অভিষেক চৌধুরী, কালনা: পাশে কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে মনে হলেও চোখে দেখা যাচ্ছে না কাউকেই। মাঝেমধ্যেই নাকি মড়া-মড়া গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। চোখের পলক পড়তে না পড়তেই ঘরের ভিতর থেকেই উধাও হয়ে যাচ্ছে দামী মোবাইল, বডি স্প্রে, নেলপলিশ, জুতো। দেওয়াল থেকে জল বেরিয়ে ভেসে যাচ্ছে ঘর। শুধু তাই নয়, ঘরের অ্যাসবেসটসের চালের উপর দিয়ে আওয়াজ করতে-করতে ছুটে যাচ্ছে যেন কেউ। রাতের অন্ধকারে নয়, একবারে দিনেদুপুরেই এমনই এক রোমহর্ষক গা ছমছম করা ভূতুড়ে ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মন্তেশ্বরের এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে। স্বাভাবিক কারণেই এমনই এক ঘটনায় আতঙ্কিত ওই পরিবার। ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার মানুষজনও।
মন্তেশ্বরের বাঘাসন গ্রামে রয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার গৌতম অধিকারীর বাড়ি। মন্তেশ্বর থানায় তিনি কর্মরত। দাদা গোপেশ্বর অধিকারী, মা, বউদি, ঠাকুমাকে নিয়েই মাটির দোতলা বাড়িতেই তাঁদের সুখের সংসার। এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলে সিভিক ভলান্টিয়ার গৌতমকে রাতের অন্ধকারেও ছুটতে হয়। ভূতের ভয়, ভীতি বলে কোনও কিছুই তাঁকে ছুঁতে পারত না। সেই গৌতম ও তাঁর পরিবার এখন ভূতের আতঙ্কে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে সেই ভয়ে রাতের বেলাতেও আলো জ্বালিয়ে শুতে হচ্ছে।
এমনই অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে যাকে ভূতুড়ে কাণ্ড বলেই মনে করছেন গৌতম ও তাঁর পরিবার। তাঁদের দাবি, মাঝেমধ্যেই বাড়ির ভিতরে মড়া পোড়ানোর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই কারণে বেশ কয়েক রাত দু-চোখের পাতাও এক করে ঘুমোতে পারেননি তাঁরা। অধিকারী পরিবারের দাবি, বাড়ির মধ্যেই মোবাইল, কসমেটিক্স-সহ জুতো হঠাৎ-হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও প্রথমে সেভাবে তাঁরা গুরুত্ব দেননি। সোমবার ওঝার সঙ্গে দেখা করার পর বাড়িতে এসে সেই ঘটনা বেশ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে তাঁদের টনক নড়ে।
[আরও পড়ুন: স্মৃতি আগলে রাখার অদ্ভুত পন্থা, মৃতদের দাঁত-চুল-ভস্ম দিয়ে গয়না তৈরি করেন মহিলা!]
গৌতম অধিকারী বলেন, “জীবনে ভূতের ভয় পাইনি। রাতের অন্ধকারে কত জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু গত একুশ দিন আগে থেকে বাড়িতে ওই অদ্ভূত ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। এই কারণে ওঝার কাছেও যাই। তারপর থেকেই এই দাপট শুরু হয়। সোমবার বাড়ির ভিতরের টেবিলে রাখা আমার ও বউদির দু’টি বড় মোবাইল সেট হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়। বাথরুমের মধ্যে রাখা ফেসওয়াশ, বডি স্প্রে সবই উধাও হয়ে যায়। মনে হয় কেউ যেন পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাকে টেনে নিয়ে যাবে।”
এই ঘটনার কথা সহকর্মীদের জানান গৌতম। প্রথমে তাঁরা এনিয়ে হাসিঠাট্টা করেন। কিন্তু সোমবার সেই ঘটনার পরীক্ষা করতে গিয়ে তাদেরই রাখা একটি মোবাইল উধাও হয়ে যায়। এতে তাঁরাও বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গৌতমের দাদা গোপেশ্বর অধিকারী বলেন,“কিছু জিনিস নিয়ে গিয়ে আবার তা ফিরিয়েও দিচ্ছে। কিন্তু এমনই এক ভূতুড়ে কাণ্ডে আমরা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছি। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।” প্রতিবেশী উৎপল অধিকারী, হরি ঘোষদেরও ওই একই বক্তব্য। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা দেখতে এলাকার মানুষজনের ভিড়ও বাড়ছে অধিকারীদের বাড়িতে। বিজ্ঞানের যুগে এমনই এক ঘটনায় কালনা শাখার বিজ্ঞান মঞ্চের অন্যতম সদস্য তাপস কুমার কার্ফা বলেন, “অলৌকিক বা ভূতুরে বলে কিছু হয় না। কোনও একটি কারণ থাকার ফলেই এই ঘটনা ঘটছে। সঠিক অনুসন্ধান করলেই সেই রহস্যের উদঘাটন হবে।”