অরিঞ্জয় বোস ও সব্যসাচী বাগচী: ময়দানে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘বড়ে মিঞা’ নামে। কর্তব্যপরায়ণ, নিষ্ঠাবান, শৃঙ্খলাপরায়ণ। ঠিক যে যে গুণ একজন আদর্শ ক্রীড়াবিদের মধ্যে থাকা উচিত, সবই যেন সর্বশক্তিমানের কাছে আশীর্বাদ হিসাবে পেয়েছিলেন মহম্মদ হাবিব (Mohammad Habib)। সতীর্থদের কাছে তিনি ছিলেন আদর্শ ‘টিমম্যান’। আর অনুজদের কাছে ছিলেন আদর্শ অভিভাবক। কারও কাছে আবার তিনি ‘ভগবান’।
মোহনবাগানে হাবিবের সতীর্থ ছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য (Subrata Bhattacharya)। যেভাবে হাবিব তাঁকে গাইড করেছেন সেজন্য আজও কৃতজ্ঞ মোহনবাগানের ঘরের ছেলে। হাবিবের প্রয়াণে তাঁর প্রিয় ‘বাবলু’ যেন ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলছিলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠার পিছনে হাবিবদার অনেক অবদান আছে। পঁচাত্তরে আমরা পাঁচ গোল খাওয়ার পর ছিয়াত্তরে হাবিবদা এসেছিল। তখন মোহনবাগান মেসে থাকতাম। ওই মেসে হাবিবদা আর আকবর দু’জনেই থাকত। সেখানে হাবিবদার যে গাইডেন্স পেয়েছি, অভাবনীয়। আমার বাবা বা দাদাও কখনও আমাকে এত শাসন করেনি যা হাবিবদা করেছে। বিকেল পাঁচটা থেকে ছ’টার মধ্যে মেসে না ঢুকলে আমাকে ঢুকতে দিত না। আবার আমি না খেলে নিজেও খেত না। না খেয়ে বসে থাকত আমার জন্য। অফিস করে আমি আসার পর একসঙ্গে তিনজন খেতাম আমরা। হাবিবদা, আকবর, আমি। হাবিবদা আমার কাছে ভগবান।”
[আরও পড়ুন: CAG রিপোর্টে বড়সড় বেনিয়মের উল্লেখ, ৭.৫ লক্ষ কোটির দুর্নীতি! মোদির বিরুদ্ধে সরব আপ-কংগ্রেস]
হাবিব যে ভীষণ শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং নিষ্ঠাবান সেটা শোনা গেল আরও একজনের মুখে, সৈয়দ নঈমুদ্দিন। ইস্টবেঙ্গল এবং ভারতীয় দলে দীর্ঘদিন হাবিবের সঙ্গে খেলেছেন নঈমুদ্দিন। প্রিয় সতীর্থের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি বলছিলেন, “হাবিবদা দেশের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে একজন। বড় ক্ষতি হয়ে গেল ভারতীয় ফুটবলের। একসঙ্গে দীর্ঘদিন খেলেছি ইস্টবেঙ্গলে। ভীষণ সাহায্য করতেন। খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ। এশিয়ান গেমস (Asian Games) ব্রোঞ্জজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। আমরা পরিবারের মতো ছিলাম। ভীষণ নিষ্ঠাবান ছিলেন। একসঙ্গে থাকলে সবসময় ধর্ম নিয়ে কথা বলতেন।”
[আরও পড়ুন: যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যু: ‘সাবধান করেছিলাম, কিন্তু…’, বিস্ফোরক দাবি ভাইরাল চিঠির ‘রুদ্রদা’র]
শেষ জীবনটা ভাল কাটেনি হাবিবের (Mohammad Habib)। সে কথা উঠে এল নঈমুদ্দিনের স্মৃতিচারণায়। তিনি বলছিলেন, “দু’বছর আগে একবার দেখা হয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম ওঁর বাড়িতে দেখতে। ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। কাউকে চিনতে পারছিলেন না। আসলে যারা সারাজীবন খেলা করে গিয়েছেন, এই ধরনের ক্রীড়াবিদদের বাড়তি যত্নে রাখতে হয়। প্রচুর ওষুধ লাগে।” ফুটবলার জীবন প্রায় গোটাটাই কেটেছে বাংলায়। অথচ জীবনের শেষদিকটা হায়দরাবাদে কাটাতে হয়েছিল হাবিবকে। নঈমকেও তাই কাটাতে হচ্ছে। সেটাই আক্ষেপের জায়গা কিংবদন্তি ফুটবলারের। আক্ষেপের সুরে বললেন,”কলকাতা তো আমাদের আটকায়নি। আপনারা তো আমাদের আটকাননি।”