অর্ণব আইচ: আবারও খারিজ জামিনের আবেদন। আরও ১৪ দিন জেল হেফাজতেই থাকতে হবে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে, নির্দেশ আলিপুর আদালতে। আগামী ১২ ডিসেম্বর ফের তাঁকে পেশ করা হবে আদালতে।
চোদ্দদিনের জেল হেফাজত শেষে সোমবার ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত মোট সাতজনকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। এবার প্রথম থেকেই জামিনের আবেদনে সরব হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী। তিনি বলেন, “আমার মক্কেলের নাম এফআইআরে নেই। উনি অভিযুক্তও নন। যে ৫ জনের নাম রয়েছে তার মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি ২জন এখনও অধরা। তারপর পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাজিরা দিতে হলে হোক, তবু জামিন দিন। সিবিআই বলছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় মূলচক্রী। উনি প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে সরিয়ে অন্য কাউকে বলা ক্যাট, স্যাট অনেক কিছু আছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুধুমাত্র পদে এসপি সিনহাকে বসিয়েছেন।”
আইনজীবী আরও বলেন, “আমরা এখন তদন্তের কোন স্তরে রয়েছি? রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। সিবিআই বারবার জামিনের বিরোধিতা করবে সেটা কীভাবে হয়? কেউ দুর্নীতিতে জড়ালে তার দায় আমার মক্কেলের না। এসএসসি নিয়োগের কোথাও এমন প্রমাণ পাওয়া যাবে না যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বেআইনি কিছু করেছেন। এসএসসি আইনের ৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন হয়েছে শুধুমাত্র। ওঁর বয়স এবং শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী পালানোর সম্ভাবনা নেই। চার্জশিটে নাম থাকা সত্ত্বেও যারা গ্রেপ্তার হয়নি তাদের এক এক করে শুনানির প্রক্রিয়া শুরু করতে বহু বছর দেরি হয়ে যাবে। সিবিআই প্রিমিয়াম এজেন্সি মানেই যে তদন্ত ঠিক করছে তার কোনও মানে নেই। অন্য মামলার চার্জশিটে আমার মক্কেলের নাম নেই। সব কিছু ভেবে জামিন দেওয়া হোক।”
এসপি সিনহার আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্তের গলাতেও প্রায় একই সুর। তিনি বলেন, “সিবিআই ইতিমধ্যে যে চার্জশিট পেশ করেছে, সেটা তদন্ত শেষ করেই পেশ করেছে, তাহলে আবার তদন্ত চলছে দাবি করে হেফাজতে রাখা কেন? এটা তো একটা অন্যটার উলটো কথা। এভাবে কতদিন? মহামান্য আদালত ওঁর বয়স আর যতদিন ওনাকে হেফাজতে রাখা হয়েছে সেটা বিবেচনা করুক। ওঁর ৭০ বছর বয়স। এভাবে রাখলে ক’দিন আর বাঁচবেন উনি?”
[আরও পড়ুন: ‘গোটা মন্ত্রিসভার জেল চাই’, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিধানসভায় হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর]
শারীরিক অসুস্থতার তত্ত্বকে হাতিয়ার করে জামিনের আরজি জানান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ও। তাঁর যুক্তি, “তল্লাশি করে বাড়িতে প্রায় কিছুই পায়নি। তবু কম্পিউটার, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছে। নোটিস দিকে ডেকে যাওয়ার পর সিবিআই অন্য ধারায় গ্রেপ্তার করে। ৪৬৭ বা প্রতারণার বিশেষ ধারা যোগ করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হল। আদালত এখনও চার্জশিট গ্রাহ্য করেনি। তাই এটা কি চার্জশিট বলা যায়? আমার স্ক্যান করা সই ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। এসএসসি কি করছে আমার পক্ষে জানা বা চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব নয়। আমি যে পদে ছিলাম সেখানে প্রতি বছর ১২ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেন। আমি তার দায় নিতে পারব না। ৩৫০ জন অযোগ্য প্রার্থীকে জেরা করতে চার বছর লাগলে আমি ভিতরে থাকব কেন? আমার বয়স আর শারীরিক অবস্থা দেখে বিবেচনা করুন।”
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অশোক সাহা, প্রসন্ন রায় এবং প্রদীপ সিংয়ের আইনজীবীও জামিনের আরজি জানান। অশোক সাহার আইনজীবী বলেন, “তিনি এসএসসি চেয়ারম্যান ছিলেন না। তলবের পর উনি যা জানেন বলেছেন। ১১০ দিন ধরে জেলে রয়েছে। জামিন পাওয়া তাঁর অধিকার।” প্রসন্ন রায় এবং প্রদীপ সিংয়ের আইনজীবীরা সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “চার্জশিট গ্রহণ না হওয়ার ফলে শুনানিতে দেরি হবে। কলকাতা হাই কোর্ট ঘটনার তদন্ত করতে বলেছে। কারও মৌলিক অধিকার খর্ব করতে বলেনি।”
সুবীরেশ ভট্টাচার্যের আইনজীবীও জামিনের আবেদনে জোরাল সওয়াল করেন। তিনি বলেন, “সুবীরেশ ভট্টাচার্যের ভার্টিগো রয়েছে। সিবিআই তদন্তের কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। অযথা হেফাজতে রাখা হয়েছে। সিবিআই তদন্ত যা করার করে নিয়েছে। বলা হচ্ছে চক্রান্ত হয়েছে। ভুয়ো নিয়োগপত্র তৈরি করা হয়েছে। আমি একা তাতে সই করিনি। আমি কিছু জানতাম না।”
তবে সওয়াল জবাবের শুরু থেকে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআই। আইনজীবী বলেন, “আমরা বারবার হেফাজতে চাইছি। তার কারণ কেউ তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। প্রত্যেকে নথিপত্র নষ্ট করেছে। অপরাধ যথেষ্ট গুরুতর। তদন্তের অগ্রগতি এভাবে আদালতে ভরা এজলাসে বলা যাবে না। গত ১৪ দিনে তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। তদন্তে আরও অনেকের নাম উঠে এসছে। আরও বেশ কয়েকজন মিডলম্যানের নাম পেয়েছি। তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য অভিযুক্তদের হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।”