রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রেগে কেন? মাঝেমধ্যেই তালজ্ঞানহীন আচরণ করছেন। কখনও মেজাজ হারাচ্ছেন। আবার সম্প্রতি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বঙ্গ সফরে নাড্ডার উপস্থিতিতে একাধিক বৈঠকও এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। বিরোধী দলনেতা কি তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ? কেন্দ্রীয় নেতাদের কি কিছুটা এড়িয়ে চলছেন? শুভেন্দুর এই আচরণ নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে।
সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে, গত ১৩ আগস্ট জেপি নাড্ডার উপস্থিতিতে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে তাঁর গরহাজিরা। এড়িয়ে গিয়েছেন বাগনানে নাড্ডার উপস্থিতিতে পঞ্চায়েতী রাজ সম্মেলনও। যেখানে আবার ভারচুয়ালি বক্তা ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পঞ্চায়েত ভোটে প্রচারের শেষদিনে নন্দীগ্রামে ‘চোর চোর’ ও ‘গদ্দার হঠাও’ স্লোগান শুনে মেজাজ হারিয়েছিলেন। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলন্ত গাড়ির কাঁচ নামিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেছিলেন ‘চোর’ স্লোগান দেওয়া নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের। আবার পঞ্চায়েত ভোটের দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে গিয়ে দরজায় পদাঘাত করতে দেখা গিয়েছে। তার আগে দিল্লির নেতাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে দলের পতাকা ছাড়ার হুঙ্কার দিয়েছেন। আর সর্বশেষ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সভা থেকে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেছেন।
[আরও পড়ুন: ‘জোটে লাভ নেই, নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে জনতার কাছে যেতে হবে’, INDIA-র সমালোচনায় পিকে ‘স্যর’]
শুভেন্দুর এই রেগে থাকা, ক্ষোভের প্রকাশের পিছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
এক, রাজ্য সভাপতি হতে না পারা। বিরোধী দলনেতার পদ সামলানোর পাশাপাশি রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক ছিলেন শুভেন্দু। শুভেন্দু শিবিরের লোকজনও চাইছিল, বঙ্গ বিজেপির সভাপতির পদও তাঁকে দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা অংশ এতে কার্যত রাজি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাদ সেধেছে আরএসএস। আরএসএসের শীর্ষ নেতাদের প্রবল আপত্তিতে এখনও পর্যন্ত শুভেন্দুর রাজ্য সভাপতি হওয়া আটকে গিয়েছে। শুভেন্দু শিবিরের অবশ্য দাবি, এসব ঠিক নয়। রাজ্য সভাপতি হতে নিজেই চান না বিরোধী দলনেতা। যদিও বিজেপির অন্দরে কান পাতলে অবশ্য অন্য কথাই কানে আসছে।
দুই, সদ্য জেলা সভাপতি বদল থেকে শুরু করে বেশ কিছু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত শুভেন্দুর সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে বঙ্গ বিজেপি নিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। এটা নিয়ে রাজ্য নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ বিরোধী দলনেতা। এটাও তাঁর রেগে থাকার কারণ বলে মনে করছে বিজেপির একাংশ। শুভেন্দু শিবির অবশ্য এসব বিষয় জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
তিন নম্বর কারণটি হচ্ছে, রাজনৈতিক সুবিধা নিতে ইডি বা সিবিআইকে ব্যবহার যেভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে করাতে চাইছেন বিরোধী দলনেতা তা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। শুভেন্দু চাইলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছেন না, ইডি-সিবিআইকে বেশি ব্যবহার করে সমালোচনার মুখে পড়তে। এই বিষয়েও কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ শুভেন্দু। বিজেপি সূত্রে অন্তত এমনটাই খবর। শুভেন্দু শিবির অবশ্য এসব জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়ে দাবি করছে, শুভেন্দুর কথা মতোই সব হবে। এসব রটনা।
রাজনৈতিক মহলের অবশ্য প্রশ্ন, সত্যিই কি এসব রটনা? শুভেন্দুর কথা মতো কি সব হচ্ছে বঙ্গ বিজেপিতে? গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কিন্তু শোনা যাচ্ছে অন্য কথাই।