shono
Advertisement

যা করেছি, বেশ করেছি: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

“আমার ইচ্ছে, আমার দায়িত্ব, আমার পয়সা, আমার শরীর!” The post যা করেছি, বেশ করেছি: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:35 PM Aug 19, 2016Updated: 03:35 PM Aug 05, 2019

‘সাহেব বিবি গোলাম’-এর জয়া কুণ্ঠাহীন৷ এমন সাহসী চরিত্রে স্বস্তিকাকে আগে দেখা যায়নি৷ নতুন ছবি, নতুন চ্যালেঞ্জ, মুম্বইয়ের স্ট্রাগল, শরীর ও নীতিবোধ– সবকিছু নিয়ে খোলামেলা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

সংবাদ প্রতিদিন: ‘সাহেব বিবি গোলাম’ মুক্তি পাচ্ছে পরের শুক্রবার, ২৬ আগস্ট৷ পরিচালক প্রতীম ডি. গুপ্ত৷ ছবি তৈরির শুরু থেকেই, এমনকী সেন্সর-এর সময়ও আপনার চরিত্রটা নিয়েই বিতর্ক শুরু৷
স্বস্তিকা: হ্যাঁ, আমি যাই করি সেটা যেন সমাজের চোখে দেখা যায় না টাইপের হয়ে যায়৷ প্রতীম আর আমি যখন চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করছি তখনই আমি বলেছিলাম, খুব ইন্টারেস্টিং স্ক্রিপ্টটা৷ ছবিটাও করতে চাই৷ কিন্তু মনে হচ্ছে রিলিজের সময় আমিই বাদ চলে যাব৷

সংবাদ প্রতিদিন: আর সেন্সর-এর সময় ঠিক সেটাই হতে যাচ্ছিল!
স্বস্তিকা: একদম তাই৷ তখন আমরা ইয়ার্কি মারছিলাম কিন্তু আর একটু হলে সেটাই সত্যি হতে যাচ্ছিল৷ শুটিং-এর সময়ও মনে হয়েছিল কাঁচি হয়ে যাব পুরো৷ এত বড় যুদ্ধের পর ভাল লাগছে যে ‘জয়া’ চরিত্রটা একদম যা ছিল তাই আছে৷ গোটাটাই দর্শকের সামনে আসবে৷

সংবাদ প্রতিদিন: ‘সাহেব বিবি গোলাম’ শুনলে কিন্তু আগের ছবিটার কথা মনে হয়…
স্বস্তিকা: না, না৷ আগের ছবিটার সঙ্গে কোনও মিল নেই৷ এমনকী বইয়ের সঙ্গেও না৷ আমাদের তিনটে চরিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে নতুন করে চরিত্রের ধরন অনুযায়ী৷ এটা থ্রিলার ছবি৷ ‘সাহেব’ অর্থাৎ জিমি মানে অঞ্জন দত্ত (কন্ট্র্যাক্ট কিলার)৷ আর ‘গোলাম’ জাভেদ হল ট্যাক্সি ড্রাইভার ঋত্বিক (লাভার)৷ আর আমি হলাম ‘বিবি’ জয়া৷ আমার গল্পটা এমন একজন গৃহবধূর যে স্বামীর ওপর নির্ভর করে৷ সেখান থেকে তার নিজের মুক্তির কাহিনি৷ চরিত্রটা লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে যায় কারণ বিবির কোনও গিল্ট ট্রিপ নেই৷ ছবিতে আমরা যাই দেখাই না কেন, সব সময় শেষে গিয়ে সরি ফিলিংস চলে আসে৷ সমাজের নিয়মের বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করলেই, ছবিতে সেটা দেখানো হয় যখন, শেষে গিয়ে তাকে সরি চাইতে হয়৷ ভুল করেছি৷ ক্ষমা করে দাও৷ বাড়িতে আবার আশ্রয় দাও৷ আমি তোমার সন্তানের মা৷ এইসব আর কী! কিন্তু জয়ার ক্ষেত্রে অন্যরকম৷ এখানে অপরাধবোধের জায়গা নেই৷ এটা এমন একজন মহিলার গল্প সে কী করতে চায় তার শরীর নিয়ে, তার মন নিয়ে, সেটা তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার৷ তার চেতনা, তার ফ্যান্টাসি সবকিছুর নিয়ন্ত্রক সে নিজেই৷ শি ওয়ান্টস টু কল দ্য শট৷ শি হ্যাজ দ্য পাওয়ার ওভার হারসেলফ৷ জয়া যা করে সজ্ঞানে করে এবং যা করেছি বেশ করেছি বলতে পারে৷ যেটা আমার নিজেরও প্রিয় লাইন৷

