দিগন্ত ছোঁয়ার লক্ষ্যে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী চার বছরের স্নাতক কোর্স শুরু হচ্ছে এখানে। লক্ষ্য আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষাদান। কীভাবে সেজে উঠছে নয়া পাঠক্রম, জানালেন সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোমক সেন।
সোমক সেন: ‘ভিশন ২০২০’ অতিক্রম করে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় (St. Xaviours University) এবার স্বপ্ন দেখছে ‘ভিশন ২০৩০’-এর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার। প্রথম উপাচার্য রেভারেন্ড ড. জন ফেলিক্স রাজ এই উদ্যোগের প্রাণপুরুষ। এ বছর থেকে কলকাতার (Kolkata) সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের স্নাতক কোর্স শুরু হতে চলেছে। এই নতুন কোর্স ‘ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি (NEP 2020)’ অনুযায়ী সাজানো এবং আন্তর্জাতিক স্তরে যেমন শিক্ষাব্যবস্থা জারি রয়েছে, এই প্রকল্প সেই ধারার অনুসারী। চার বছরের স্নাতক কোর্স শেষ হওয়ার পর পড়ুয়ারা অবিলম্বে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতকোত্তরের (Masters Course) জন্য ভরতি হতে পারবে।
চার এই বছরের পাঠ্যক্রমে মেজর ও মাইনর বিভিন্ন ধরনের কোর্স তো রয়েছেই, এর সঙ্গে রয়েছে মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি কোর্স, যোগ্যতা কিংবা দক্ষতা বাড়ানো জন্য এবিলিটি এনহ্যান্সমেন্ট কোর্স, স্কিল এনহ্যান্সমেন্ট কোর্স, কমন ভ্যালু অ্যাডেড কোর্স, সামার ইন্টার্নশিপ, রিসার্চ প্রোজেক্ট-সহ আরও অনেক কিছু।
সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় এই নতুন কোর্সের পাঠ্যক্রম (New Course) চালু করার কথা এক বছর আগেই ভেবেছিল। আমাদের বিশ্বাস, পড়ুয়ারা এই নতুন ব্যবস্থায় লাভবানই হবে। এবছর, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৬ বছর সম্পূর্ণ করল। ২০১৭-য় শুরুর পর থেকে, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় মোট ১৭টি কার্যক্রম চালাচ্ছে, যার মধ্যে ৮টি স্নাতক কোর্স এবং ৯টি স্নাতকোত্তর কোর্স। এছাড়াও, বিভিন্ন বিষয়ে ৮টি পিএইচডি কার্যক্রমও চলছে। মোট ১২৯ জন পিএইচডি স্কলার সংযুক্ত এই ৮টি কার্যক্রমে।
[আরও পড়ুন: Madan Mitra: ‘ওঁর জায়গায় আমি হলে…’, নুসরত বিতর্কে মুখ খুললেন মদন]
‘ভিশন ২০২০’ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্র পড়ুয়ার কাছে রীতিমতো বাস্তব একটি ঘটনা। বর্তমানে মোট ৪,০০০ জন শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ‘জেভিয়ার বিজনেস স্কুল’, যেখানে দু’-বছরের এমবিএ (MBA) কোর্স করা যায়। এছাড়াও আছে জেভিয়ার ল’ স্কুল, যেখানে আর্টস ও কমার্স বিভাগ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা দু’টি পাঁচ বছরের ইন্টিগ্রেটেড ল’ কোর্স করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জেসুইট এবং প্রথম উপাচার্য রেভারেন্ড ড. জন ফেলিক্স রাজ, এস. জে. এবার ‘পাখির চোখ’ করেছেন ‘ভিশন ২০৩০’-কে। ২০৩০-এর মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০ হাজার হবে, এমন আশা রেখেছেন তিনি। বিশ্বমানের পরিকাঠামো তো বটেই, এর সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা, পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত লেখকদের অগুনতি বই নিয়ে গড়ে তোলা সুসজ্জিত লাইব্রেরি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন এবং জার্নালের সম্ভার, ইনডোর ও আউটডোর গেমের পরিকাঠামো, জিমনাসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র – এসবেরই ব্যবস্থা করা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে, শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে। শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আর্থিক প্রয়োজনের কথা ভেবে ক্যাম্পাসের ভিতরেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্রাঞ্চের পাশাপাশি এটিএমের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একটি অ্যাকাডেমিক ব্লক গড়ে তোলার কাজ চলছে, যেখানে ২২০টি ক্লাসরুম থাকবে। আমরা একটি প্রেক্ষাগৃহ বা অডিটোরিয়াম তৈরির কথাও ভাবছি, যেখানে আড়াই হাজার দর্শকাসন থাকবে।
[আরও পড়ুন: কুনোর পশু চিকিৎসকরা অনভিজ্ঞ! চিতামৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি বিশেষজ্ঞদের]
জেসুইট শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্ববিদিত। ভারতজুড়ে জেসুইটরা ৭৬টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও (USA) তাঁরা ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন – যেমন: ওয়াশিংটন ডিসি-তে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, নিউ ইয়র্কে ফোর্ডহাম ইউনিভার্সিটি, সান ফ্রান্সিসকোয় সান্টা ক্লারা ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি।
সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের পরিকল্পনাও করছে। সেসব উদ্যোগের মধ্যে থাকবে – ফ্যাকাল্টি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, রিসার্চ অ্যান্ড স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। অর্থাৎ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা এখানে পড়াতে আসবেন, এখানকার অধ্যাপকরাও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবেন। অনুরূপভাবে, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্যও এই সুযোগ থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালা এবং অধিবেশনের আয়োজন তো থাকবেই। সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় ‘ওয়েবেল’-এর সঙ্গে একটি ‘মউ’ স্বাক্ষর করেছে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে। ‘নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’-র (এনকেডিএ) সঙ্গেও একই বিষয়ে জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ফাদার ফেলিক্স রাজ বিশ্বাস করেন, সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্রতী হওয়া উচিত। বিশেষ করে ভাবতে হবে প্রান্তিক মানুষদের ভালর জন্য।
সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ‘ডব্লিউবিএসইডিসিএল’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রান্তিক মহিলাদের জন্য ১০ দিনব্যাপী একটি সেলাই কর্মশালার আয়োজন করেছিল। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল প্রান্তিক নারীদের ক্ষমতায়ন। যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মে যুক্ত থাকবে, তাদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি বিশেষ অ্যাকাডেমিক ক্রেডিটের ব্যবস্থাও করেছে। কোর্সকালীন প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই অন্ততপক্ষে ৩০ ঘণ্টা দিতেই হবে সমাজসেবার ব্রতে।
[আরও পড়ুন: বিদ্যুতের বিলের বোঝায় ‘আত্মঘাতী’ দাদু, পেট্রল পাম্পের আলোয় পড়াশোনা নাতি-নাতনির]
সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে ‘ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (এফডিপি) এবং কর্মশালার আয়োজনও করে থাকে, যাতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকরা শিক্ষাব্যবস্থার পরিসরের বিভিন্ন রকম বদলের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেন এবং এমন পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারেন যা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সের আয়োজনও করছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যও লভ্য হবে। এই নতুন পাঠ্যক্রমে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও কেরিয়ার গড়ে তুলতে সমর্থ হবে। শিক্ষার্থী নিজেই নিজের কাজের ক্ষেত্র, এমনকী প্রতিষ্ঠানও, গড়ে তুলতে পারবে – কোথাও নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ খোঁজার চেয়ে। এই বছরে, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের, একশো শতাংশ প্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মানজনক পদে কর্মরত ও যুক্ত।