স্টাফ রিপোর্টার: আদি-নব্যের দ্বন্দ্বে বঙ্গ বিজেপির সংগঠন কার্যত তলানিতে। একুশের বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পরেও একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি হচ্ছে বিজেপির। বাংলায় ‘হেরো পার্টি’র তকমা পেয়েছে গেরুয়া শিবির (BJP)। এই পরিস্থিতিতে বাংলার নেতাদের উপর চরম অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই বঙ্গ বিজেপিতে বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের প্রস্তুতি শুরু করেছে দিল্লি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে দিল্লিতে পৃথক বৈঠক করেছেন অমিত শাহ থেকে জে পি নাড্ডা। বৃহস্পতিবার ফের দিল্লিতে তলব করা হয়েছে শুভেন্দুকে। আর এরপরই বঙ্গ বিজেপিতে সাংগঠনিক রদবদলের জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, সাংগঠনিক রদবদল হলে রাজ্য সভাপতি হতে পারেন বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বালুরঘাটের বিধায়ক অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীকে। সুকান্ত মজুমদারকে সংসদীয় দলের কোনও দায়িত্বে আনা হতে পারে।
[আরও পড়ুন: বাংলার পরবর্তী রাজ্যপাল মোদি-শাহ ঘনিষ্ঠ রাকেশ আস্থানা? দিল্লির অলিন্দে তুঙ্গে জল্পনা]
পাশাপাশি রাজ্য বিজেপিতে গুরুত্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ও সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। শুধু তাই নয়, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর ক্ষমতা আরও খর্ব করা হতে পারে। ইতিমধ্যেই অমিতাভর ডানা ছেঁটে সতীশ ধন্দকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) করে বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বে আনা হয়েছে। চলতি মাসেই বাংলায় আসার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও সভাপতি জে পি নাড্ডার। দিল্লি সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পুজোর আগেই বঙ্গ বিজেপিতে এই সাংগঠনিক রদবদল হয়ে যেতে পারে। মূল টার্গেট অবশ্য আগামী লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় দলকে শক্তিশালী করা।
তবে শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করার প্রস্তাব নিয়ে সুকান্ত শিবিরের প্রবল আপত্তি রয়েছে। পরিষদীয় দল তথা টিম শুভেন্দুর সঙ্গে সুকান্তদের ইতিমধ্যে মতভেদ শুরু হয়েছে। বিষয়টি নজরে এসেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। দলের একাংশের মতে, পার্টির সাংগঠনিক বিষয়ে শুভেন্দু ও তাঁর টিমকে বেশি নাক গলাতে দিতে চাইছে না সুকান্ত—অমিতাভ শিবির। আর এটা নিয়েই রাজ্য পার্টি ও পরিষদীয় দলের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। শুভেন্দুকে যদি রাজ্য সভাপতি করা হয়, তাহলে দলের সংগঠনে তাঁরই লোকেরা থাকবে। আগামীদিনে তা হলে শুভেন্দুর লোকেরাই টিকিট পাবে। তাই বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে সুকান্ত শিবির।
[আরও পড়ুন: দিল্লি আসার প্রয়োজন নেই, রাজ্যের সংগঠনে নজর দিন, সুকান্তকে নির্দেশ নাড্ডার]
বর্তমানে বঙ্গ বিজেপিতে একাধিক গোষ্ঠী। সুকান্ত—অমিতাভ, শুভেন্দু, দিলীপ নানা শিবিরে বিভক্ত রাজ্য বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিয়ে পার্টিকে শক্তিশালী করতে। রাজ্য কমিটিতেও বেশ কিছু রদবদল করা হতে পারে বলে খবর। সৌরভ শিকদার, দেবজিৎ সরকার, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুদের সামনে নিয়ে আসা হতে পারে। সাসপেনশন উঠিয়ে রীতেশ তেওয়ারিকেও ফের দলের কাজে লাগানোর ভাবনাচিন্তা চলছে। ২০১৯—এর লোকসভা ভোটে সফল টিমকেই ২০২৪—এ বেশি করে কাজে লাগাতে চাইছেন শাহ—নাড্ডারা। তাই ফের বঙ্গবিজেপির সংগঠনে বড়সড় রদবদল হতে পারে জোর জল্পনা শুরু গেরুয়া শিবিরে।