সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সময়টা অস্থির, সন্দেহ নেই। সংশয়, দ্বন্দ্ব, দ্বিধার ছুরি এসে বারেবারে খণ্ডিত করছে আমাদের ভাবনার আকাশ। বিভ্রান্ত হচ্ছি আমরা। এই দ্বিধাণ্বিত সময়ের ভিতর নানা প্রলোভন ও প্ররোচনা যেমন থাকে, ঠিক তেমনই থাকে হাতে হাত রেখে, বন্ধুতার বৃত্ত তৈরি করে সেই চোরাবালি অতিক্রম করার প্ররোচনাও। ‘সৃষ্টিসুখ সাহিত্য উৎসব ২০১৯’-এর অন্তর্লীন সুর যেন সেটাই।
বইপাড়ায় তিন দিনের সাহিত্য উৎসব। একটু ব্যতিক্রমীই বলা যায়। সময়ে এবনহ স্থানে। সাধারণত লিট ফেস্ট বলতে যে ছবি আমাদের চোখের সাম অনে ভেসে ওঠে, তার থেকে একটু আলাদা করেই সাজানো এই উৎসবের ঝুলি। সৃষ্টিসুখের কর্ণধার রোহণ কুদ্দুস মনে করেন, বাংলা বই নিয়ে যদি উৎসব হয় তবে তা বাংলা প্রকাশনার পীঠস্থান বইপাড়াতেই হওয়া উচিত। আর যেহেতু বইপড়ার কোনও সময় হয় না, তাই বই-উৎসবেরও কোনও শীতকাল, গরমকাল থাকতে নেই। নতুন বই হাতে পাওয়া মানেই তা একটি উৎসব। কর্ণধারের কথার সঙ্গতি মেলে তাদের উৎসবের সূচিতেও। গত ১৪ জুন থেকে শুরু হয়েছে উৎসব।
[আরও পড়ুন: অশান্ত হচ্ছে বাংলা, সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রতিবাদে সভা নাট্যব্যক্তিত্বদের]
উদ্বোধন করেন দে’জ প্রকাশনার কর্ণধার শ্রী সুধাংশুশেখর দে। তিনি স্পষ্টতই জানান, বাংলা বইয়ের বৃহত্তর বিপণন ও নতুন লেখকদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার ভার সৃষ্টিসুখ-এর মতো নতুন প্রকাশনা যেমন নিয়েছে, তেমনই সাহিত্যের এই উৎসব লেখক-পাঠক-প্রকাশক সম্পর্কেরও নতুন জানালা খুলে দিচ্ছে। এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ও সভাবনা নিয়ে ১৫ জুন এক মনোজ্ঞ আলোচনায় অংশ নেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক অমর মিত্র, তরুণ প্রকাশক শুভঙ্কর দে, শিল্পী পার্থপ্রতিম দাস এবং পাঠকের হয়ে মতামত জানান ছাত্র-গবেষক বেদাংশু মিশ্র। শুভঙ্কর দে ছোট ছোট ঘটনায় জানিয়ে দিচ্ছিলেন, লেখক-প্রকাশক সম্পর্ক ঠিক কেমন ছিল আর কেমন থাকা উচিত। অমর মিত্র জানালেন, কীভাবে নিজের লেখাটি লিখে যাওয়ার ক্ষেত্রে আশ্রয়স্থল হয়ে একজন লেখককে লালন করতে পারে একজন প্রকাশক। আলোচনায় তাঁরা একমত হন যে, মার্কেটিংয়ের নতুন মাধ্যম এলেও ভাল লেখা তথা ভাল বই-ই একমাত্র এই সম্পর্ককে পুষ্টি জোগাতে পারে।
এদিনই সৃষ্টিসুখ সাহিত্য সম্মান অর্পণ করা হয় কবি যশোধরা রায়চৌধুরীকে। তিনি জানান, ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ এবং লেখালিখির যে বৃহত্তর পরিসর তৈরি হয়েছে তাকেই একটা পরিবারের আদল দিতে পেরেছে সৃষ্টিসুখ। প্রায় একই সুর ছিল দ্বিতীয়দিনের উদ্বোধক পত্রভারতী প্রকাশনার কর্ণধার-সাহিত্যিক শ্রী ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও। তিনি জানান, ডিজিট্যাল মাধ্যমে লেখালিখি আজ আর কোনওভাবেই উপেক্ষার নয়। তাকে নস্যাৎও করা যায় না। বরং সেখানেও বহু রসোত্তীর্ণ লেখার সন্ধান মিলছে, যা প্রকাশক ও পাঠক উভয়কেই তৃপ্ত করছে। উৎসবে ছিল, ‘নারীর বিশ্ব’ শীর্ষক একটি আলোচনা। যেখানে অংশ নেন বেবী সাউ,
সরিতা আহমেদ, ঈশা দেব পাল ও ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়। মহিলাদের কলমই যে তাঁদের সপাটে বলার সাহস জোগাবে, এমত সুরেই শেষ হয় আলোচনা। গৌরী ধর্মপালের ‘নির্বাচিত কবিতা’, কৌশিক মজুমদারের ‘কুড়িয়ে বাড়িয়ে’, ঋজুরেখ চক্রবর্তীর ‘কবিতাসমগ্র ১’-সহ এই উৎসবে প্রকাশিত হয় প্রায় ২০টি বই। অভিনবত্বে উজ্জ্বল এই উৎসবে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হল বইয়ের প্রচ্ছদকে, তা নিয়ে হল প্রায় ৫০টি ছবির একটি প্রদর্শনী। এছাড়া ছিল সাহিত্য কুইজও।
[আরও পড়ুন: জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করে নেটদুনিয়ায় সমালোচিত কবি শঙ্খ ঘোষ]
তিনদিনের এই সাহিত্য উৎসবের শেষদিন রবিবার। বহুজন সমাবেশে, নতুন বইয়ের গন্ধে আর বন্ধুদের হই-চইয়ে যেন মিনি বইমেলা হয়ে উঠল সৃষ্টিসুখের প্রথম সাহিত্য উৎসব। সঙ্গে ছিল ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’।
The post অস্থির সময়ে বন্ধুতার উৎসব, কলেজ স্ট্রিটে ‘মিনি বইমেলা’ appeared first on Sangbad Pratidin.