দীর্ঘ বিরতির পর পর্দায় ফিরলেন সুস্মিতা সেন। সৌজন্যে ‘আর্যা’। সম্প্রতি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেল এই ওয়েব সিরিজ। কেমন হল? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক- রাম মাধবনী, বিনোদ রাওয়াত, সন্দীপ মোদি
অভিনয়ে- সুস্মিতা সেন, চন্দ্রচূড় সিং, বিকাশ কুমার, নমিতা দাস, মনীশ চৌধুরি, সুগন্ধা গর্গ
গৃহবধূর ‘মাফিয়া ডন’ হয়ে ওঠা
রাজস্থানের হাই প্রোফাইল ড্রাগ সিন্ডিকেট, দুই মাদক মাফিয়া গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ, খুনোখুনি, রক্তারক্তি, নিজের পরিবারের প্রতি বিশ্বাস হারানো এবং বিশ্বাসঘাতকতা, যাবতীয় রোমাঞ্চকর উপকরণই মজুত ‘আর্যা’য়। গল্পও খাসা। সুস্মিতা সেনের চরিত্রের মধ্য দিয়ে এই প্রত্যেকটি প্লটই দেখানো হয়েছে। পরিস্থিতির শিকারে এক গৃহবধূর ‘মাফিয়া ডন’ হয়ে ওঠার গল্প ‘আর্যা’। বাঘিনী যেভাবে নিজের সন্তানদের রক্ষার্থে চারপাশে গোটা দুনিয়ার সঙ্গে লড়তেও পিছপা হয় না, আর্যাও ঠিক সেরকমই।
গল্পের মোড়
তবে গল্পের শুরুটা কিন্তু মোটেই এরকম ছিল না! বিলাসবহুল বাংলো। আর্যা (সুস্মিতা সেন) আর তেজের (চন্দ্রচূড় সিং) সুখের ঘরকন্না। তিন সন্তান নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সুখীদাম্পত্য। সবই ঠিক চলছিল। কিন্তু ওই ‘অতি লোভে তাতী নষ্টে’র মতো নিজের স্বার্থ কিংবা মুনাফার জন্য টাকা-পয়সার লোভে যেমন জিভ লকলকিয়ে ওঠে, এই গল্পেও সেরকমটাই হয়। আর্যার পরিবারের সদস্যদের জন্য বেআইনি মাদক পাচারচক্রে জড়াতে বাধ্য হয় তেজ। নেপথ্যে আর্যার ভাই। তবে অন্ধকার জগৎ থেকে মুক্তি পেতে স্ত্রীর পারিবারিক মাদকের ব্যবসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতেই খুন হয়ে যায় তেজ ওরফে চন্দ্রচূড়। সিরিজের দু’নম্বর এপিসোড থেকেই মোড় নেয় গল্প। কে খুন করল স্বামী তেজকে? জানতে মরিয়া হয়ে ওঠে আর্যা।
‘আর্যা’র লক্ষ্ণণরেখা
একদিকে বেআইনি মাদকের ব্যবসা, পুলিশের তাড়া, শত্রু মাফিয়া গোষ্ঠীর কাছ থেকে ক্রমাগত মোটা ঋণ শোধ করার হুমকি, বন্দক থাকা বাড়ি, অন্যদিকে সন্তানদের সামলানো, মন শক্ত করে তাদের সাপোর্ট সিস্টেম হয়ে ওঠা- একাহাতে সবকিছু সামলাতে সামলাতে নাজেহাল হয়ে পড়ে সদ্য স্বামীহারা আর্যা। কে খুন করল, কেন করল? যাবতীয় প্রশ্নের ভিড়ে হারিয়ে যায় সে। অন্ধকার জগতের নেপথ্যের গল্পটা আবিষ্কার করতে নিজেই ময়দানে নেমে পড়ে। অবশ্যই পরিস্থিতির শিকারে। ভাগ্যের ফেরে, ফাঁদে পা দিয়ে। তবে অসৎ পথ অবলম্বন করে নয়! ঠিক যতটা যাকে ফিরিয়ে দেওয়ার, বুঝিয়ে দেওয়ার, আর্যা জানে তাঁর লক্ষ্ণণরেখা টানতে। সে করেও তাই। কথাতেই আছে ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। সুস্মিতা সেন অভিনীত ‘আর্যা’ চরিত্রটির ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি একেবারে অক্ষরে অক্ষরে খাটে। অন্ধকার জগতের জালে জড়িয়ে পড়া আর্যা আদৌ কি পারবে সন্তানদের নিয়ে দূরে চলে যেতে? নাকি স্বামী তেজের মতো তাকেও খুন হতে হবে? রহস্য দানা বাঁধে এখানেই।
সিরিজের সারপ্রাইজ এলিমেন্ট
এই ওয়েব সিরিজের সারপ্রাইজ এলিমেন্ট কিন্তু সুস্মিতা সেন। দীর্ঘ বিরতির পর লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ায় ফিরলেন তিনি। অথচ, দেখে বোঝার উপায় নেই। তাঁর ‘স্পার্ক’ যে কোনও অংশে কমেনি, তা বুঝিয়ে দিলেন ‘আর্যা’র অভিনয় দিয়েই! বরং আগের চেয়ে পর্দায় তিনি এখন আরও পরিণত। মায়ের আবেগ-অনুভূতি, প্রতিশোধস্পৃহ স্বামীহারা স্ত্রী, এ যেন নতুন এক সুস্মিতা। ‘দুর্ধর্ষ কামব্যাক’ বলা ছাড়া উপায় নেই। ওয়েব ময়দানে পা দিয়েই দর্শকদের প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিলেন। চন্দ্রচূড়ও কম যান না।
[আরও পড়ুন: জোর যার মুলুক তার! সমাজের নগ্ন রূপ তুলে ধরল ‘পাতাল লোক’]
যা ভাল লাগল না
গল্প খাসা হলেও অযথা ওয়েব সিরিজকে টানা হয়েছে। ড্রাগ মাফিয়া আর নারকোটিকস বিভাগের ইঁদুর-বিড়াল দৌঁড়টাও বেশ ম্লান! বুনোট আরও একটু শক্ত হলেও পারত। সিরিজের প্রত্যেক চরিত্রের অভিনয় বেশ ভাল হলেও প্রতিটা প্লট সেভাবে দৃঢ়তা পায়নি। উপকরণ মজুত থাকলেও গল্পের খাঁজে রোমাঞ্চকর বিষয়টিও অনুপস্থিত। তবে সমকামী পুলিশ অফিসারের চরিত্রকে অযথা অতিরঞ্জিত না করে খুব সাধারণভাবেই দর্শকের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা বেশ প্রশংসনীয়।
কেন দেখবেন?
উল্লেখ্য, পরিচালকদের জন্য একটা হাততালি দিতেই হয়, সুস্মিতা-চন্দ্রচূড়- একদম আনকোরা এই জুটিকে দর্শকের সামনে তুলে ধরার সাহস করেছেন বলে। সুস্মিতা সেনের ‘দুর্ধর্ষ কামব্যাক’-এর সাক্ষী থাকতে হলে, একবার দেখতেই পারেন ‘আর্যা’।
[আরও পড়ুন: ‘গুলাবো সিতাবো’ এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীর কথাই বলে]
The post ‘আর্যা’র হাত ধরে দুর্ধর্ষ কামব্যাক সুস্মিতা সেনের appeared first on Sangbad Pratidin.