অর্ণব আইচ: মদ্যপানের ‘ডবল ডোজ’। আর তাতেই যাদবপুরে ঘটে বিপত্তি। বর্ষবরণের আনন্দে গড়িয়াহাট অঞ্চলের একটি পানশালায় মদ্যপান করে আসার পর ফের ছাদে বসে স্বামী-স্ত্রীর মদ্যপান। হুইস্কির পর ‘রাম’-এর ককটেল। প্রচণ্ড নেশার ঘোরে ছাদের একপাশে থাকা আয়তাকার গর্ত থেকে নিচে পড়ে যান গৃহবধূ সুইটি সূত্রধর। বর্ষবরণের রাতে যাদবপুরের পোদ্দারনগরে গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এসেছে একের পর এক তথ্য।
বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন যে, দেহের একপাশে বেশি চোট রয়েছে। পেটে প্রচুর মদ পাওয়া গিয়েছে। দেহটি পর্যবেক্ষণ করে পুলিশের মতামত, উপর থেকে পড়েই মৃত্যু হয়েছে যুবতীর। দুর্ঘটনাবশত যুবতী উপর থেকে পড়ে গিয়েছেন, এমন ইঙ্গিতই মিলেছে ময়নাতদন্তে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক মতামত অনুযায়ী, পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে মহিলার। মৃত্যুর সময় তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাই দেওয়ালে পাওয়া গিয়েছে নখের দাগও। সেই কারণে দুর্ঘটনার তত্ত্বই জোরালো হচ্ছে। জেরা করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মৃত সুইটির স্বামী কুন্তল আচার্যকে।
লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটি সাজিয়ে দেখা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বছরের শেষ দিনটিতে কুন্তল ও সুইটি একসঙ্গে গড়িয়াহাটের একটি পানশালায় গিয়ে পাঁচ পেগ করে হুইস্কি খান। সঙ্গে খাবার নিয়ে আসেন। কিন্তু খাবার না খেয়ে রাতে ছাদে ওঠেন দম্পতি। পাশের বাড়ির লাগোয়া ছাদে বর্ষবরণের উৎসব পালন করছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু মদ্যপান করছিলেন না তাঁরা। ছাদে উঠে কোনও পরিচিতকে ফোন করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন সুইটি। বলছিলেন, তাঁর ও কুন্তলের বিয়ে অভিভাবকরা মেনে নেননি, সেই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। পাশের বাড়ির বাসিন্দারা তাঁদের বর্ষবরণের উৎসবে যোগ দিতে বলেন। দম্পতি চারতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে রামের বোতল নিয়ে আসেন। দুই বাড়ির একই ছাদের মাঝখানে থাকা আড়াই ফুট পাঁচিল পেরিয়ে অন্য ছাদে যান। সেখানে দম্পতি মিলে ফের মদ্যপান করেন। এমনই অবস্থা হয় যে, কুন্তলের নড়ার ক্ষমতা ছিল না। তাঁকে বাড়ির বাসিন্দারা তাঁদের ফ্ল্যাটে নামিয়ে আনেন। স্ত্রী সুইটিও নেমে এসেছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ফের তিনি একাই উঠে পড়েন ছাদে। একই সময়ে বাড়ির বাসিন্দারা ছাদ থেকে নেমে যান। সুইটিকে কেউ পড়ে যেতে দেখেননি।
[আরও পড়ুন: CAA বিরোধিতার জের, খাস কলকাতায় ‘হিন্দুত্ববাদী’ প্রতিবেশীর হামলার শিকার পরিচালক]
কিন্তু পুলিশের ধারণা, তিনি আয়তাকার খোলা চৌবাচ্চার পাঁচিলে বসতে গিয়ে অথবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। আবার তাঁর মোবাইল নিচে পড়ে যাচ্ছিল, সেটি ধরার জন্য পড়ে গিয়েছিলেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে রহস্য। রাত দু’টোর পর এলাকার বাসিন্দারা গোঙানির শব্দ পেয়ে ১০০ ডায়ালে ফোন করেন। যাদবপুর থানার অফিসাররা বাড়ি বাড়ি যান। কিন্তু কুন্তলের ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তাই পুলিশ ফিরেও যায়। কুন্তল সকালে উঠে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে যাদবপুর থানায় যান। তিনি যখন থানায়, তখন এলাকার বাসিন্দারা সুইটির দেহটি দুই বাড়ির মাঝখানে অপরিসর গলিতে পড়ে থাকতে দেখেন।
The post হুইস্কি-রামের ককটেলের ডবল ডোজে বেসামাল, যাদবপুরের বধূমৃত্যুতে জোরাল দুর্ঘটনার তত্ত্ব appeared first on Sangbad Pratidin.