কিংশুক প্রামাণিক: রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে যে ‘স্বতন্ত্র প্রস্তাব’ আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে তা নজিরবিহীন নয়। ১৯৬৭ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সাংসদ ভূপেশ গুপ্ত (Bhupesh Gupta) পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ধরমবীরের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব রাজ্যসভায় এনেছিলেন। এখন জগদীপ ধনকড়কে (Jagdeep Dhankhar) নিয়ে যে পরিস্থিতি চলছে, কার্যত একই পরিস্থিতি ধরমবীরকে নিয়ে হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট সরকারের। তিনি সম্পূর্ণভাবেই নিজের মতো চলেছিলেন। সরকার ফেলে দিয়েছিলেন।
এরপর পশ্চিমবঙ্গ থেকেই এই ধরনের ‘স্বতন্ত্র প্রস্তাব’ উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের বিরুদ্ধে এনেছিলেন বর্তমান তৃণমূল (TMC) সাংসদ, বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুখেন্দুশেখর রায়। কল্যাণ সিং (Kalyan Singh) তখন রাজস্থানের রাজ্যপাল। তিনি ‘জনগণমন’ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘পঞ্চম জর্জকে খুশি করতেই রবীন্দ্রনাথ জনগণমন গেয়েছিলেন।’’ এই প্রেক্ষিতে রাজ্যসভায় সুখেন্দুবাবুর (Sukhendu Sekhar Roy) আনা ‘স্বতন্ত্র প্রস্তাব’ নিয়ে প্রথম নরেন্দ্র মোদি সরকারে বিস্তর জলঘোলা হয়। সরকার বিষয়টি চেপে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সুখেন্দুবাবু ছিলেন নাছোড়। তিনি এত সুন্দর বিষয়টি ড্রাফট করেছিলেন, ব্যক্তিগত স্তরে তাঁকে সাধুবাদ দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: সম্মতি থাকায় পদ্ম পুরস্কারের তালিকায় নাম বুদ্ধবাবুর! প্রত্যাখ্যান ইস্যুতে PMO-কে জানাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক]
সূত্রের খবর, এর পর প্রয়াত অরুণ জেটলি সুখেন্দুবাবুকে অনুরোধ করেন, বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে। এ ব্যাপারে তৃণমূল সাংসদ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সবটাই ইতিহাস। তবে এটা ঠিক, প্রণবদা আমার ড্রাফটের প্রবল প্রশংসা করেছিলেন। জগদীপ ধনকড় রাজ্যপালের আসনে যা করছেন, তা খুবই উদ্বেগের। উনি মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকারকে মানছেন না। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ‘দ্যাট লেডি’ বলেছিলেন। এ তো পাকিস্তানের ভুট্টোর কণ্ঠস্বর। ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে উনি ‘দ্যাট উওম্যান’ বলেছিলেন। একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে যে অসম্মান ভুট্টো সেদিন করেছিলেন, একই কথা বলছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল। সব বিষয়টি আমরা রাজ্যসভায় প্রস্তাবে রাখব।’’
[আরও পড়ুন: ‘নতুন নীতিশাস্ত্র তৈরি করার আপনি কে?’, রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে দলীয় মুখপত্রে তোপ তৃণমূলের]
বস্তুত, জগদীপ ধনকড়কে নিয়ে রাজ্যের সংঘাত ভোটের আগে থেকেই তীব্র ছিল। সে উপাচার্য নিয়োগই হোক, অথবা প্রশাসনিক কর্তাদের ডেকে পাঠানো, বিলে সই না করা, বহু ঘটনা ঘটেছে। এমনকী, তিনি ধনকড় সাহেব বিধানসভা ভোটে ‘পরিবর্তনের’ ডাকও দিয়েছিলেন। কিন্তু, দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ফিরে আসেন। তাতে অবশ্য রাজভবনের মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হয়নি। সংঘাত আরও তীব্র। এই অবস্থায় রাজ্যসভায় ‘স্বতন্ত্র প্রস্তাব’ আনতে চলেছেন সুখেন্দুবাবু। তাঁকে এ ব্যাপারে অগ্রসর হতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং নেত্রী। আর শুধু সংসদে নয়, রাজ্য বিধানসভাতেও রাজ্যপালের অপসারণের দাবিতে প্রস্তাব আনা হবে।