সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের সাজা ঘোষণা স্থগিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অরুণ মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চ এদিন প্রশান্তকে আরও একবার নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু আজও ক্ষমা চাননি তিনি। যার জেরে আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, বর্ষীয়ান আইনজীবীর এই আচরণ সমর্থনযোগ্য নয়। তবে এদিন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও সাজা ঘোষণা করা হয়নি।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে দেশের বিচারব্যবস্থা এবং সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতিকে নিয়ে টুইট করে বিতর্কে জড়ান প্রাক্তন আপ নেতা। নিজের টুইটে প্রশান্ত ভূষণ (Prashant Bhushan) লেখেন, ইতিহাসবিদরা যখন গত ৬ বছরের দিকে পিছনে ফিরে তাকাবেন, তখন দেখতে পাবেন, জরুরি অবস্থা না হওয়া সত্বেও কীভাবে দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। আর এই কাজে শেষ চারজন প্রধান বিচারপতির ভূমিকাও আলাদা করে বর্ণনা করতে পারবেন তাঁরা। আরেক টুইটে সরাসরি প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের হার্লে ডেভিডসন বাইক চাপা নিয়ে আপত্তি তোলেন এই বর্ষীয়ান আইনজীবী। প্রধান বিচারপতিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন,”দেশের এই সংকটকালে প্রধান বিচারপতি মাস্ক এবং হেলমেট ছাড়াই বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ লকডাউনে নাগরিকরা বিচার পাচ্ছেন না।” প্রশান্তের এই দুটি টুইটকেই আদালত অবমাননা (Contempt of Court) বলে গণ্য করে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। প্রশান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি চলছে।
[আরও পড়ুন: করোনার মারে ক্ষতির সম্মুখীন ইনসিওরেন্স কোম্পানিগুলি, বাড়তে চলেছে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম]
এদিন প্রশান্ত ভূষণের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে বর্ষীয়ান আইনজীবী রাজীব ধবন বলেন,”বিচারপতি মিশ্র যখন কলকাতা হাই কোর্টে ছিলেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একইভাবে আদালতকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে তোপ দেগেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিবিদ হওয়ায় তখন মমতাকে শাস্তি দেননি বিচারপতি মিশ্র। মমতা বন্দ্যাপাধায় যদি এই মন্তব্য করে রেহাই পেতে পারেন, তাহলে প্রশান্ত ভূষণ কেন নয়?” রাজীব ধবন আরও বলেন, প্রশান্তকে শাস্তি দিলে এই ব্যাপারটা আরও বেড়ে যাবে। লোকে ওঁকে ‘শহিদ’ হিসেবে বর্ণনা করবে। তাই দয়া করে ওঁকে শহিদ তকমা দেবেন না। কেন্দ্রের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেলও জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের উচিত প্রশান্তকে শাস্তি না দিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া। জবাবে বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, “একজন বর্ষীয়ান আইনজীবীর এই ব্যবহার আইনজীবীর এই ব্যবহার মানা যায় না। আপনারাও এই সিস্টেমেরই অংশ।”
[আরও পড়ুন: করোনা রোগীদের বিলে দেদার কারচুপি, মহামারীতেও ২ কোটি বাড়তি মুনাফা ১৭ হাসপাতালের!]
এদিকে ২০০৯ সালের আদালত অবমাননার মামলায় আংশিক স্বস্তি পেয়েছেন প্রশান্ত। এদিন প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে হওয়া দুটি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি অরুণ মিশ্রর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চের। ২০০৯ সালের মামলাটি ভূষণের আইনজীবী রাজীব ধবনের করা আরজি মেনে অন্য বেঞ্চে সরিয়ে দিতে রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অরুণ মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ প্রধান বিচারপতির কাছে মামলাটি অন্য বেঞ্চে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
২০০৯ সালেও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, পূর্ববর্তী ১৬ জন প্রধান বিচারপতির অর্ধেকই দুর্নীতিগ্রস্ত। ১১ বছর ধরে সেই মামলার শুনানি চলছে। মঙ্গলবারের শুনানিতে প্রশান্তের আইনজীবী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে হওয়া কোনও আদালত অবমাননার মামলার শুনানি একমাত্র সাংবিধানিক বেঞ্চেই হওয়া সম্ভব। এছাড়াও ওই মামলা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তোলেন রাজীব ধবন। বিচারপতি অরুণ মিশ্র সেই দাবি মেনে নেনে। এবং প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন মামলাটি উপযুক্ত বেঞ্চে সরিয়ে দিতে। এদিন এই মামলাটির শুনানি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
The post আদালত অবমাননার মামলায় প্রশান্ত ভূষণকে ‘তিরস্কার’ সুপ্রিম কোর্টের, স্থগিত সাজা ঘোষণা appeared first on Sangbad Pratidin.