স্টাফ রিপোর্টার: মগজের মধ্যেই অ্যামিবা! গল্প নয়, বাস্তবে এমনটাই হয়েছে হাওড়ার বাসিন্দা বছর চল্লিশের এক যুবকের। প্রায় ১ মাস ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি তিনি। শেষপর্যন্ত বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে অস্ত্রোপচারের পর আপাতত ভর্তি আছেন মেডিসিন বিভাগে। রয়েছেন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে।
মগজের মধ্যে অ্যামিবা বাসা বাঁধছে, এমনটা সচরাসচর দেখা যায় না। চিকিৎসকদের অভিমত, এককোশী এই প্রাণী মানুষের নাক অথবা কান দিয়ে ঢুকে সোজা মগজে বাসা বাঁধে। কুড়ে কুডে খেতে থাকে ঘিলু ও মস্তিষ্কের যাবতীয় শিরা-উপশিরা-রক্ত। উপসর্গ দেখা দেয় ২-১৫ দিনের মধ্যে, কারণ ততদিনে পরজীবী মস্তিষ্কের ভিতরের অংশ খেতে শুরু করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি জ্ঞান হারায়। কারা আক্রান্ত হয়? কীভাবেই বা শরীরে ঢোকে অ্যামিবা?
[আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি চিনা জওয়ানদের! ভাইরাল ভিডিও]
যারা অনেক দিন ধরে সুইমিং পুলে, নদী বা পুকুরে সাঁতার কাটেন, তাঁদের দেহে এই এককোশী জীব বাসা বাঁধতে পারে। যে পুকুরে অনেকদিন ধরে ক্লোরিন দেওয়া হয় না সেখান থেকে দেহে ঢুকতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটনা হল বছর চল্লিশের তরুণ কিন্তু সুইমিং পুল বা পুকুরে স্নান করতেন না। তার পরেও মেনিনজাইটিসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসেন।
রোগের নাম ‘প্রাইমারি অ্যামিওবিক মেনিংগো এনকেফালাইটিস (পিএমআর)। শতকরা ৯০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যুই ভবিতব্য। হাওড়ার বাগনানের বাসিন্দা এই মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে সম্প্রতি সুস্থ করে তুলে সাফল্যের দৃষ্টান্ত তৈরি করল রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএম। মেডিসিনের অধ্যাপক ডা.অলকেশ পাত্রের কথায়, ‘‘ন্যাগলেরিয়া ফাওলেরি (naegleria fowleri) নামে অ্যামিবা মানবমস্তিষ্ককে খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংজ্ঞা লোপ হয়। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে সিটি স্ক্যানে অ্যামিবাকে চিহ্নিত করে অপারেশনের মাধ্যমে বার করে ফেলা হয়। অন্যথায় মৃত্যু অনিবার্য।’’
[আরও পড়ুন: রামমন্দির উদ্বোধন নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া, কী বলল পাকিস্তান?]
মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করা হয়। ধরা পড়ে টুকরো টুকরো রক্ত এবং অ্যামিবার একটি অস্পষ্ট অবয়ব। নিউরো সার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অতনু দত্তের তদারকিতে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। সোমবার তাঁকে মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আপাতত কিছুদিন তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। আপাতত স্থিতিশীল হলেও বিপদ পুরো কাটেনি। চিকিৎসকদের বক্তব্য, গত ছ’মাসে এই নিয়ে দু’জন এমন উপর্সগ নিয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি হলেন। দু’জনই সুস্থ। অলোকেশবাবুর কথায়,”এই ব্যক্তি নিয়মিত সুইমিং ক্লাব বা পুকুরে সাঁতার কাটেননি। তা সত্ত্বেও কীভাবে আক্রান্ত হলেন, বোঝা যাচ্ছে না। সিটি স্ক্যানে দেখা গিয়েছে, ওঁর কানের ভিতরে ফুটো ছিল। মগজে পুঁজ জমে ছিল। সেসবের চিকিৎসা হয়েছে। প্রয়োজনে ফের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে।”