কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: দীর্ঘ প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের স্কুলগুলি আংশিক খুলেছিল। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শুরু হয়েছিল পঠনপাঠন। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর ফের আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) মুহর্মুহু টুইট করে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের আবেদন জানাচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে পরীক্ষার্থী। এই টুইটে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ট্যাগ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকেও। পরীক্ষার্থীদের কথায়, করোনা যখন ভয়াল রূপ নিয়েছে, তখন বোর্ডের পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া উচিত ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক নিরাপত্তার স্বার্থে। এই আবেদন রেখে ‘ক্যানসেল ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড এক্সামস ২০২১’, ‘ক্যানসেল বোর্ড এক্সাম’, ‘ক্যানসেল ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড সেকেন্ডারি এক্সাম ২০২১’, ইত্যাদি হ্যাশট্যাগও তৈরি হয়েছে।
পয়লা জুন থেকে এই রাজ্যে শুরু হওয়ার কথা মাধ্যমিক পরীক্ষা। ১৫ জুন থেকে উচ্চমাধ্যমিক। এই দুই পরীক্ষা সাময়িক বাতিল বা স্থগিতের দাবিতে পরীক্ষার্থীরা বারংবার আবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পর জানা গিয়েছে, প্রত্যেকেই এই করোনাজনিত অতিমারীর সময় পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাঁদের যুক্তি, ‘আইসিএসসি’ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে ‘আইএসসি’। এ দু’টি দশম এবং দ্বাদশ পর্যায়ের বোর্ড পরীক্ষা। একই সঙ্গে ‘জয়েন্ট এন্ট্রান্স’ পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জয়েন্ট বোর্ড। তাছাড়া ‘নেট’ কিংবা ‘নিট’ পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বভারতীয় কাউন্সিল। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই রাজ্যে সরকার পরিচালিত বোর্ড কেন মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের মতো পরীক্ষা বাতিল কিংবা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেবে না।
[আরও পড়ুন: ‘এক্সিট না একজ্যাক্ট পোল, দু’শোর কাছাকাছি আসন পাবই’, চ্যালেঞ্জ দিলীপ ঘোষের]
ভোট চলাকালীন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারি কোনও সিদ্ধান্ত প্রকাশ হয়নি। প্রসঙ্গত, প্রায় আট লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থীর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা এ বছর। এত সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে আসবে। সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও আসবেন। সব মিলিয়ে স্কুলগুলিতে প্রচুর জমায়েতের সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে এই মহামারীর সময় দূরত্ববিধি কীভাবে মানা হবে, কীভাবেই বা সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় পরীক্ষার্থী-সহ তাদের অভিভাবকরা। তাঁরা শুধু নন, শিক্ষকমহলও দূরত্ববিধি মানা এবং সংক্রমণ এড়ানোর ক্ষেত্রে স্কুলগুলি কী ভূমিকা নেবে, তার সঠিক জবাব না পেয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় শিক্ষা দপ্তরের দিকে তাকিয়ে দিন গুনছে প্রত্যেকেই। অনেকে মনে করছেন, নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে। এবং তা পরীক্ষার্থীদের শারীরিক নিরাপত্তার স্বার্থেই নেওয়া হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন অনেকে। মে মাসের ২ তারিখ নির্বাচনের ফল ঘোষণা। তারপর সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে কি না তার দিকেই এখন লক্ষ্য সবার।