রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: টুইটারে কিছু নেই। ইনস্টাগ্রামে গত জানুয়ারি মাসে আছে একটা পোস্ট, তবে স্ট্রবেরি চাষবাস নিয়ে! ক্রিকেটীয় পোস্ট বলতে সেই ১৫ আগস্ট, ২০২০। ব্যাকড্রপে মুকেশের গান আর বিদায়ী চারটে লাইন, থ্যাঙ্কস আ লট ফর ইওর লাভ অ্যান্ড সাপোর্ট থ্রু আউট। ফ্রম ১৯২৯ আওয়ার্স কনসিডার মি অ্যাজ রিটায়ার্ড..।
আর পাঁচজন ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে ঘটলে অবশ্যই আশ্চর্য লাগত। কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) ক্ষেত্রে লাগে না। যে ভদ্রলোক ষোলো বছরের ঝকঝকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে যতিচিহ্ন দিয়ে দিতে পারেন মাত্র চারটে লাইন আর একটা গান দিয়ে, এক বছর পর তিনি বিশ্বকাপে ভারতীয় টিমের ‘মেন্টর’ রূপে অবতরণের দিন মুক্তকচ্ছ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বল্গাহীন হবেন, ভাবাটাই অন্যায়। রাত সাড়ে ন’টায় ভারতীয় বোর্ড গোটা ক্রিকেটপৃথিবীকে বাকরুদ্ধ করে আরব আমিরশাহীতে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T-20 World Cup) ধোনির নাম ভারতীয় টিমের মেন্টর হিসেবে ঘোষণা করার পর দেখা গেল, চতুর্দিকে আবেগের প্রপাত নেমেছে! টুইটারে মুহূর্তে ট্রেন্ডিং হয়ে গেলেন। ক্রিকেট সমর্থকরা আত্মহারা হয়ে লিখে দিলেন যে, বিশ্বকাপের টিম কী হল না হল, কিছু যায় আসে না। ধোনি এসেছেন, এটাই অনেক, এটাই যথেষ্ট! কাউকে কাউকে আবার দেখা গেল, সোজা ধোনির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে হানা দিতে, অবসরের পোস্টে সযত্নে ‘মেন্টর মাহি’ লিখে দিতে! আবেগের এ হেন পাগলাটে স্রোত দেখলে সময় সময় মনে হবে, ক্রিকেটার নয়, কোনও ‘জননেতার’ প্রত্যাবর্তন ঘটেছে বুঝি। কিন্তু মুশকিল হল, এত সব বলে লাভ? বছর চল্লিশের সাদা চুলের ভদ্রলোক তো একই রকম নীরব, মগ্নমৈনাক!
[আরও পড়ুন: T20 World Cup: টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ভারতীয় দল, নতুন ভূমিকায় টিম ইন্ডিয়ায় ফিরছেন ধোনি]
শোনা গেল, ভারতীয় বোর্ড (BCCI) সচিব জয় শাহ-র সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পরই মেন্টর ধোনির আবির্ভাব। কেউ কেউ বললেন যে, বোর্ড সরকারিভাবে কিছু না বললেও দেওয়াল লিখনটা পরিষ্কার, বিশ্বকাপ-যজ্ঞে বর্তমান ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের উপর যথেষ্ট আস্থা নেই বোর্ডের। বোর্ডের মনে হয়েছে, ধোনিকে দরকার। তাঁর মগজাস্ত্রকে দরকার। দরকার তাঁর বিচক্ষণতাকে। এবং নামেই ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মেন্টর হচ্ছেন। বোর্ডের কাউকে কাউকে ফোন করে জানা গেল, মেন্টর নন, আদতে নাকি সুপার কোচ হচ্ছেন ধোনি! বকলমে টিমের সর্বেসর্বা।
শোনা গেল, বিশ্বকাপের টিমে যেহেতু বেশ কয়েক জন জুনিয়রকে নেওয়া হয়েছে, মনে করা হচ্ছে, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী, তাঁদের গ্রুমিংয়ের প্রয়োজন আছে। বলা হচ্ছে, ধোনির চেয়ে সেটা ভাল আর কে করতে পারবেন? কে বলে দিতে পারবেন, ম্যাচের কোন মুহূর্তে কী করা উচিত? এটা ঘটনা যে, কুলদীপ যাদবের মতো কেউ কেউ আজও আক্ষেপ করেন, স্টাম্পের পিছনে ধোনি থাকা না থাকায় কতটা যে তফাত হয়ে যায়, সেটা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, এত বিশাল অভিজ্ঞতা ধোনির। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে গুলে খেয়েছেন। ম্যাচ রিডিং অতুলনীয়। বিশ্বকাপে তাঁর চেয়ে বড় ‘অভিভাবক’ আর কেউ হতে পারতেন না। টিমকে ভোকাল টনিক দেওয়া থেকে শুরু করে, পিচ বুঝে স্ট্র্যাটেজি তৈরি, সিচুয়েশন রিডিং– সবেতেই নাকি থাকবেন ধোনি, সবেতেই গুরুত্ব পাবে তাঁর মতামত। সরাসরি বললে, যে কাজটা বছর দেড়েক আগেও স্টাম্পের পিছনে করতেন ধোনি, এবার সেটাই করবেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্র্যাকটিসে। ড্রেসিংরুমে বসে। সুপার কোচের মতো।
[আরও পড়ুন: T-20 World Cup থেকে কেন বাদ চাহাল-ধাওয়ান? দল নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন সমর্থকদের]
অতঃকিম? রাতের দিকে কোনও কোনও ভারতীয় ক্রিকেট-সোৎসাহীদের দেখা গেল, দেদার আলোচনা চালাচ্ছেন যে এরপর ধোনিই ভারতীয় টিমের কোচ হবেন কি না? বিশ্বকাপের পর রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri) হেড কোচ আর থাকবেন কি না, তা নিয়ে একটা জল্পনা তো আছেই। কিন্তু আপাতত যতটুকু যা খবর, ধোনির এখনই কোচিংয়ে আসার সম্ভাবনা কম। কিন্তু সে সব ভবিষ্যতের ব্যাপার। এখন যা হয়েছে, সেটাও বা কম কী? সিটবেল্ট বাঁধো ভারত, তৈরি হও। মাহি আ রহা হ্যায়!