রেম পাওয়া নিয়েই। সত্যিই কি শ্রীকে সারপ্রাইজ দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল বনির?
প্রশ্ন ৩: মদ্যপান
শ্রীদেবীর পারিবারিক বন্ধু অমর সিংয়ের বক্তব্যেও শ্রীদেবীর মানসিক অস্থিরতা ধরা পড়েছে। অমর জানিয়েছেন, শ্রীদেবী মদ্যপান করতেন না। করলেও ওয়াইন খেতেন। যাতে অ্যালকহোল কম থাকে। তবে দুবাইয়ের হোটেলে যে তিনি ওয়াইন খাননি তার প্রমাণ তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট। তাতে বলা হয়েছে সংজ্ঞা হারিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে শ্রীদেবীর। যার কারণ ওয়াইন হতে পারে না।
প্রশ্ন ৪: বনির হাতের পুতুল
ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, শ্রীদেবীকে হাতের পুতুল মনে করতেন বনি। কামব্যাক পর্বে শরীর ফিট রাখতে, সার্জারিতে বাধ্য করতেন বনি। ‘মম’ ছবির আগেও তাঁর লিপ সার্জারি করিয়েছিলেন বনি কাপুর। এব্যাপারে শ্রীদেবীর ইচ্ছে অনিচ্ছার কথা জানতে চাইতেন না বনি। মনে করতেন তিনি যা করছেন তা শ্রী-র ভালোর জন্যই। তাহলে কি একজন অতি পেশাদার প্রযোজক প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ হতে পারেননি? গুড হাউস ওয়াইফ এর আড়ালে ব্যথা লুকিয়ে ছিল সুন্দরী সুপারস্টারের? শ্রীদেবীর ঘনিষ্ঠরাই জানান, দুজনকে ঝগড়া করতে দেখেননি কখনও। কিন্তু অনুমান দাম্পত্য কলহ না থাকলেও, সুখেরও হয়তো ছিল না।
[শ্রীদেবী মদ্যপান করতেন না, বিস্ফোরক দাবি অমর সিংয়ের]
প্রশ্ন ৫: তিন ঘণ্টার হিসেব
রিপোর্ট বলছে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শ্রীকে সারপ্রাইজ দেবেন বলে আসেন বনি। দুবাইয়ের যে হোটেলে শ্রী ছিলেন, তার ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বনির এন্ট্রি। এরপর দু’জনের কাউকেই ঘর থেকে বেরোতে বা ঢুকতে দেখা যায়নি। বনি কাপুরের কাছ থেকে জুমেইরা টাওয়ারের কর্মীরা ডাক পান সাড়ে সাতটা নাগাদ। এরপর ঠিক রাত ন’টায় খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। তারপর শ্রীদেবীকে নিয়ে যাওয়ায় রশিদ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে কেন এই দেরি?
প্রশ্ন ৬: বনির জবাবে অসঙ্গতি
দেরি প্রসঙ্গে বনি কাপুরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তিনি শ্রীদেবীর ঘরে যখন ঢোকেন তখন শ্রী ঘুমোচ্ছিলেন। বনি তাঁকে জাগান। তার পরের ১৫ মিনিট দু’জনে গল্প করেন। তারপর শ্রী-কে ডিনারে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি হয়েই শ্রী রেডি হওয়ার জন্য স্নান করতে যান। ১৫ মিনিট পরও স্নানঘর থেকে কোনও শব্দ না পেয়ে সন্দেহ হয় বনির। তিনি প্রথমে শ্রী-কে ডাকেন। তারপর বাথরুমের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। দুবাই পুলিশকে দেওয়া বনির বয়ান অনুযায়ী, শ্রীদেবী তখন অচৈতন্য অবস্থায় বাথরুমে পড়ে। বনি তাঁর সংজ্ঞা ফেরানোর চেষ্টা করেন। খবর দেন হোটেল কর্মীদের। তাঁরাই চিকিৎসক ও পুলিশকে খবর দেন। প্রশ্ন হল, তাহলে বাকি সময়টুকু কী করছিলেন বনি? তাঁর দেওয়া হিসাব মেলালে ঘরে ঢোকার ৪০ মিনিটের মধ্যেই তিনি দরজা ভেঙে শ্রীকে উদ্ধার করেন। সিসিটিভির রিপোর্ট অনুযায়ী সেসময় ৬.১০ বাজার কথা। তারপরও কর্মীদের খবর দিতে কেন প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নিলেন বনি কাপুর?
তসলিমার টুইটে নয়া বিতর্ক
এদিকে শ্রীদেবীর মৃত্যু নিয়ে সংশয়ী প্রশ্ন তুললেন বিতর্কিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। নতুন করে ছড়াল বিতর্কের আঁচ। টুইটে তসলিমা লেখেন, “একজন সুস্থ মহিলা কখনও এভাবে ‘দুর্ঘটনাবশত’ বাথটবে পড়ে যেতে পারেন? প্রাপ্তবয়স্করা কখনও ‘দুর্ঘটনাবশত’ বাথটবে পড়তে পারেন না। শ্রীদেবীর দেহ জলভর্তি বাথটবে পাওয়া গিয়েছে। আশা করি এটা হত্যা বা আত্মহত্যা নয়।” অন্যদিকে বিখ্যাত মার্কিন গায়িকা উইটনি হাউস্টনের অকালপ্রয়াণের সঙ্গে শ্রীদেবীর মৃত্যুর আশ্চর্যজনক মিল খুঁজে পাওয়ার কথা টুইটে জানিয়েছেন অভিনেত্রী সিমি গারেওয়াল।
[শ্রীদেবীর চলে যাওয়ার সঙ্গে অদ্ভুত মিল বনি কাপুরের প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুুর]
The post মৃত্যুর দু’দিন পরও ফিরল না দেহ, আরও জটিল হচ্ছে শ্রীদেবীর মৃত্যুরহস্য appeared first on Sangbad Pratidin.