অভিরূপ দাস: হাত-পা কাঁপছে। হাঁটতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন। প্রথমটায় মনে হয়েছিল পার্কিনসন। কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণে ধরা পরল দুরারোগ্য ব্যধি। নাম স্পাইনোসেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া (টাইপ ১২)। এতটুকু পড়ে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। চমকে যাওয়ার বিষয় অন্য জায়গায়। এই অসুখ নিয়েই পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ভর্তি ১১০ জন। যাঁদের মধ্যে ১০৯ জনের পদবি আগরওয়াল! যা দেখেশুনে চিকিৎসকদেরও চক্ষু চড়কগাছ।
এরপরেই শুরু গবেষণা। জরিপ করে দেখা গিয়েছে জিনের এক সমস্যা দায়ী এই অসুখের পিছনে। মারোয়াড়িদের মধ্যে আরও বেশি করে আগরওয়াল পদবিধারীদের মধ্যেই এই জিনের উপস্থিতি প্রকট। ২০১১ সালে ৫৮ বছরের এক প্রৌঢ় স্নায়ুর সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন পার্কসার্কাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। তাঁর হাত কাঁপছিল। কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। ডা. হৃষিকেশ কুমারের অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা। প্রথমটায় পার্কিনসনই ভাবা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ওষুধ খাওয়ার পরেও আরোগ্য মিলছিল না রোগীর। পরিস্কার হয় অন্য কোনও অসুখে ভুগছেন ওই ব্যক্তি। “আপনার পরিবারের কারও এই অসুখ ছিল?” ডা. হৃষিকেশ কুমারের এই প্রশ্নের উত্তরেই মেলে সমাধান। অসুস্থ প্রৌঢ় জানান, তাঁর বাবা, কাকা, ঠাকুরদা সকলেই আগরওয়াল। এবং তাঁরাও এই অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। এরপর ধাঁধার সমস্যা সমাধান শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। রক্ত পরীক্ষাতেই ধরা পরে ওই ব্যক্তি স্পাইনোসেরেবেলার অ্যাটাক্সিয়াতে (টাইপ ১২) আক্রান্ত। ফিজিওথেরাপি ছাড়া এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কেন আগরওয়ালদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এই অসুখ? ডা. হৃষিকেশ কুমারের যুক্তি, “অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং নিজেদের জনগোষ্ঠীর মধ্যেই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করায় আগরওয়ালদের মধ্যেই এই অসুখ চক্রাকারে ঘুরে চলেছে।” এখনও এ অসুখের সমাধান না মিললেও অদূর ভবিষ্যতে তা মিলতেও পারে। এরপরেই লন্ডনের চিকিৎসক ডা. কৈলাশ ভাটিয়ার সঙ্গে যোগাযোগা করা হয়। ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স এ রোগের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য গবেষণা শুরু করেছে। শুক্রবার আইএনকে তে চেয়ারম্যান ডা. আরপি সেনগুপ্ত দিয়েছেন সে তথ্য। সন্ধ্যেয় শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে এমন ত্রিশ জন আগওয়াল পদবীভুক্ত রোগীকে আনা হয়। তাঁদের সঙ্গেই নিবিড় আলোচনায় সমাধানের পথ খুঁজেছেন চিকিৎসকরা।
আপাতত স্রেফ একটি রক্ত পরীক্ষা। যা করতে খরচ চার হাজার টাকা। তাতেই ধরা পরবে এই অসুখ। তবে আগরওয়াল পদবী হলেই এই পরীক্ষা করতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা। ডা. হৃষিকেশ কুমারের কথায়, “পঞ্চাশ-পঞ্চান্নর আগে এই অসুখ দেখা যায় না। তাই আঠারোতে পরীক্ষা করে কোনও লাভ নেই। খামোখা দুশ্চিন্তা বয়ে জীবন কাটাতে হবে। তার চেয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ, জেনেটিক কাউন্সেলিং করে তবেই রক্তপরীক্ষা করান। কারণ এই অসুখ দূরারোগ্য। শুধুমুধু আগে পরীক্ষা করে জীবনে দুশ্চিন্তা বাড়বে।” ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, হরিয়ানা থেকেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছে আগরওয়ালরা। তাঁরা মূলত ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেকেই বিশেষ এই অসুখ সম্বন্ধে জানেন না। ফলে প্রাথমিক অবস্থায় তাঁরা পার্কিনসন ভেবেই চিকিৎসা শুরু করেন। আগরওয়ালরা যদি নিজে থেকেই চিকিৎসকদের পারিবারিক ইতিহাস বলে দেন, তবে চিকিৎসকদেরও রোগ নির্ণয়ে সুবিধে হবে।
The post একই অসুখে ভুগছেন ১০৯ আগরওয়াল! ব্যাপারটা কী? appeared first on Sangbad Pratidin.