shono
Advertisement

আটত্রিশেও যেন তরতাজা কিশোর, ট্র্যাজিক নায়ক হয়েও হৃদয় জয় সুনীলের

ময়দানের মহাকাব্যে সুনীল লিখে গেলেন ভারতীয় ফুটবলের জয়গাথা।
Posted: 11:42 AM Mar 19, 2023Updated: 11:42 AM Mar 19, 2023

অরিঞ্জয় বোস: আটত্রিশের তীক্ষ্ণ তির? নাকি তিনিই স্বয়ং গাণ্ডীব! কী বলা যায় তাঁকে? সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhteri) মতো মহাজাগতিক চরিত্রের জন্য বোধহয় কোনও বিশেষণই যথেষ্ট নয়। আধুনিক ভারতীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা যেন দেখিয়ে দিলেন ফুটবলের মাহাত্ম্য জয়-পরাজয়ের ঊর্ধ্বে। খাতায়-কলমে খেলতে নেমেছিলেন আইএসএল (ISL) ফাইনাল। ম‌্যাচ জিততে পারলেন না। কিন্তু তাতে কী? ময়দানের মহাকাব্যে সুনীল যে লিখে গেলেন ভারতীয় ফুটবলের জয়গাথা।

Advertisement

প্রথম একাদশে ছিলেনও না। বেঙ্গালুরু (Bengaluru FC) মাঠে নেমেছিল তাঁকে ছাড়াই। তিন মিনিটের মাথায় শিবশক্তির চোটের দরুন যখন মাঠের ঘাসে পা পড়ল রাজার, তখনই সিংগর্জনে উত্তাল হল গোয়ার ফতোদরা স্টেডিয়াম। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র তিন মিনিট। ওই এক মুহূর্তেই যেন বোঝা গেল সুনীল নামের মহিমা। নিজেকে প্রকাশের তীব্র বাসনায় ছটফট করছেন তিনি যেন আটত্রিশের এক কিশোর। এদিকে খেলার রাশ ততক্ষণে চলে গিয়েছে সবুজ-মেরুনের হাতে। রয় কৃষ্ণর (Roy Krishna) ভুলে পেত্রাতোস এগিয়ে দিয়েছেন বিপক্ষকে। মুহুর্মুহু আক্রমণে বেঙ্গালুরু দুর্গ চূর্ণ করতে উঠে আসছেন সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা। ঠিক সেই সময়ই অব্যর্থ গাণ্ডীব নিক্ষিপ্ত তীক্ষ্ণ তিরের মতোই বাগান দূর্গের দিকে ধেয়ে গেলেন সুনীল। সেই তীব্র গতি! সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর দুর্মর বাসনা! কে বলবে তিনি এখন আটত্রিশ!

[আরও পড়ুন: ভিন্দ্রানওয়ালের স্মৃতি উসকে ফের অশান্ত পাঞ্জাব, কেন শুরু হয়েছিল খলিস্তানি আন্দোলন?]

সুনীল-সুনামি কোনওক্রমে বাগান তখনকার মতো সামলালো বটে, কিন্তু সুনীল বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁর তীক্ষ্ণ ফলায় ফালাফালা হতেই হবে বিপক্ষকে। হলও তাই। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে যখন পেনাল্টি আদায় করে নিল বেঙ্গালুরু, অবধারিত ভাবে এগিয়ে গেলেন বহুযুদ্ধের নায়ক। ভারতীয় ফুটবলের অশ্বমেধের ঘোড়া যাঁর পায়ে ভর করে দৌড়েছে বহুদূর, তাঁর পায়ের শিল্পের দিকেই তখন তাকিয়ে গোটা বেঙ্গালুরু। চূড়ান্ত উত্তেজনার মুহূর্ত। অথচ তাঁর দৃষ্টি বরফশীতল। পাখির চোখ ছাড়া আর কিছু যেন দেখতে পাচ্ছেন না। এক লহমা পরেই গোটা ভারতবর্ষ দেখল মোহনবাগান গোলরক্ষক বিশাল (Vishal Kaith) গড়িয়ে পড়লেন তাঁরই রক্ষিত প্রান্তরের একদিকে, আর ঠিক তার উলটোদিকে বরাবর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ গড়ানো বল চিনে নিল জালের নিশ্চিন্ত আশ্রয়।
খেলায় ফিরল সমতা। বাঁধাভাঙা উচ্ছ্বাসে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তখন আত্মহারা বেঙ্গালুরু সমর্থকরা। আর সুনীল বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি অতিমানবিক। এই ক’দিন আগেই তো শেষ হয়েছে বিশ্বকাপ। টাটকা স্মৃতির ঘরে সার দিয়ে সাজানো বহু পেনাল্টির মখমলে নয়নাভিরাম দৃশ্য। ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা জানেন, সে সবের পাশে অনায়াসেই সাজিয়ে রাখা যায় এই পেনাল্টিকে–ওয়ান স্টেপ পেনাল্টিকে! টাইব্রেকারে আবার মারলেন যেটা! যা বোঝায়, সুনীল ছেত্রী ভারতের চিরকালের আন্তর্জাতিক অহংকার। আজও। মেসি-রোনাল্ডোদের দাপট থাকলেও ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা যে তাঁদের মনের সোনার সিংহাসন যোগ্য লোকের জন্যই তুলে রেখেছেন, তা আগেও প্রমাণ করেছেন তিনি, করলেন আবারও। ৯১ মিনিটে যে বাইসাইকেল কিক তিনি নিলেন, তাতে গোল হল না বটে। তবে ভারতীয় সমর্থকরা আবারও বুঝলেন, সুনীল সেই অমোঘ বজ্র, যা যে কোনও মুহূর্তে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে বিপক্ষের সাজানো বাগান।

[আরও পড়ুন: রাহুলের পাশে দাঁড়ানোয় মহুয়া মৈত্রকে ‘নগরবধূ’ বলে আক্রমণ, বিতর্কে বিজেপি বিধায়ক]

আসলে সুনীল তো শুধু একজন ফুটবলার নন। কোটি কোটি ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীর কাছে তিনি স্বপ্নের সওদাগর। তাঁর মোহময় ফুটবলশিল্পের সামনে আগেও যেমন নতজানু ছিলেন সমর্থকরা, এদিনও তেমন থাকলেন। ইস্পাতকঠিন স্নায়ু, বরফশীতল মস্তিষ্ক আর আটত্রিশের ঘামে ভেজা সপসপে জার্সি যেন বুঝিয়ে দিল এই সুনীল-সাগরে ডুব দিতে এখনও সানন্দে রাজি ভারতবাসী। আইএসএল (ISL) হোক বা অন্য টুর্নামেন্ট, সুনীলের খেলায় আসলে জ্বলে ওঠে সেই তেরঙ্গা জাতীয় আবেগের মশাল। যা আলো দেখায় ভারতীয় ফুটবলকে। খেলার ফল, জয়ী দল নির্বিশেষে ফুটবলপ্রেমীরা জানেন, বড় সাধের এই সুনীল-জলধি হতেই উঠে আসে তাঁদের স্বপ্নের দেশ- ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষের ফুটবল। একটা আইএসএল ফাইনাল হার সুনীলকে মাপে, সাধ্যি কী?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement