সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বহুদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। একটু জোরে হাঁটলেই হাঁপিয়ে পড়ছিলেন। ভারি কাজ করতে গেলেও বড় করে শ্বাস নিতে হত। কেন এমন হচ্ছে তার কুলকিনারা করে উঠতে পারছিলেন না বছর আটত্রিশের ওই যুবক। শেষমেশ বাধ্য হয়ে গেলেন চিকিৎসকের (Doctor) কাছে। তাঁরাও প্রথমটায় ধন্দে ছিলেন। বুঝতে পারেননি সমস্যাটা ঠিক কোথায়! শেষ পর্যন্ত দেখা গেল দাঁত গজিয়েছে নাকের ভিতরেই।
এমনই আশ্চর্য এক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে (New England Journal of Medicine)। ৩৮ বছরের সেই যুবক একটি ক্লিনিকে যান। সেখানে গিয়ে চিকিৎসককে জানান, তাঁর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষাও করানো হয়। চিকিৎসকরা সেই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জানান, তাঁর নাকের হাড় সরে গিয়েছে। নাকের হাড় একদিকে সরে গেলে একদিকের নাসিকা ছিদ্র সংকীর্ণ হয়ে যায়। সেই কারণেই নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। একই সঙ্গে জানানো হয়, তাঁর নাকে ‘ক্যাভিটি’ হয়েছে। রির্পোটে আরও বলা হয়, তাঁর নাকের হাড়ের পিছনের দিকে ২ মিলিমিটার গভীর এক গর্ত হয়ে রয়েছে।
[আরও পড়ুন: বকেয়া পুরভোটে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী? কমিশনের উপর সিদ্ধান্তের ভার হাই কোর্টের]
কিন্ত পরীক্ষায় এসব ধরা পড়লেও তাঁর মুখের গঠনে কোনও সমস্যা নেই। তিনি সেই কথা চিকিৎসকদেরও জানান। এই কথা শুনে চিকিৎসকরা আবার তাঁর টেস্ট করেন। তবে তা কোনও সাধারণ পরীক্ষা নয়। বিশেষ ধরনের যন্ত্র ‘রাইনোস্কোপ’ ব্যবহার করে এই সমস্যার আসল কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হয়। সেই রির্পোট হাতে পেয়ে তো চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ! দেখা যাচ্ছে, তাঁর ডান দিকের নাকের ছিদ্রে একটি সাদা শক্ত অংশ বেড়ে উঠেছে। এই অংশটি আসলে কী? প্রথমটায় চিকিৎসকরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নাকেই গজিয়ে উঠেছে আস্ত একটি দাঁত। প্রায় ১৪ মিলিমিটার লম্বা ওই দাঁতটি বেড়ে উঠেছিল নাকের মধ্যেই। চিকিৎসকদের মতে, এমন ঘটনা সত্যিই বিরল।
জার্নালে এই রির্পোট প্রকাশিত হওয়ার পরেই হইচই পড়ে গিয়েছে চিকিৎসক মহলে। এমন অদ্ভুত ঘটনায় হতবাক চিকিৎসকরাও। সেই কারণেই গোটা ঘটনা তাঁরা লিপিবদ্ধ করেন সেই জার্নালে। তবে শেষ পর্যন্ত কীভাবে পাওয়া গেল এমন সমস্যার সমাধান? জার্নালের লেখক ডা. সাগর খান্না (Sagar Khanna) এবং মাইকেল টার্নার (Michael Turner) জানিয়েছেন চিকিৎসার উপায়। ওই ব্যক্তির মুখে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় সেই দাঁতটি। তবে শুধুই মুখ নয়,কাঁচি চালাতে হয় তাঁর গলা এবং মাথার কিছু অংশেও। অস্ত্রোপচারের পরেও তিন মাস তাঁকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। সেই যুবক এখন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছেন। দীর্ঘ দিনের শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পান।