shono
Advertisement

দু’মুঠো ভাতের জন্য! মৃত দাদাকে খুনের নাটক করে জেলযাত্রার প্রস্তুতি ভাইয়ের

পেনশনভোগী দাদার টাকাতেই পেট চালাতেন কর্মহীন ভাই।
Posted: 09:30 PM Jun 15, 2022Updated: 09:44 AM Jun 16, 2022

অর্ণব আইচ: “দাদাকে খুন করেছি। আমায় ধরুন।” গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণী থানায় (Bansdroni Police Station) হাজির হওয়া ব্যক্তিটির কথা শুনে চমকে উঠেছিলেন ডিউটিরত পুলিশ আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখে বালিশ চাপা দেহটি উদ্ধার করলেও সন্দেহ জেগেছিল পুলিশের। ময়নাতদন্তের পর নিমেষে সমাধান হল যাবতীয় রহস্যের।

Advertisement

জানা গেল, আদৌ খুন হননি ওই ব্যক্তির দাদা। তাঁর মৃত্যু হয়েছে সেরিব্রাল স্ট্রোকে। দাদার মৃত্যুর পর বেকার ভাই না খেতে পেয়ে মারা যাবেন, সেই আতঙ্কে মৃত্যুর আগেই দাদা ভাইকে পুলিশের কাছে গিয়ে খুনের ‘গল্প’ বলে মিথ্যা আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। মৃত্যুর আগে ভাইকে বলেছিলেন, দাদাকে হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড যদি হয়, সরকারি খরচে সারাজীবন জেলেই খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তাই দাদার শেষ ইচ্ছামতোই এত কিছু করেন ভাই। ভাই শুভাশিস মানিসক অবসাদে ভুগছিলেন কি না, তাও পলিশ খতিয়ে দেখছে।

[আরও পড়ুন: ‘যতবার ডাকবে ততবার মাথা উঁচু করে আসব’, সিবিআইয়ের ম্যারাথন জেরার পর বার্তা শওকতের]

পুলিশ জানিয়েছে, বাঁশদ্রোণীর নীরঞ্জন পল্লিতে ঘটেছে এই ঘটনাটি। মৃত ওই ব্যক্তির নাম দেবাশিস চক্রবর্তী (৪৮)। এখানেই ভাই শুভাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে তিনি একটি ছোট ঘরে থাকতেন। যাদবপুরের সিরামিকস ইন্সটিটিউটের কর্মী ছিলেন দেবাশিস ও শুভাশিসের মা। তাঁদের বাবার আগেই মৃত্যু হয়েছে। মা অবসর গ্রহণের পর ৩৫ হাজার টাকা পেনশন পেতেন। বাড়ির বড় ছেলে দেবাশিস চাকরি করতেন ওই একই সংস্থায়। কিন্তু কর্মরত অবস্থায় তাঁর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে তিনি চাকরি করতে না পারলেও প্রত্যেক মাসে ১৫ হাজার টাকা করে পেনশন পেতেন। ছোট ছেলে শুভাশিস আগে মালদহে একটি চাকরি করতেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি বেকার।

৫০ হাজার টাকা রোজগারে মা ও দুই ছেলের ভাল করেই চলত। দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণীর সোনালি পার্কে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা। গত মে মাসে মায়ের মৃত্যুর পর পেনশন বন্ধ হয়ে যায়। ১৫ হাজার টাকায় সংসার চালানোর জন্য দুই ভাই ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে নীরঞ্জন পল্লিতে একটি ছোট ঘর ভাড়া নেন। নিজেরা ভাল করে রান্নাও করতে পারতেন না। অনেক দিনই শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাতেন। শুভাশিসের দাবি, তাঁর দাদার শারীরিক অবনতি হচ্ছিল। কিছুদিন আগে দাদা দেবাশিস ভাইকে বলেন, তিনি হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবেন না। তাঁর মৃত্যুর পর ওই ১৫ হাজার টাকা পেনশনও বন্ধ হয়ে যাবে। ভাই শুভাশিসের থাকা ও খাওয়ার টাকা থাকবে না। তাই তাঁর মৃত্যুর পর যেন শুভাশিস তাঁর দেহের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে রাখেন। থানায় পুলিশের কাছে গিয়ে বলেন, তাঁর দাদাকে তিনি খুন করেছেন। খুনের অভিযোগে তিনি যদি গ্রেপ্তার হন, তবে জেলে গেলে তাঁর থাকা ও খাওয়ার অভাব হবে না। যাবজ্জীবন সাজা যদি হয়, তবে সারাজীবন সরকারি খরচে খেতে ও থাকতে পারবেন।

মঙ্গলবার গভীর রাতে দেবাশিসবাবুর মৃত্যুর পর ভাই শুভাশিস রাত পৌনে তিনটে নাগাদ বাঁশদ্রোণী থানায় এসে ‘আত্মসমর্পণ’ করেন। রাতেই পুলিশ তাঁকে নিয়ে গিয়ে মুখে বালিশ চাপা দেওয়া দেহটি উদ্ধার করেন। কিন্তু মৃতের শরীর বা বিছানায় কোনও ধস্তাধ্বস্তির চিহ্ন না থাকায় পুলিশ আধিকারিকদের সন্দেহ হয়। তাঁরা শুভাশিসকে গ্রেপ্তার না করে আটক করেন। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে সেরিব্রাল স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে জানা যায়। শ্বাসরোধ করে খুনের কোনও চিহ্ন না থাকায় ফের শুভাশিসকে পুলিশ জেরা শুরু করে। এরপরই সে পুরো বিষয়টি স্বীকার করে। শুভাশিসের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ‘দাঙ্গাকারীদের’ ধরতে পোস্টার প্রকাশ পুলিশের, ছবি দেওয়া হবে সোশ্যাল মিডিয়াতেও]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement