সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এই দিনটা দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিল গোটা ভারতবর্ষ। বাকি দল তো বটেই, রোহিত-বিরাটের হাতে বিশ্বকাপ। দুজনের হাতেই একটা করে ট্রফি দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। কিন্তু পড়ন্তবেলায় কি রাজার বেশে বিদায় নেবেন না দুজনে? সেই স্বপ্নপূরণ হল অবশেষে। জয়ী হয়েই টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় ঘোষণা বিরাট- রোহিতের। আর কোনও দিন দেশের হয়ে কুড়ি-কুড়ির ম্যাচে নামবেন না দুজনে। শুধু থেকে যাবে অসংখ্য স্মৃতি, অসংখ্য স্বপ্নের মুহূর্ত। জয়ের আনন্দের মধ্যেও বাজছে বিদায়ের মূর্ছনা।
ভারতীয় ক্রিকেটে কিংবদন্তির অভাব নেই। যুগের পর যুগ কেটেছে। নায়কের আসন কখনও শূন্য থাকেনি। সারা দেশ মেতেছে বীরবন্দনায়। আবার সময়ের স্রোত বেয়ে 'প্রাক্তন' তকমা জুড়েছে তাঁদের নামের আগে। সেরকমই এক যুগের সন্ধিক্ষণে ফের দাঁড়িয়ে ভারতের ক্রিকেটভক্তরা।
মনে পড়তে পারে, শচীনের অবসরের মূহূর্ত। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেদিন প্রত্যেকের চোখে জল, কেঁদেছিল গোটা দেশ। না, রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) আর বিরাট কোহলি (Virat Kohli) সে জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। এখনও অনেকদিন তাঁরা মুগ্ধ করবেন ক্রিকেটবিশ্বকে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আর কখনও দেখা যাবে তাঁদের। পরের মেগা টুর্নামেন্ট দেশের মাটিতে। যদিও শ্রীলঙ্কাও রয়েছে আয়োজক দেশ হিসেবে। ২০২৬ সালে রোহিতের বয়স দাঁড়াবে ৩৯। আর বিরাটের ৩৭। ফর্ম, ফিটনেসের যদি-কিন্তু পেরিয়েও তাঁরা যে ফের দেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T20 World Cup Final 2024) নামবেন না, সেটা আজই পরিষ্কার হয়ে গেল। প্রথমে বিদায় জানালেন কিং কোহলি, সেই ধাক্কার কিছুক্ষণ পরেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর হিটম্যানের।
[আরও পড়ুন: মানুষ পাঠানোর আগে চাঁদ থেকে আনা হবে পাথর, নয়া অভিযান ঘোষণা ইসরোর]
ক্রিকেটভক্তরা তৈরি ছিলেন না এটার জন্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একের পর এক দুরন্ত ইনিংস, ম্যাচ জেতানো হুঙ্কার আর দেখা যাবে না। স্মৃতির সরণী বেয়ে পিছনে চলে যাওয়া যেতে পারে ২০২২-র বিশ্বকাপে। ৩১/৪ হয়ে গিয়ে হারতে থাকা ম্যাচকে প্রায় একার হাতে জিতিয়েছিলেন বিরাট। বিশ্বকাপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইনিংস বললেও ভুল বলা হয় না। ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা যায় হ্যারিস রউফের বলে ব্যাক ফুটে লং অফে ছয়ের মুহূর্ত। তার আগে ২০১৬ সাল ছিল টি-টোয়েন্টিতে তাঁর স্বপ্নের বছর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫১ বলে ৮২ করে ভারতকে (India Cricket Team) জয় এনে দিয়েছিলেন। মনে পড়তে পারে ২০১৪-র বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪২ বলে ৭৪ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস। আর এবার সেভাবে ফর্মে ছিলেন না। কিন্তু সঠিক সময়ে জ্বলে উঠলেন। ফাইনালে করলেন ৭৬ রান।
আর হিটম্যান? রেকর্ডের পাহাড় তৈরি করা যাঁর নিয়মিত কাজ। একেবারে গোড়া থেকেই শুরু করা যাক। ২০০৭-র বিশ্বকাপে ৪০ বলে ৫০ রান করেছিলেন প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে। সেই শুরু। তার পর প্রতিটা বিশ্বকাপেই একের পর এক অসাধারণ ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। ২০২১-এ আফগানিস্তানের সঙ্গে ৪৭ বলে করেছিলেন ৭৪ রান। কে ভুলতে পারে ২০১০-এ অস্ট্রেলিয়ার সামনে তাঁর মরিয়া লড়াই। ৪৬ বলে ৭৯ রান করেও ম্যাচ জেতাতে পারেননি রোহিত। আর চলতি বিশ্বকাপে যেন সবকিছুর 'বদলা' নিলেন। সুপার এইটে সেই অস্ট্রেলিয়াকেই হারালেন। ৪১ বলে ৯২ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দিলেন। এতো শুধু বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান। সার্বিক হিসেব-নিকেশ ধরলে আকাশ ছুঁয়ে ফেলবেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: ভুয়ো ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়া! মুম্বই পুলিশের জালে চক্রের পাণ্ডা নৌসেনা কর্তা]
এর আগে ২০০৭-এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন রোহিত। ২০১১-র বিশ্বসেরা ট্রফি উঠেছিল বিরাটের হাতে। কিন্তু দুজনে একসঙ্গে কখনই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পাননি। এবার সেটা হল। কিন্তু বিশ্বজয়ের মাঝেও যে বিদায়ের রিনরিনে সুর। দেশের হয়ে আর টি-টোয়েন্টি খেলবেন না বিরাট আর রোহিত। পরের বিশ্বকাপে আর থাকবেন না দুজন। নতুনদের হাতে ব্যাটন উঠবে। ভারতের জয়রথ থামবে না। কিন্তু ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে থেকে যাবে একরাশ স্মৃতি। হারজিতের সমীকরণ পেরিয়ে ভারতের ক্রিকেটে দুজনের চিরস্থায়ী আসন পাতা।