অভিরূপ দাস: এ যেন অকাল বোধন। পুজোর আগেই দুই মায়ের আর্শীবাদ। একজনের সঙ্গে নাড়ির টান। অন্যজন মাতৃসম। একুশ বছরের নির্মলা পালকে নতুন জীবন দিচ্ছে মা অনিমা পালের কিডনি আর মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। তবে স্বাস্থ্য সাথীর পাঁচ লক্ষ টাকাই শুধু নয়, রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাসপাতালকে আমরা জানিয়েছি, মানবিক দিক দিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টি দেখতে হবে। চিকিৎসায় যতটা সম্ভব ছাড় দেওয়া যায় ততটাই দিতে হবে নিম্নবিত্ত পরিবারের ওই মেয়েটিকে।
কোচবিহারের মাথাভাঙায় বাড়ি নির্মলাদের। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর শরীর দুর্বল। হাত—পা ফুলে গিয়েছিল। তখনও জানতেন না কি অসুখ বাসা বেঁধেছে শরীরে। গত মার্চে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়েই জানতে পারেন সত্যিটা। বিকল হয়ে গিয়েছে দু’টি কিডনি। সাধারণত শরীরের অন্যান্য অঙ্গ খারাপ হলে আগে থেকে তার লক্ষণ পাওয়া যায়। কিন্তু কিডনির সমস্যা হলে আপাতদৃষ্টিতে কিছু বোঝা যায় না। অকারণে জাপটে ধরে অবসাদ। যেমনটা হতো নির্মলারও। সবসময় ঘুম ঘুম ভাব, মনঃসংযোগের সমস্যা, খিদে নষ্ট। তাঁর কথায়, “অনেকদিন ধরেই পা ফুলে থাকত। কিন্তু বুঝতে পারিনি দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: তালিবানের দখলে আফগান ক্রিকেট বোর্ডও, নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে ICC]
গত মার্চ মাসে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা করাতে আসতেই ধরা পরে সত্যিটা। চিকিৎসকরা জানান, দুটি কিডনিই বিকল। পরিবারে কিডনির অসুখের ইতিহাস থাকলে যেমনটা হয়। এদিকে, নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে নির্মলা। তাঁর বাবা পায়রা বিক্রি করেন। বাড়িতে সদস্য বলতে নবতীপর ঠাকুমা, ছোট ভাই আর গৃহবধু মা। কলকাতায় এসে আর এন টেগোর হাসপাতালে ভরতি হন নির্মলা। কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ বিপুল। যোগাড় করাও চাট্টিখানি কথা নয়। কিডনির অভাব মেটাতে এগিয়ে আসেন মা অনিমা পাল। একটি কিডনি নিয়েও সুস্থ সবল ভাবে বেঁচে থাকা যায়। নিজের দু’টি কিডনির একটি তিনি দান করতে চান মেয়েকে।
দ্বিতীয় চিন্তা ছিল খরচ। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন নির্মলা। জানতে পারে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে কাউকে ফেরানো যাবে না। সেই নির্দেশ মেনেই আর এন টেগোর হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কমিশন চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমি হাসপাতালকে বলে দিয়েছি। কিডনি প্রতিস্থাপনের ন্যূনতম খরচ নিতে হবে ওই পরিবারটির কাছ থেকে।” পুজোর আগেই কিডনি প্রতিস্থাপন হবে নির্মলার। তিনি জানিয়েছেন, পুজোয় ঠাকুর দেখার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি যাব। এখন উনিই আমার কাছে ঈশ্বর।