কলহার মুখোপাধ্যায়: কথায় বলে পড়াশোনা করলে গাড়ি-বাড়ি হয়। নিউটাউনে বিষয়টা উলটো। এখানে কেউ বাড়ি করলে অন্য লোকের গাড়ি হয় বলে চলতি একটা ঠাট্টা রয়েছে। সিন্ডিকেটের মহিমাকে কটাক্ষ করে ভুক্তভোগীরা এরকমটা বলে থাকেন। সম্ভবত রাজ্যের এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে ভোটের পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হয় সিন্ডিকেটের অঙ্গুলিহেলনে।
এই রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্র বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এই বিধানসভার বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তিনি বিধাননগরের মেয়রও বটে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে সাড়ে ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটে নিউটাউন বিধানসভা থেকে জিতে এসেছিলেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেছেন, “এখানে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়কালে এই অঞ্চল দুষ্কৃতীমুক্ত হয়েছে।” ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নিউটাউন থেকে জিতেছিলেন সব্যসাচী দত্ত। জয়ের মার্জিন ছিল ৯ হাজারেরও বেশি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। বিজেপি তৃতীয় হয়েছিল। এবার রাজনীতির গতিপ্রকৃতির পথেই বিজেপি অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সিটের লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে মূলত তাদেরই। নিউটাউনের বাসিন্দারা বলেন, এখানে সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। তাদের ঠিক করে দেওয়া পথে হেঁটেই ভোট বাক্সে গিয়ে পড়ে। সেই সিন্ডিকেট এই ভোটে কি নির্দেশ দিয়েছে? নিউটাউনের বিস্তীর্ণ এলাকায় সিন্ডিকেটের চেনা মুখগুলোকে প্রায় খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রচারের জৌলুসও তুলনায় কম। কারণ? সিন্ডিকেটের মাঝারি স্তরের এক মাথা জানালেন, কারণ বুঝলেন না! কারণ হচ্ছে লুচি আলুর দম।
ভোট প্রাক্কালে নিউটাউনের বিধায়ক তথা ওই অঞ্চলের অবিসংবাদী নেতা সব্যসাচী দত্তর বাড়িতে লুচি-আলুর দম খেতে আসেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। এবং তারপর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে জোর আলোচনা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন সব্যসাচী। যদিও প্রকাশ্যে সেই জল্পনা উড়িয়েছেন সব্য। কিন্তু অলোচনায় ইতি টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। নিউটাউনের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে নিউটাউনের বিধায়কের অনুপস্থিতি চোখে পরছে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে বিজেপিরও উৎসাহ চোখে পরছে। বিজেপির এক নেতা বলেছেন, বিরোধীদের মধ্যে ভাঙন ধরলে আমাদের সুবিধা তো হবেই। বারাসতের লোকসভার প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথ সরাসরি না বললেও ইঙ্গিতে বলেছেন, “বিরোধীদের যে কোনও দুর্বলতার সুযোগ তো আমরা নেবই।”
এই এলাকার ভোট সামলাতে পুরো দায়িত্ব এবার নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিধাননগর পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র। নিউটাউনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারসভা থেকে যাবতীয় কিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাহলে সিন্ডিকেট কী করছে? রাজনৈতিক দলগুলির স্থানীয় নেতারা বলছেন, এই মূহূর্তে প্রায় অভিভাবকহীন হয়ে অবস্থা সিন্ডিকেটের। এই চক্রের তাবড় মাথারা বসেই গিয়েছেন প্রায়। ভোটের সময় যাদের অহরহ দেখা যেত তারা যেন শীতঘুমে চলে গিয়েছেন। এই ভোটে তাহলে সিন্ডিকেটকে দেখা যাবে না? সিপিএমের স্থানীয় এক নেতা বলছেন, সেটা বোঝা যাবে ভোটের দিন। সিন্ডিকেটের মাথারা ভোটের দিন আদৌ কোনও কাজ করবে? করলে কার হয়ে করবে সেটাই লক্ষণীয় বিষয়। জমি মাফিয়াদের ভোট কার ঝুলিতে যায় সেটাও দেখতে হবে। নিউটাউনের ভোটে এটাই এখন এক্স ফ্যাক্টর।
The post সিন্ডিকেটই ভোটের বড় ফ্যাক্টর নিউটাউনে appeared first on Sangbad Pratidin.