স্টাফ রিপোর্টার: প্রস্রাব করতে গেলে প্যান্টের পিছনের দিক ভিজে যাচ্ছে। পুরুষাঙ্গ দিয়ে তো বটেই। পায়ু দিয়েও যে বেরোচ্ছে প্রস্রাব। রীতিমতো মোটা ভাবে! বিপদ এখানেই শেষ নয়। সদ্যোজাতর শরীরের পশ্চাদদেশে মল বেরনোর জায়গা ছিল না। চিকিৎসাশাস্ত্রে এমন ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। হাওড়ার এই বিশেষ শিশুকে সুস্থ করে সারা দেশের নজর এখন এসএসকেএম হাসপাতালের (SSKM Hospital) দিকে।
হাওড়ার বাসিন্দা বছর চারেকের প্রীতম নাথকে নিয়ে যখন তার মা-বাবা এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিলেন তখন তার বয়স দু’দিন। দেরি করেননি চিকিৎসকরা। ‘মিক্সচুরেটিং সিস্টো ইউরেথ্রোগ্রাম’ আর ‘সিস্টোস্কোপি’ করে দেখা যায় , এই শিশুর অঙ্গে একটা নয় দু দুটো মুত্রনালী। একটা সামনে। একটা পায়ুতে। শরীরের দু’জায়গা দিয়ে প্রস্রাব বেরোচ্ছে।
ধাপে ধাপে তিনবার বিভিন্ন ধাপে অস্ত্রোপচার হয়েছে প্রীতমের। শেষেরটা এই মাস তিনেক আগে। এখন তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই মুত্র নিঃসরণ হচ্ছে। পায়খানা বেরনোর জায়গা না থাকায় কিছু খেতে পারছিল না শিশুটি। তৈরি করে দেওয়া হয়েছে পায়খানা বেরনোর রাস্তাও। এসএসকেএম হাসপাতালের নিউনেটাল সার্জারি বিভাগে শিশুটির কোলোস্টমি করা হয়।
[আরও পড়ুন: নকশা অনুমোদন থেকে ফ্ল্যাট বিক্রি পর্যন্ত সম্পত্তিকর মেটাতে হবে প্রমোটরকেই, নির্দেশ KMC’র]
এসএসকেএম হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেশর ডা. সুজয় পালের কথায়, “চিকিৎসা পরিভাষায় এটা অ্যানো রেক্টাল ম্যালফরমেশন। তার সঙ্গে দু দুটো ইউরেথ্রা। একই সঙ্গে কারও শরীরে এমন দুটো ঘটনা অত্যন্ত বিরল। সারা পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত দুশো জনেরও কম শরীরে এমন ত্রুটি একসঙ্গে দেখা গিয়েছে।”
শিশুটিকে নতুন জীবন দিতে ‘টিম’ সাজিয়েছিল এসএসকেএম। সে টিমের নেতৃত্বে শিশু শল্য চিকিৎসক বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেশর ডা. সুজয় পাল এবং ইউরোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেশর ডা. কৃষ্ণেন্দু মাইতি। অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. মোহন চন্দ্র মণ্ডল। শিশুর অস্ত্রোপচার টিমে সাহায্য করেছেন ডা. রিসভদেব পাত্র, ডা. অনীক রায়চৌধুরী, ডা. অরিন্দম ঘোষ, ডা. দেবজ্যোতি শাসমল, ডা. দেবযানী দাস, ডা. সাবির আহমেদ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আরও কিছুমাস পর্যবেক্ষণে রেখে চলবে ইউরেথ্রাল ডাইলেটেশন। কি সেই পদ্ধতি? ডা. সুজয় পালের কথায়, পায়ুদ্বারের বড় মুত্রনালিটা বন্ধ কর দেওয়া হয়েছে। সামনের দিকের সরু মুত্রনালিটা ধীরে ধীরে বড় করা হচ্ছে।