প্রসূন বিশ্বাস: ঠিক যেন সুনীল সাগরে ভেসে যাচ্ছে কলকাতা।
ঘড়িতে ঠিক সন্ধ্যা সাতটা। নীল রঙের ভারতীয় দলের বাস যুবভারতীর বিবেকানন্দ মুর্তির সামনে দাঁড়াতেই, উপস্থিত জনতার উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মত। ভিড় থেকে একটা নামই ভেসে আসছিল ‘সুনীল...সুনীল’।
ঠিক তখন সামনের সিটে বসা মানুষটা সেই চিৎকার করা তরুণদের দিকে তাকিয়ে নেমে বাস থেকে নেমে আসতেই একটিবার তাঁকে ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে কেউ জড়িয়ে ধরতে গেলেন, কেউ বা আবার পায়ে পড়ে গেলেন। কোনও রকমে সেই ভিড় থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা সুনীলকে (Sunil Chhetri) নিয়ে গেলেন ড্রেসিংরুমে।
ঘড়িতে ঠিক সাতটা পনেরো। মাঠে চলে এলেন ইগর স্টিমাচ। ভারতীয় কোচ একলা বসে রইলেন মিনিট পাঁচেক। তখনও কেউ মাঠে নামেননি। ঠিক তার পাঁচ মিনিট পর টানেল থেকে উঠে এলেন সুনীল। অন্যান্য দিন দেখা যায় সোজা মাঠে নেমে যান। এদিন জাতীয় দলের হয়ে শেষ অনুশীলন ভারত অধিনায়কের। কিছুটা যেন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। নয়ত কেন সাইড লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন বেশ কিছুক্ষণ? একবার যেন চেয়ে দেখলেন গোটা স্টেডিয়ামকে। তারপরই সারা দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যেদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেদিকে ঘুরে হাতজোড় করে কৃতজ্ঞতা জানালেন, যেন করজোড়ে বলে গেলেন, ধন্যবাদ সবাইকে এই দীর্ঘপথে পাশে থাকার জন্য। এখানেই শেষ নয়, ততক্ষণে মাঠে উপস্থিত কয়েকজন সাপোর্ট স্টাফকে জড়িয়েও ধরলেন। সামনে থাকা একটা বলকে গোল লক্ষ্য করে শট করে দাঁড়িয়ে থাকলেন, যতক্ষণ না বলটা গোলে ঢুকল চেয়ে রইলেন সেদিকেই।
[আরও পড়ুন: ‘তুমি ফুটবলের কিংবদন্তি…’, বিদায়ী ম্যাচের আগে ছেত্রীকে শুভেচ্ছা লুকা মদ্রিচের]
এই মুহূর্তেই মাঠের ধারে বসে থাকা কোচ স্টিমাচ তাঁকে ডেকে নিলেন একান্তে। কাঁধে হাত দিয়ে আলোচনা চলল কিছুক্ষণ। ব্যস তারপরই যেন উধাও সেই আবেগ। ফিরে এলেন বাস্তবে। অনুশীলন শুরু হল। সেই অনুশীলনেও নেতা সুনীলই। কে বলবে এদিনই তাঁর জাতীয় দলের হয়ে শেষ অনুশীলন? তখন যেন চেনা সুনীল। অনুশীলনেও এক ইঞ্চি জমি ছাড়লেন না মনবীর সিংদের। আসলে অবসরের প্রাক-মুহূর্তে দাঁড়িয়েও সুনীল যে একই রকম ক্ষুধার্থ। লড়াকু। জেদি।
এই সুনীলের বিকল্প খোঁজাই এখন চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে ভারতীয় ফুটবলে।