গৌতম ব্রহ্ম: কোভিড মোকাবিলার অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছে আয়ুশ ক্বাথ। পুলিশ থেকে আমলা, সবাই দিনে দু’বার ভেষজ পাঁচন খাচ্ছেন। কিন্তু ক্বাথ তৈরির প্রধান উপকরণ তুলসীরই দেখা নেই। উৎপাদিত তুলসী (Tulsi) পাতার সিংহভাগ হাওড়ার মল্লিকঘাট হয়ে চলে যাচ্ছে ভগবানের পায়ে। এবার তাই একশো দিনের প্রকল্পকে যুক্ত করে রাজ্য সরকার তুলসী চাষের উদ্যোগ নিল। চিহ্নিত করা হল কোচবিহারের দুই গ্রাম পঞ্চায়েতকে। বুধবারই প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
কোচবিহারের (Cooch Behar) বারোটি জনপদকে তুলসী গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি এক বিঘা জমি আছে, এমন ১৫০জন চাষিকে নির্বাচন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। এক আধিকারিক জানালেন, “চাষিদের তুলসী বীজ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তুলসী পাতা শুকনো করার জন্য সোলার-ড্রাইং ইউনিট এবং একটি স্টোরেজ গুদাম তৈরি করা হবে। একটি তুলসী প্রসেসিং প্ল্যান্টও তৈরি করা হবে, যেখানে আয়ুশ ক্বাথ, তুলসী অর্ক, তুলসী তেলের মতো দ্রব্য উৎপাদিত হবে।” একশো দিনের প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের যুক্ত করে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কর্মসংস্থান সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প’-র টেকনিক্যাল অফিসার তাপস সাহা এই খবর জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ রাজ্যে প্রথম। তবে এই ব্যাপারে যা বলার আধিকারিকরাই বলবেন।” আন্তর্জাতিক বাজারে তুলসীর বিপুল চাহিদা। এক কেজি শুকনো পাতার বর্তমান দাম ৪০-৫০ টাকা। কিন্তু এখন টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না তুলসী। রাজ্য ভেষজ উদ্ভিদ পর্ষদ সূত্রে খবর, এক হেক্টর জমি থেকে আনুমানিক ১ টনের মতো শুকনো পাতা বছরে দু’ থেকে তিনবার সংগ্রহ করা যাবে। আয়ুশ ক্বাথ তৈরিতে চারভাগ তুলসী, দু’ভাগ দারচিনি, দু’ভাগ শুকনো আদা ও একভাগ গোলমরিচ লাগে।
[আরও পড়ুন:বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ই-মেল পেয়েছেন? সাবধান! হতে পারে বড় বিপদ]
কোচবিহার-সহ উত্তরবঙ্গে আর্দ্রতা বা ঠান্ডা বেশি। সারা বছর ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভোগেন এখানকার মানুষ। আউটডোরে উপচে পড়ে জ্বরের রোগী। সর্দি-কাশিতে লাগাম পরাতেই তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের নাটাবাড়ি ২ অঞ্চলে ভেলাপেটা গ্রামে তুলসী গ্রাম তৈরির উদ্যোগ নেন নাটাবাড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সিনিয়র আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. বাসবকান্তি দিন্দা। তিনি জানালেন, “২০১৮ সালের মে মাসে তুলসী গ্রাম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ভেলাপেটা। এক বছর পরে দেখা যায়, তুলসীর বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহারে জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসনালির সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ অনেক কমেছে। তুলসীগাছ বিক্রি করে বিকল্প আয়ের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। গত নভেম্বরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসবে ‘অ্যাপ্লিকেশন অফ আয়ুশ সিস্টেম’ বিভাগে তুলসী গ্রাম প্রকল্পটি দেশের সেরা নির্বাচিত হয়। এরপরই প্রকল্পের সুফল ব্লকের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় রাজ্য প্রশাসন। আয়ুশ বিভাগ, রাজ্য ভেষজ পর্ষদ, আনন্দধারা প্রকল্প, ডিআরডিসি, পশ্চিমবঙ্গ সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ, উদ্যান পালন বিভাগ, নারেগা। সবাই মিলে তুলসী গ্রামের প্রসারে ভাবনাচিন্তা শুরু করে। নাটাবাড়ি ১ নম্বর অঞ্চলের সাতটি ও নাটাবাড়ি ২ নম্বর অঞ্চলের পাঁচটি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্মসূচির প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে একটি নার্সারি তৈরি হচ্ছে। সেই নার্সারির চারা ১২টি গ্রামের ৮ হাজার পরিবারকে দেওয়া হবে। আর চাষিদের দেওয়া হবে তুলসীবীজ।
[আরও পড়ুন:দেশে ফের উদ্বেগজনক হারে বাড়ল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও]
The post আয়ুশ ক্কাথ তৈরিতে তুলসীর আকাল, ১৫০ বিঘা জমিতে চাষের সিদ্ধান্ত রাজ্যের appeared first on Sangbad Pratidin.