বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: মাত্র তিন মাসের সাসপেনশন। দলের দুঁদে নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে শাস্তি দিতে গিয়ে ছুঁচো গেলার দশা রাজ্য সিপিএমের (CPM)। এই শাস্তিতেও বেশ ক্ষুব্ধ তাঁর অনুগামী, পার্টিকর্মীদের একটা বড় অংশ। একসময়ের পার্টির কাণ্ডারী পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতা সুশান্ত ঘোষের জনপ্রিয়তা এই কঠিন সময়েও পার্টি কর্মীদের কাছে প্রবল। সাংগঠনিক দক্ষতায় তাঁর ধারেকাছে নেই আলিমুদ্দিন কাঁপানো বহু নেতা। আর এই ‘কারণ’-এর সামনে প্রবল তর্জনগর্জন করেও পিছু হঠতে হল আলিমুদ্দিনকে। রা়জ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ তো দূরঅস্ত! বরং তাঁকে সাসপেনশন থেকে বার করে এনে কীভাবে সংগঠনের কাজে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই এখন বড় মাথাব্যথার কারণ সিপিএমের।
দলীয় সূত্রে খবর, নিচের তলায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতার কথা চিন্তা করে ইচ্ছে থাকলেও বেশি দূর এগোনোর সাহস দেখাননি পার্টির ভোট ম্যানেজাররা। বরং ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মতো সুশান্ত ঘোষকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেই ক্ষান্ত দিতে হয়েছে যুদ্ধে। অবশ্য তাতেও কি রক্ষা পাওয়া গেল? সূত্রের খবর, সুশান্ত ঘোষকে সাসপেনশনের খবর ছড়াতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। পার্টি কর্মী-সমর্থকদের পোস্টে ক্ষোভ উদ্গীরণ দেখে চক্ষু চড়কগাছ শীর্ষ নেতৃত্বের।
[আরও পড়ুন: ‘আন্দোলন করলে শিক্ষকদেরও মুখ্যমন্ত্রীর মুখঝামটা শুনতে হয়’, কটাক্ষ দিলীপের]
প্রাক্তন মন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কোনঠাসা করার পরিকল্পনা চলছিল। আনা হচ্ছিল ভুরিভরি অভিযোগ। কখনও আর্থিক অস্বচ্ছতা, কখনও নিষ্ক্রিয়তা তো কখনও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ। তিনি জেলায় এলে পার্টিকর্মীর প্রাণহানি হতে পারে, এমন গুরুতর অভিযোগও বাদ যায়নি। জেলা কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে চরম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশও করে। জেলা কমিটির এহেন মনোভাবে নড়চড়ে বসে আলিমুদ্দিন। জেলার সুপারিশকে মান্যতা দিতে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তিনি সুশান্ত ঘোষ। একটা সময় পার্টির মুখ। আলিমুদ্দিন সুত্রে খবর, যে কয়েকটি অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছিল তা কার্যত ধোপে টেকেনি। একমাত্র তাঁর লেখা বছরখানেক আগে প্রকাশিত ‘বামফ্রন্ট জমানার শেষ ১০ বছর’ শীর্ষক বইটির কয়েকটি অংশ ছাড়া। এ নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য কমিটির এক সদস্য।
তিনি জানান, কী মানসিক পরিস্থিতিতে তিনি বইটি লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করেন সুশান্তবাবু। বইয়ের কয়েকটি বক্তব্যর সঙ্গে কমিশনের দুই সদস্য সহমত না হলেও পরিস্থিতির যে জটিল ছিল তা মেনে নেন। তাই কমিশনের রিপোর্টে প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। যদিও সুশান্ত ঘোষ জানান, ‘‘পার্টি যা ভাল মনে করেছে তাই করেছে। আমি পার্টিতে ছিলাম, আছি ও ভবিষ্যতেও থাকব।’’ সাসপেনশনের পরও বিকল্প কিছু ভাবনার পথে নেই সুশান্ত ঘোষ। বলেন, ‘‘নীতি ও আদর্শের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু কোনও কিছুর জন্য নীতি ও আদর্শকে ত্যাগ করা যায় না।’’
[আরও পড়ুন: পার্সেলে মোবাইলের বদলে জুতো, পোস্টম্যানকেই মারধর করে গ্রেপ্তার বড়বাজারের ক্রেতা]
শুক্রবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে যখন তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল, তখন একজন সদস্যও গড়বেতার প্রাক্তন এই বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন তোলেননি বলে আলিমুদ্দিন সূত্র খবর। তবে এই শাস্তিও যে পার্টির নিচুতলার নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেননি, সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রেখে হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন পার্টির ভোট ম্যানেজাররা। নেতাদের কার্যত আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে কর্মী সমর্থকরা। সুশান্ত ঘোষকে ফের স্বমহিমায় পার্টিতে স্থান দিতে হবে ও সংগঠনের স্বার্থে পথে নেমে কাজ করানোর দাবি তোলা হয়।
The post এখনও এত জনপ্রিয়তা! শাস্তি দেওয়ার পরপরই সুশান্ত ঘোষকে ফেরানোর ভাবনা আলিমুদ্দিনের appeared first on Sangbad Pratidin.