সৈকত মাইতি, তমলুক: ফেসবুকে বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে দামি উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে এক গৃহবধুর থেকে প্রায় লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল তমলুকে। অনলাইনে অভিনব কায়দায় প্রতারিত হয়েছেন বুঝে তমলুক সাইবার থানার দারস্থ হয়েছেন ওই মহিলা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুকের চনশরপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ শাহানারা খাতুন বিবি। বছর দুয়েক আগে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই মৃত্যু হয় স্বামী শেখ শাহ আলম আলির। আর তারপর থেকেই একা হাতে ছোট-ছোট ৪ সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েন শাহানারা। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে একটা কাজ খোঁজার চেষ্টায় ছিলেন তমলুকের ওই গৃহবধূ।
[আরও পড়ুন: ১৪ বছরেও মেলেনি চাকরি! নবান্ন অভিযানে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চাকরিপ্রার্থীর]
সম্প্রতি ফেসবুক মাধ্যমে বন্ধুত্ব পাতানোর একটি অ্যাপের প্রতি আকর্ষিত হন। সেখানেই ‘ধনী’ ব্যবসায়ী রবি শর্মা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ হয়। মাত্র দিন দুয়েকের এই বন্ধুত্বের সুবাদেই রবি শর্মার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বসেন জাহানারা। বেশকিছু মূল্যবান সামগ্রী জাহানারাকে উপহার হিসেবে পাঠাতে চান বলে জানায় রবি শর্মা। ভিডিও কলে হরেক রকমের হিরে, সোনার গয়না, দামি মোবাইল দেখিয়ে পছন্দ করে নেওয়ার কথা বলেন। এবং সেগুলি কুরিয়ারের মাধ্যমে দ্রুত সুদূর ব্রিটেন থেকে জাহানারার ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে বলে জানান। সেই আনন্দে খানিকটা আপ্লুত হয়ে পড়েন জাহানারাও।
পরদিন অন্য একটি নম্বর থেকে কুরিয়ার মারফত মূল্যবান সামগ্রী দমদমের বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে গিয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু সেই মূল্যবান সামগ্রী পেতে চাইলে কুরিয়ার ফিজ বাবদ ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় প্রতারণার ছক। ধাপে ধাপে এভাবেই কখনও জিএসটি বিল বাবদ, আবার কখনো উপহার সামগ্রী সঙ্গে থাকা ৬ হাজার পাউন্ডের বিদেশি মুদ্রা ভারতীয় মুদ্রায় ভাঙানোর জন্য ট্যাক্স বাবদ হাজার-হাজার টাকা দাবি করা হয়। প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে তমলুকের ওই মহিলা স্থানীয় গায়ে থাকা সমস্ত সোনার গয়না বিক্রি করে প্রতারকদের দাবি মত তিনটি পর্যায়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তাতেও কুরিয়ার থেকে মূল্যবান সামগ্রী না পেয়ে ফোনে যোগাযোগ করলে আরও ৭৫ হাজার টাকা দাবি করে প্রতারকেরা। এমন অবস্থায় প্রতারিত হয়েছেন বুঝে তমলুক সাইবার থানার দারস্থ হয়েছেন জাহানারা।
[আরও পড়ুন: পুলিশি হেফাজতে যুবকের রহস্যমৃত্যু, প্রতিবাদে রণক্ষেত্র হাওড়ার পাঁচলা]
তাঁর কথায়, “স্বামীর মৃত্যুর পর এমনিতেই মাথার উপর ছাদ হারিয়েছি। সন্তানদের মানুষ করার লক্ষ্যে নিজে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার মধ্যেই যে এভাবে ফেসবুকে বন্ধুত্বের হাতছানি দিয়ে অনলাইনে প্রতারণা প্রতারিত হতে হবে তা কখনওই বুঝতে পারিনি।” এদিকে ওই মহিলার অভিযোগ পেয়ে একটি মামলা রুজু করে ঘটনা তদন্ত নেমেছে তমলুক সাইবার থানার পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) এম এম হাসান জানিয়েছেন, অনলাইনে প্রতারণার ঘটনার মতো এমন অভিযোগ এখন ভুরিভুরি আসছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।