সংবাদ প্রতিদিন: খুব সাহসী বিষয়৷ একজন গৃহবধূ পরিস্থিতির চাপে এ লেভেল এসকর্ট হয়ে দেখা দিল…
স্বস্তিকা: গণ্ডি ভেঙে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় আমরা কেউ সফল হই, কেউ হই না৷ কেউ অনেক যুদ্ধ করেও পারি না৷ কারণ ব্যাগেজ থাকে, সমাজ, সংসার, সন্তান, বাবা-মা ইত্যাদি৷ অনেকে নিজে লড়াই করতে গিয়েও পৃথিবীর কারও কাছে সমর্থন পায় না৷ কিন্তু সব চাওয়ার, সব কিছু ভেঙে বেরিয়ে আসার একটা ট্রিগার পয়েন্ট থাকে৷ কিছু একটা লাইফে হয় যেটা তাকে পুশ করে৷ যখন একবার বেরিয়ে যায় সব ভেঙে ট্রিগার পয়েন্টটা গৌণ হয়ে যায়৷ ওটা তখন ইমমেটেরিয়াল৷ বেরনোটাই আসল হয়ে যায়৷ কারণটা পিছনে চলে যায়৷ এই ছবিটা সেই বিষয়টা সেলিব্রেট করে৷ আমি ভুল করেছি, আমাকে ফেরত নাও, এগুলো কোথাও বলা হয় না সিনেমায়৷ সেই কারণে একজন অ্যাক্টর-এর পক্ষে এই ছবিটা খুব ডিফিকাল্ট৷ কারণ জানি কোনও অসহায়তার পিছনে লুকানোর জায়গা নেই৷ অ্যাটিটিউডটা এরকম যে, এটা করেছি, কারণ করতে চাই৷ এটাই শেষ কথা৷ যে সময়টার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সেখানে একদিকে আরএসএস-এর হম্বিতম্বি! সেটা গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে হোক, সেন্সর বোর্ড-এর বাড়াবাড়ি হোক, মেয়েদের হাফপ্যান্ট পরা কিংবা মেয়েদের সিগারেট খাওয়া নিয়েই হোক– সব কিছুতেই নিষেধাজ্ঞা ছড়ানোর চেষ্টা৷ প্রি-হিস্টোরিক যুগে আমরা রয়েছি যেন৷ এমনকী মন্দিরে ঢোকা নিয়েও অনেক বাধা-নিষেধ৷ আর শরীর নিয়ে মেয়েদের কথা বলা তো আরও সাংঘাতিক৷ যে মেয়ে নিজের শরীর বা শরীরের ইচ্ছা নিয়ে সরবে বলছে, তাকে তখনই ধরে নেওয়া হয় যে তুমি নষ্টামির চুড়োয় বিচরণ করছ৷ অথচ ছেলেদের জন্য কোথাও এই বারণগুলো নেই৷ আমার প্রশ্ন, শুধু মেয়েদেরই বিরু‌দ্ধে কেন কুৎসা করা হয়? সেক্স নিয়ে এত রাখঢাক, অথচ এখনও মানুষের প্রধান কৌতূহল যে কোনও মানুষের যৌন জীবন! গসিপের একনম্বর বিষয় কে কার সঙ্গে শুচ্ছে! কেউ যদি বলে আই লাভ হ্যাভিং সেক্স, সে নষ্ট মেয়েদের কোটায় পড়বে কেন? এই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিটা কী করে কাউকে খারাপ মানুষ প্রতিপন্ন করে?

সংবাদ প্রতিদিন: সেন্সর-এর তো প্রবল আপত্তি ছিল আরও অনেক কিছু নিয়েও?
স্বস্তিকা: আমার চরিত্রটা নিয়ে তো বিশাল আপত্তি ছিলই! এছাড়া সেন্সর-এর বক্তব্য ছিল বিবাহিত মহিলার চার-পাঁচটা অ্যাফেয়ার থাকতে পারে কিন্তু সে নিজের ইচ্ছেয় শোবে কেন! কারণ অ্যাফেয়ার-এর মধ্যে একটা ব্যাগেজ আছে৷ বাইরে প্রেম করলে সংসারে এসে তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে৷ স্বামী, প্রেমিক ব্যালেন্স করতে হবে৷ সেই সব না করে একজন নারী চরিত্র যদি নিজের সেক্সুয়াল আর্জ-এর জন্য তার যা মনে হচ্ছে, সেটাই করছে- তেমনটা হলে ঘোর আপত্তি৷ হ্যাঁ, আমার চরিত্রের বাইরেও (পার্নোর) একটা রেপ সিন ছিল সেটা ছোট করতে বলা হয়েছিল৷ আরে ধর্ষণ তো, আরামদায়ক দেখানো যেতে পারে না৷ এটা সামাজিক বাস্তব৷ যা তুমি সিনেমায় দেখাবে, সেটা তো বাস্তবের থেকে আলাদা হতে পারে না৷ সব কোপ সিনেমায় পড়বে কেন? সিগারেট এমনি খেলে অসুবিধে নেই৷ কিন্তু সিনেমার বেলায় সারাক্ষণ সতর্কবাণী দিয়ে যেতে হবে৷ অথচ অনেক বোকা সিনেমার ক্ষেত্রে সেন্সর কিছুই করে না৷ যেমন ‘গ্রেট গ্র্যান্ড মস্তি’৷ এত অশ্লীল ছবি ভাবা যায় না৷ কিন্তু একটু ইন্টেলেকচুয়াল সিনেমার ক্ষেত্রে সেন্সর ভয় পায়৷ ভাবে সবাই যদি সব কিছু বুঝে যায়! সকলেই আসলে এই গিল্ট ট্রিপটা দেখতে চায়৷ মেয়েরা বেশ কাঁদবে, ক্ষমা চাইবে৷ আমার প্রশ্ন, কাঁদতে হবে কেন? আমার ইচ্ছে, আমার দায়িত্ব, আমার পয়সা, আমার শরীর৷ এইভাবেই ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এ জয়ার চরিত্রটা দেখানো হয়েছে৷ আন-অ্যাপোলজিটিক৷

সংবাদ প্রতিদিন: আপনি ছাড়াও অঞ্জন দত্ত, ঋত্বিক গুরুত্বপূর্ণ রোল-এ৷ এছাড়া পার্নোও আছেন?
স্বস্তিকা: অঞ্জনদার সঙ্গে আমার ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা৷ ‘গোলাম’ ঋত্বিক-এর সঙ্গে অন্য ইকুয়েশন৷ ঋত্বিক এমন ট্যাক্সি চালাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সারাজীবন ধরে শুধু ট্যাক্সি চালিয়ে এসেছে৷ এত কনভিনসিং অভিনয় করে!

সংবাদ প্রতিদিন: ‘টেক ওয়ান’-এর সঙ্গে এই সিনেমার কোনও মিল পাব?
স্বস্তিকা: না৷ এখানে কোনও ডিপ্রেশন নেই৷ পাওয়ার ট্রিপ আছে, সেলিব্রেশন আছে৷ আমিই হুকুম করব৷ খুব কষ্ট করে এই ছবিটা শুট করেছি৷ আর একজন নির্দয় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি৷ (হাসি) প্রতীম সারা শীতকাল খাটিয়েছে আমাদের৷ প্রচণ্ড ঠান্ডায় আমাকে দিয়ে বেলি ডান্স করিয়েছে৷ আমি সুদর্শনের কাছে দু’সপ্তাহ ক্লাস করেছিলাম৷ এসব আমাকে দিয়ে করাচ্ছে যখন, আমি বলে দিয়েছিলাম লোকে আমাকে মারবে৷ কিন্তু দিনে প্রায় কুড়ি ঘণ্টা কাজ করেছি৷ শুটিং-এ অত লোকের সামনে সমস্ত সংকোচ ঝেড়ে ডান্স করেছি৷ যা কোনওদিন ভাবতেও পারিনি৷ ইনহিবিশনস ঝেড়েছি, কষ্ট করেছি দর্শকের কাছে পৌঁছব বলেই৷ শেষপর্যন্ত সেন্সর কোনও কাট ছাড়া ছাড় দিয়েছে এটাই আমাদের আনন্দ৷

সংবাদ প্রতিদিন: মুম্বই-কলকাতা করছেন বেশ৷ পাকাপাকি প্ল্যান কী?
স্বস্তিকা: বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে ওখানে গিয়ে থাকতে পারব না৷ কারণ এখানে আমার বাড়ি৷ কিন্তু যাওয়া-আসাটা এখন লেগেই থাকবে৷ শেষপর্যন্ত আমি ভাল কাজ করতে চাই৷ মুম্বইয়ে আমি এখন স্ট্রাগলার৷ সাধারণ মানুষের জীবনটা এনজয় করছি৷ এমন কাজ করব যেটায় দর্শক আমাকে ছাড়া কাউকে দেখবে না৷ হ্যাঁ, ওখানে বেশ কিছু জায়গায় অডিশন দিচ্ছি৷ নতুন শুরু বলা যায়৷

সংবাদ প্রতিদিন: বাংলায় আর কী কী ছবি আসছে আপনার?
স্বস্তিকা: ‘ব্রেকিং নিউজ’ আসবে৷ ‘কিরীটী’ করলাম৷ আর কিছু দিন আগে সদ্য ‘অসমাপ্ত’র কাজ শেষ করেছি৷

(সাক্ষাৎকার: শম্পালী মৌলিক)

The post যা করেছি, বেশ করেছি: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement