সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: আপনার দাবি সর্বতোভাবে সঠিক। আমরা আপনার পাশেও আছি। কিন্তু আপনার মতো মানুষকে, নেতাকে আমাদের দেশের, সমাজের প্রয়োজন। তাই আমরণ অনশন প্রত্যাহার করে রিলে অনশন বা অন্য কিছু উপায় বাছুন। লাদাখ ভবনে সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে দেখা করে এই আবেদন করলেন দিল্লির বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়ারা। জবাবে হাতজোড় করে, হাসিমুখে বিখ্যাত ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির আমির খান অভিনীত চরিত্র র্যাঞ্চোর অনুপ্রেরণা সোনম বললেন, “কথায় আছে, শোনো সবার, করো নিজের।”
লাদাখের জলবায়ু বাঁচাতে, লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতাভুক্ত করতে ১ সেপ্টেম্বর, নিজের জন্মদিনে দিল্লি চলো যাত্রা শুরু করেন জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম। কথা ছিল ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে তাঁর সমাধিস্থল রাজঘাটে এসে শেষ হবে তাঁদের পদযাত্রা। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে হরিয়ানা-দিল্লি সীমানা থেকেই তাঁকে, লাদাখের সাংসদ হাজি হানিফা জান-সহ শতাধিক আন্দোলনকারীকে আটক করে অমিত শাহর অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ। আইনি প্যাঁচ এড়াতে ১ অক্টোবর কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ফের আটক করা হয়। প্রতিবাদে থানাতেই অনশন শুরু করেন সোনমরা। বক্তব্য ছিল, গান্ধী জয়ন্তীতে রাজঘাটে যেতে দিতে হবে এবং রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিতে হবে। তাঁদের দাবি মেনে ২ অক্টোবর রাতে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় রাজঘাটে। সেখানে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা কথা দেন, দ্রুত শীঘ্র তিনজনের মধ্যে কোনও একজনের সঙ্গে দেখা করানো হবে তাঁদের। পাল্টা শর্ত হিসাবে তাঁদের দু’দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন সোনম। তা পার হয়ে যাওয়ার পরও বৈঠক নিয়ে কোনও খবর না আসার প্রতিবাদে শুধুমাত্র জলপান ও নুন সেবন করে ফের আমরণ অনশন শুরু করেন তাঁরা। বুধবার যা পড়ল একাদশ দিনে।
মাঝের সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিভিন্ন ধর্মের, ভাষার মানুষ সোনমের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। এদিন লাদাখ ভবনে সোনমের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিভিন্ন পড়ুয়া এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্রতিনিধিরা। প্রত্যেকে তাঁর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সোনমকে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। জবাবে সোনম বলেন, “আমার জন্য এত ভেবেছেন, তার জন্য আমি আপ্লুত। আপনাদের অসম্মান বা অমর্যাদা করছি না। কিন্তু কথায় আছে না, শোনো সবার, কিন্তু করো নিজের।” সঙ্গে জুড়লেন, “মনে করবেন না এই আন্দোলন শুধু লাদাখ বা তাঁর পরিবেশ বাঁচাতে। এই লড়াই গোটা দুনিয়ার জন্য। তার জন্য যদি আমায় আত্মত্যাগ করতে হয়, করব।” পড়ুয়াদের পাল্টা আবেদন করে বলেন, “তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। পরিবেশ না বাঁচলে তোমরাও বাঁচবে না। তাই যত বেশি সংখ্যায় আমাদের সঙ্গে যুক্ত হও। সামাজিক মাধ্যমে (বিজেপি) আইটি সেল আমাদের নামে নানা অপপ্রচার করছে। তার পাল্টা দাও।” আর জি কর কাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে কলকাতাতেও একই ধরনের আমরণ অনশনে বসেছেন ডাক্তাররা, সেই খবরও আছে সোনমের কাছে। বললেন, “আমরা আমাদের আন্দোলন করছি, ওঁরা ওঁদের। এর বেশি আর কী বলব? আসলে আমরা নিজেদের ফোকাস নড়াতে চাইছি না।”