দীপঙ্কর মণ্ডল: ফের কলঙ্কিত শিক্ষক-পড়ুয়া সম্পর্ক। করোনা আবহে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করায় অধ্যাপিকার ‘জাত’ তুলে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করে বসল এক ছাত্রী। ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) পাতায় ছেয়ে গিয়েছে সমালোচনা, নিন্দায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) ইতিহাসের অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মুর পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের শিক্ষামহল তো বটেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও বহু অধ্যাপক ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তাঁর সমর্থনে বার্তা দিয়েছেন। তবে অপমানজনক কথা বলায় বেথুন কলেজের ছাত্রী পারমিতা ঘোষের মধ্যে অনুতাপের লেশমাত্র নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষের শাস্তিতেও বেপরোয়া মনোভাব তার।
দিন কয়েক আগে করোনা আবহে পরীক্ষা নিয়ে ফেসবুকে এক বন্ধুর পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন যাদবপুরের ইতিহাসের অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু (Maroona Murmu)। তাঁর মত ছিল, পরীক্ষা না হলে হয়ত পড়ুয়াদের একটা বছর নষ্ট হবে। তবে তারও আগে ভাবতে হবে তাঁদের স্বাস্থ্যের কথা, জীবনের কথা। পরীক্ষা দিতে গিয়ে কেউ যাতে মারণ ভাইরাসের কবলে না পড়ে, সেদিকটাই আগে দেখা প্রয়োজন। এরপর অধ্যাপিকার মন্তব্যের নিচে বেথুন কলেজের ছাত্রী পারমিতা ঘোষ নিজের মতামত দিতে গিয়ে নজিরবিহীনভাবে অপমানজনক কথা লেখে। পারমিতা লেখে, ওই অধ্যাপক বসে বসে বেতন পান। তাই এক বছর কেন, ১০ বছর নষ্ট হলেও তাঁর কিছু যায় আসে না। কারণ, তিনি ‘কোটা’য় চাকরি পেয়েছেন।
[আরও পডুন: করোনা আক্রান্ত গাড়ির চালক, হোম কোয়ারেন্টাইনে সুজন চক্রবর্তী]
এখানেই শেষ নয়। এরপর পারমিতা নিজের ওয়ালেও ‘সাঁওতাল’, ‘মুর্মু’ – এসব শব্দ দিয়ে অশালীন ভাষায় একটি লেখা পোস্ট করে।
পরে অবশ্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সে পোস্টটি সরিয়ে নেয়। এরপর এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হতেই বেথুন কলেজ কর্তৃপক্ষ বাংলা বিভাগের ছাত্রী পারমিতা ঘোষকে ডেকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে অধ্যাপক মেরুনা মুর্মুর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ক্ষমা তো দূর অস্ত, পারমিতা তার এই বক্তব্যের জন্য এক ফোঁটাও অনুতপ্ত নয়। পালটা তার অভিযোগ, বাস্তব কথা বলার জন্য তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। মঙ্গলবার একটি ভিডিও পোস্ট করে সে ফের নিজের বক্তব্য রাখে। আরও আশ্চর্যের এই যে, পারমিতার এই বক্তব্যের পক্ষেও সওয়াল করেছেন অনেকে। তাঁরা শিক্ষাক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রে সংরক্ষণের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন।
[আরও পডুন: ৩ দিন পালিয়ে বেড়িয়েও শেষরক্ষা হল না, গ্রেপ্তার আনন্দপুর কাণ্ডের অভিযু্ক্ত অভিষেক পাণ্ডা]
গোটা ঘটনা নিয়ে নিজের মতামত স্পষ্ট করেছেন অধ্যাপক মেরুনা মুর্মুও। এবং তিনি পাশে পেয়েছেন অনেককেই। রাজ্যের অধ্যাপক সংগঠন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, দেশের অন্যান্য প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও। তবে প্রশ্ন থাকছেই। একজন শিক্ষিকার ‘জাত’ নিয়ে এমন নজিরবিহীন, লাগামহীন আক্রমণের পরও যার মধ্যে অনুতাপের লেশমাত্র থাকে না, দেশের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কী-ই বা আশা করা যায়? এভাবেই শিক্ষক-পড়ুয়া সম্পর্ক হয়ত আরও কলুষিত হয়ে উঠছে।
The post করোনা আবহে পরীক্ষা নিয়ে ভিন্নমত, অধ্যাপিকার ‘জাত’ তুলে বেনজির অপমান ছাত্রীর! appeared first on Sangbad Pratidin.