ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: এমনটাও সম্ভব?
সেচ দফতরের হিসাব অনুযায়ী আয়লায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ১০৭ কিলোমিটার জুড়ে মিষ্টি জলের পুকুর খোঁড়া হবে?
খবর যদি সত্যি হয়, তবে মিষ্টি জল পেয়ে বাঘের স্বভাব বদলাতে শুরু করবে৷ মেজাজ তো ঠান্ডা হবেই৷ বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ার জোগাড় হবে!
আসলে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর চাইছে আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকায় গভীর পুকুর কেটে মিষ্টি জল ধরে রাখতে৷ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, “আয়লায় বাঁধ নির্মাণের জন্য যেখানে মাটি কাটা হয়েছে, সেই এলাকার গভীরতাই আরও বাড়িয়ে তাকে পুকুরের আকার দেওয়া হবে৷” নবান্নের সায় মিললে, সেচ দফতরের কাজ করে যাওয়া সেই জায়গা থেকেই শুরু করবে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর৷
এই খবরেই রীতিমতো চমকে গিয়েছেন ডব্লুডব্লুএফের কর্মকর্তা, একাধিক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মায় বন দফতরের শীর্ষ আধিকারিকরাও৷ তাঁরা বলছেন, মিষ্টি জল পেয়ে ধীরে হলেও বাঘের স্বভাবে বদল আসবে৷ মজার বিষয় হল, বাঘসুমার করতে আর হন্যে হয়ে বাঘের পায়ে পায়ে ঘুরতে হবে না৷ মিষ্টি জলের এই পুকুরের পাশেই মিলবে তাদের পায়ের ছাপ৷
বিশেষজ্ঞদের কথায়, সরকারের এমন প্রস্তাব বাস্তবে রূপ নিলে ভেঙে পড়া বাস্তুতন্ত্র নতুন করে গঠিত হতে শুরু করবে৷ তাতে রয়্যাল বেঙ্গলের মগজ ভোঁতা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়! পায়ের চেটোয় ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূলের খোঁচা খেয়ে ঘোর বর্ষাতেও নোনা জলে গলা ভেজানো ছাড়া উপায় থাকে না দক্ষিণরায়ের৷ যার জেরেই যত তিরিক্ষি মেজাজ৷ নিরুপায়ে নরখাদক পর্যন্ত হয়ে ওঠে হলুদ ডোরাকাটারা৷ উত্তরে সন্দেশখালি থেকে দক্ষিণের সজনেখালি, এক দস্তুর৷
এক বাস্তুতন্ত্র বিশেষজ্ঞ সহজ বিজ্ঞানের কথায় বুঝিয়েছেন, “মানুষ হোক বা বাঘ, রক্তে নুনের পরিমাণ বেড়ে গেলে রক্তচাপ তো বাড়বেই৷ আর এ তো হিংস্র চারপেয়ে৷” মিষ্টি জল খেয়ে বাঘের শরীরে তাই নুনের পরিমাণ কমলে ধীর গতিতে হলেও যে তাদের মেজাজ ঠান্ডা হবে, তা এক কথায় স্বীকার করে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
তবে সতর্ক করে আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রাক্তন অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ বলছেন, “এমন ব্যবস্থা সত্যিই হলে দেখে নিতে হবে, পুকুরগুলি যেন নদী-পৃষ্ঠের থেকে উঁচুতে হয়৷ না হলে জোয়ারের সময় নোনা জল ঢুকে ওই জলেরও বারোটা বাজবে৷”
সরকারি দফতরের প্রস্তাব শুনে শিরদাঁড়া সোজা করে বসেন ডব্লুডব্লুএফের কর্মকর্তা কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই প্রস্তাবকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, “আমরা এমন উদ্যোগ আগে নিয়েছি৷ কিন্তু এত বেশি সংখ্যায় যদি সত্যিই মিষ্টি জলের পুকুর হয়, তা হবে সাধু উদ্যোগ৷” সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকা৷ জল তো ছার, সেখানে বাতাস পর্যন্ত নোনা৷ গায়ে চিটচিটে নোনা বাতাস লেগে আর পেটে নোনতা জল গিয়ে কারও মেজাজ ঠিক থাকে না৷ তাই কাঞ্চনবাবুর কথায়, মিষ্টি জলের পুকুরের সংখ্যা বাড়লে সেই জল তো বাঘ খেতে চাইবেই৷
নদীর একের পর এক বাঁক ঘুরে সজনেখালির সংগ্রহশালায় পৌঁছলেই মন্ত্রের মতো কানে আসে বাঘের হিসাব৷ এ বঙ্গের সুন্দরবনে এখন বাঘ আছে ১৭০টির কাছাকাছি৷ রায়মঙ্গল পেরিয়ে বাংলাদেশের বিরাট সুন্দরবনে ঢুকলে না কি সেই সংখ্যা আরও বাড়ে৷ যদিও বঙ্গের এ জঙ্গলে বাঘের সংখ্যায় অনেক সময়েই তারতম্য হয়৷ বন দফতরের আধিকারিকরা তাতে অবশ্য আশ্চর্য নন৷ জানিয়েছেন, ছোট ছোট নদী তো ছার, কম-বেশি দু’কিলোমিটার চওড়া উত্তাল রায়মঙ্গলের বুকে স্রোতের উল্টোদিকে বাঘের সাঁতরাতে সময় লাগে মিনিট বারো৷ দুই দেশের মাঝখানে জঙ্গল পাশাপাশি হওয়ায় দুই জঙ্গলেই বাঘ যাতায়াত করে৷ তাতেই সংখ্যায় তারতম্য আসে৷
গলায় উত্তেজনার পারদ চড়ে ডব্লুডব্লুএফের কর্তার৷ বলছেন, “ভাবুন তো মিষ্টি জলের ধারে বাঘেদের বাস! সুমার হলে সব বাঘকে কেমন বাগে পাওয়া যাবে!”
The post বাঘ-গরুকে এক ঘাটে জল খাওয়াবে সুন্দরবনের নয়া প্রকল্প! appeared first on Sangbad Pratidin.