দেবাশিস সেন, দুবাই: রবিবার টি টোয়েন্টি (ICC T20 World Cup) বিশ্বকাপের সবথেকে বিস্ফোরক ম্যাচ। ভারতের সামনে পাকিস্তান (India vs Pakistan)। উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। দু’ দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা তাঁদের অভিজ্ঞতার ঝাঁপি তুলে ধরছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই ম্যাচ জেতার রহস্য কী? পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার মুদাস্সর নজর (Mudassar Nazar) সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলছেন, নির্দিষ্ট দিন যে দল নার্ভ ধরে রাখতে পারবে, শেষ হাসি তোলা থাকবে সেই দলের জন্য। তাছাড়া পার্টনারশিপ এবং ব্যক্তিগত দক্ষতাও ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে বলে মনে করেন মুদাস্সর।
এখনও পর্যন্ত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই প্রতিবেশী দেশ পাঁচ বার মুখোমুখি হয়েছে। আর প্রতিবারই পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। এবার কি ইতিহাসের চাকা ঘুরবে? মুদাস্সর বলছেন, ”পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের পারফরম্যান্স খুবই ভাল। সম্প্রতি আমিরশাহীতে আইপিএল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের সবাই খেলার মধ্যেই রয়েছে। কাগজে কলমে এই ভারত অনেক শক্তিশালী, তা বলতেই হবে। তবে ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা আমার মনে পড়ছে। সেবার ফাইনালে ভারতের ভাগ্য ভাল ছিল না। টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠায় ভারত। তার মূল্য চোকাতে হয়েছিল বিরাটদের। এবার প্রায় মাসখানেকের কাছাকাছি আমিরশাহীতে ছিল ভারত। এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে একপ্রকার মানিয়েই নিয়েছে বিরাটরা। এখানকার পরিবেশ পাকিস্তানেরও চেনা। ফলে দারুণ একটা ম্যাচ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। এ ম্যাচে যে দলই হারুক, এখানেই সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে না। সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ থাকছে দু’ দলের কাছেই। আশা করব টুর্নামেন্টে ফের দেখা হবে দু’ দলের।”
[আরও পড়ুন: T20 WC 2021: টি-২০ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ছিটকে গিয়েছেন নামী তারকা, কীভাবে সাজছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ?]
এই পাকিস্তান বাবর আজম এবং মহম্মদ ইরফানের উপরে বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। এই অতিরিক্ত নির্ভরতা আবার ভোগাবে না তো? প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার বলছেন, ”মিডল অর্ডার ওদের দু’জনের উপর নির্ভর করছে। তবে বিশ্বকাপ সব অর্থেই কঠিন। সেখানে কেবল দু’ জনের পারফরম্যান্সের উপরে নির্ভর করে থাকলে চলবে না। সবাইকেই ভাল খেলতে হবে। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য পাকিস্তান যে দল প্রথমে বেছে নিয়েছিল, এই দল আগের থেকে অনেক শক্তিশালী।”
শোয়েব মালিক ও মহম্মদ হাফিজের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে নিয়েই আমিরশাহী এসেছে পাকিস্তান। তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলেই মনে করেন মুদাস্সর নজর, ”মিডল অর্ডারে উইকেট গেলে ওরা এসে হাল ধরতে পারবে।” বোলিং বিভাগে চিরকালই শক্তিশালী পাকিস্তান। এবারের দলে রয়েছেন শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলির মতো পেসার। মুদাস্সর মনে করেন, শিশির না পড়লে রিভার্স সুইং করাতে পারবেন পাক পেসাররা। আর রিভার্স সুইং শুরু হলে দ্রুত রান তোলা কঠিন হয়ে ওঠে ব্যাটারদের কাছে। মুদাস্সর আরও বলেন, ”পাক বোলারদের বৈচিত্র্য রয়েছে। ওরা স্লোয়ার দিতে পারে, ইয়র্কার দিতে পারে, ইনিংসের মাঝামাঝি উইকেট তুলে নিতেও দক্ষ, বাউন্সার দিতে পারে, সেই সঙ্গে রয়েছে রিভার্স সুইং। বিশেষ করে হাসান আলি সেকেন্ড স্পেলে ভয়ংকর।” ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে তিন-তিনটি উইকেট নিয়েছিলেন এই হাসান আলিই। ভারতও অসহায় আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানের কাছে।
এক সাক্ষাৎকারে বিরাটের থেকে রোহিতকে এগিয়ে রেখেছেন মুদাস্সর নজর। সেই ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, ”সাম্প্রতিক রেকর্ডের নিরিখে বিচার করলে বিরাটের থেকে রোহিত অনেকটাই এগিয়ে। চলতে শুরু করলে রোহিত খুবই বিপজ্জনক। যেহেতু ওপেন করতে নামে তাই বেশি বল খেলার সুযোগ পায় রোহিত। বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা ধরে। তার মানে এই নয় যে বিরাটকে আমি পিছিয়ে রাখছি। বছর দুয়েক আগে বিরাটও দুর্দান্ত ফর্মে ছিল। একসময়ে তো মনেই হয়েছিল শচীনের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে বিরাট। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তা আর সম্ভব নয়। তবে এমনও হতে পারে এবারের টুর্নামেন্ট দুরন্ত পারফরম্যান্স তুলে ধরল কোহলি।”
ব্যাটিংয়ের মতো ভারতের বোলিংয়েও বৈচিত্র্য রয়েছে বলে মনে করেন মুদাস্সর। তিনি বলছেন, ”বুমরা দুর্দান্ত। ইয়র্কার, বাউন্সার, পেস, রিভার্স সুইংয়ে দারুণ দক্ষ। বেশ কয়েকজন ভাল মানের স্পিনার রয়েছে। বৈচিত্র্য রয়েছে ভারতের বোলিং বিভাগে।”
মেগা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই বাবর আজমকে নিয়ে প্রত্যাশার চাপ বাড়ছে পাকিস্তানে। এই অতিরিক্ত চাপ পাক অধিনায়কের খেলায় প্রভাব ফেলবে না তো? প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার বলছেন, ”নেতা হিসেবে বাবর আজমের এটাই প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট। প্রেশার সব সময়েই থাকে। সে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হোক বা বিশ্বকাপ। চাপ নিয়েই খেলতে হবে। জুনিয়র দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে বাবর আজম। যত দিন যাচ্ছে ততই উন্নতি করছে। ১৮ মাস আগের বাবর আজম আর আজকের বাবর আজমের মধ্যে অনেক পার্থক্য।” এখন শুধু মাঠে নেমে পড়ার অপেক্ষা। প্রথম ম্যাচেই যে বাবর আজমের অগ্নিপরীক্ষা।
দেখুন ভিডিও: