অর্ণব আইচ: কার কাছে আসত সুবীরেশ ভট্টাচার্যর মেল? তাঁর অফিসে বসেই যে শ’য়ে শ’য়ে চাকরিপ্রার্থীর ওএমআর শিট পালটে যাচ্ছে, সেই সম্পর্কে কতটুকু জানতেন ‘নাইসা’র কর্ণধার পুণীত কুমার? রহস্য উন্মোচনে এবার ওএমআর শিট (OMR Sheet) প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘নাইসা’র কর্ণধার পুণীত কুমারকে তলব করল সিবিআই।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন নাইসার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট নীলাদ্রি দাস। এবার এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতিতে ওএমআর জালিয়াতির ব্যাপারে আরও তথ্য পেতে নাইসার সর্বময় কর্তা ও কর্ণধার পুণীত কুমারকে নিজাম প্যালেসের দপ্তরে জেরা করবেন সিবিআই আধিকারিকরা। চলতি সপ্তাহেই তাঁকে সিবিআই জেরা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাঁকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। পুণীত কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিটও পেশ করেছে। সিবিআই সূত্রের খবর, নোটিস পাঠানো হয়েছে নাইসার আরও কয়েকজন কর্মীকেও। ইতিমধ্যেই নাইসার এক কর্মী পঙ্কজ বনশাল আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ববিতা সরকারের চাকরি বাতিল, টাকা ফেরতের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের]
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, দিল্লির সংস্থা নাইসার প্রাক্তন কর্তা নীলাদ্রি দাসের (Niladri Das) সঙ্গে যোগাযোগ হয় এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যর (Subiresh Bhattacharya)। সেই সূত্রেই এসএসসি (SSC) পরীক্ষার পর ওএমআর শিট মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় নাইসাকে। তদন্তে সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই ওএমআর শিটগুলি রেখে দেওয়া হয় এসএসসির দপ্তরে। সেগুলির ছবি তুলে তার স্ক্যান করা ‘সফট কপি’ নীলাদ্রির সংস্থা মূল্যায়নের জন্য নিয়ে যায় নিজেদের অফিসে। সিবিআইয়ের কাছে নীলাদ্রি দাবি করেছেন, এসএসসির নির্দেশ অনুযায়ী, তাঁরা ওএমআর শিট মূল্যায়নের কাজ শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন এসএসসির কর্তা সুবীরেশ ভট্টাচার্য নিজেই তাঁকে মেল করে জানান, ওএমআর শিটের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভুল রয়েছে। নম্বর পালটানোর, প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কিছু পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিটে নম্বর বাড়ানোর নির্দেশ দেন সুবীরেশ। নীলাদ্রির দাবি, তিনি সুবীরেশের নির্দেশ পেয়ে ওই বিশেষ পরীক্ষার্থীদের নম্বর বাড়াতে থাকেন। জেরার সময় নীলাদ্রি দাবি করেছিলেন, একের পর এক এই ধরনের মেল আসার পর নীলাদ্রি তাঁর কর্মচারীদের ওএমআর শিটের নম্বর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এত ভুল বের হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন করেন। তখন তাঁর কর্মচারীরা কম্পিউটার দেখে মূল্যায়নের পর প্রার্থীদের নম্বর ও ওএমআর শিটও দেখান। তাতে নীলাদ্রিরই গরমিল লাগে। সেই ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের দাবি, এত গরমিল দেখতে পেলে তখন নীলাদ্রি কেন প্রতিবাদ করেননি? বিনা প্রতিবাদেই সুবীরেশের কথামতো নম্বর পালটিয়ে ট্যাবুলেশন শিট প্রকাশ করেন কেন? গোয়েন্দাদের দাবি, নীলাদ্রি প্রত্যেক প্রার্থীর নম্বর বাড়ানো পিছু মোটা টাকার কমিশন নিতেন। পরে যখন নীলাদ্রি ‘নাইসা’র চাকরি ছেড়ে দেন, তখন তিনি একটি পেন ড্রাইভে আসল ওএমআর শিটের সফট কপি নিয়ে নেন।
[আরও পড়ুন: ‘একবছর পর চাকরি কেড়ে নেওয়া কাম্য নয়’, আদালতের রায়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ববিতা]
পরে তদন্তের সময় সিবিআই ওই পেন ড্রাইভ খুলে আসল ওএমআর শিটের নম্বরের সঙ্গে বিকৃতি হওয়া ওএমআর শিটের নম্বর মেলায়। কিন্তু যাঁর অফিসে বসে এত কাণ্ড হয়েছে, সেই পুণীত কুমার মেলগুলি সম্পর্কে কী জানতেন, সেই ব্যাপারে তাঁকে জেরা করা হবে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, তিনি ২০১৯ সালে ওএমআর শিট নষ্ট করে ফেলেন। পুণীত এর আগে দাবি করেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তিনি তা করেন। কিন্তু সিবিআইয়ের অভিযোগ, এসএসসি দুর্নীতির প্রমাণ লোপাটের জন্যই শিট নষ্ট করা হয়। এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেতেই পুণীতকে জেরা করা হবে। এদিকে, নীলাদ্রি দাসের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্তর দাবি, নীলাদ্রি সিবিআইকে সহযোগিতা করার কারণে সাক্ষী হয়েছিলেন। পরে সাক্ষীর জায়গা থেকে নাম কেটে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। এর বিরোধিতা করে আইনজীবী আলিপুরে (Alipur) সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আবেদন করেন। এই ব্যাপারে বুধবার আদালতে শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে।