এতদিন অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন। এখন পরিচালকের ভূমিকায় তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। কেমন তাঁর অভিজ্ঞতা? কথা বললেন শুভঙ্কর চক্রবর্তী
- বেশির ভাগ নায়ক–নায়িকা বিতর্ক থেকে দূরে থাকেন। আর আপনি একের পর এক কন্ট্রোভার্সিতে জড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনার শেষ ছবি ‘লিহাফ’-এর বিষয় সমকামিতা। কী ভাবে সামলান পুরো ব্যাপারটা?
(হাসি) আমি কোনও কন্ট্রোভার্সিতে জড়াই না। আমি মিডিয়া থেকে দূরে-দূরে থাকি। আর ‘লিহাফ’ নিয়ে কোনও কন্ট্রোভার্সি থাকারই কথা নয়। ইটস আ লেসবিয়ান স্টোরি। ব্যস। দুই নারীর গল্প। ইসমত চুঘতাইয়ের লেখা একটা গল্প। আর আমি একজন স্বাধীন মানুষ। যতক্ষণ না কারও ক্ষতি করছি, আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। এই যে একটা দেশ আর একটা দেশকে বলে ‘আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামছি,’ এটা তো আরও কন্ট্রোভার্সিয়াল।
- প্রায় পনেরো বছরের অভিনয় কেরিয়ার। ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
আমি তৃপ্ত। জীবন সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। অনেক কিছু জানতে পেরেছি। যে কোনও আর্ট ফর্ম মানুষের মনের জানলাগুলো একে একে খুলে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আর আমরা যে সমাজে দাঁড়িয়ে, সেখানে এত হিংস্রতা। আমরা যারা আর্টিস্ট তাদের উচিত আর্টের মাধ্যমে পৃথিবীর কাছে আরও ভালবাসা পৌঁছে দেওয়া।
- অভিনয় ছেড়ে হঠাৎ পরিচালনায়?
আমরা আর্টিস্ট। আমি গান গাই, অভিনয় করি, আমি লিখি, আমি আঁকি, দেশ-বিদেশ ট্র্যাভেল করি। সিনেমা পরিচালনা করা আমার কাছে আর্টের আরেকটা ফর্ম। অ্যানাদার ওয়ে অফ এক্সপ্রেশন। দ্যাটস অল।
[প্রেম-বিছানা-আদর, ওয়েব সিরিজে এক অন্য মোড়কে শরৎচন্দ্রের ‘চরিত্রহীন’]
- আপনি ফেমিনিস্ট বলেই কি পরের পর নারীকেন্দ্রিক ছবি?
আমি মনুষ্যত্বে বিশ্বাস করি। ফেমিনিজম তো মনুষ্যত্বের বাইরে নয়। আমি একটু অন্য রকম চরিত্র করতে পছন্দ করি। গতে বাঁধা চরিত্র আমার জন্য নয়। আমার অভিনীত বেশির ভাগ ছবিতে প্রোট্যাগনিস্ট নারী। যখন একজন নারীকে প্রোট্যাগনিস্ট চরিত্রে দেখা যায়, আমরা বলি এটা নারীকেন্দ্রিক ছবি। সিভি রামনের বায়োপিক তৈরি হলে কিন্তু বলি না এটা পুরুষকেন্দ্রিক ছবি। সমস্যাটা এখানেই।
- ছবির বিষয়বস্তু, কাস্টিং ঠিক করে ফেলেছেন?
এখনও কিচ্ছু হয়নি। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে কথাবার্তা চলছে। নওয়াজের সঙ্গে ছবি নিয়ে কিছু কথা হয়েছে। ব্যস। গল্পটা আমার দেখা টুকরো-টুকরো কিছু ঘটনা নিয়ে। এটুকুই বলতে পারি।
- নওয়াজউদ্দিনকে বাছলেন কেন? প্রথম কারণ কি বন্ধুত্ব?
একদম। আমি আর নওয়াজ যখন আড্ডা মারি তখন সিনেমা নিয়েই আলোচনা বেশি হয়। ওকে নেওয়ার আর একটা কারণ ওর অভিনয়। এ দেশে ওঁর মতো দক্ষ অভিনেতা খুব কম। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে আমার প্রথম ছবিতে নওয়াজ অভিনয় করছে। নওয়াজকে ডিরেক্ট করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং।
- নওয়াজউদ্দিন একের পর এক অসাধারণ ছবি করছেন। ‘ঠাকরে’, ‘মান্টো’। সে নিয়ে কথা হয় বন্ধুর সঙ্গে?
আলাদা করে নওয়াজকে কিছু বলার নেই। ওর সঙ্গে কথা হতেই থাকে। ‘ঠাকরে’র শুটিং সবে শেষ হয়েছে। এখনও পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ বাকি। শেষ হলেই দেখে ফেলব।
[বলিউডের এই নায়িকার জন্য গাইতে চান লতা মঙ্গেশকর]
- আপনি এত সুন্দর বাংলা বলছেন। কিন্তু আপনার ফিল্মোগ্রাফিতে বাংলা ছবি হাতেগোনা। কেন?
(হাসি) আসলে আমি তো কলকাতায় থাকি না। বড় হয়ে ওঠাটাও ওখানে নয়। কিন্তু বাংলা ছবিতে কাজ করার খুব ইচ্ছে আছে। আজকাল দারুণ সব বাংলা ছবি তৈরি হচ্ছে। এ বছরও তো জাতীয় পুরষ্কার পেল দু’টো ছবি।
- বাংলায় কাজ না করতে পারার আক্ষেপ হয়?
হয় তো। ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে কাজ করার খুব ইচ্ছে ছিল। সেটা আর হল না। এই আক্ষেপ থেকে যাবে।
- কোন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছে করে?
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সুমন মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেবদার (দাশগুপ্ত) সঙ্গে কাজ করা ইচ্ছে আছে। সোহিনীর (দাশগুপ্ত) সঙ্গে কাজ করেছি ‘ছোটি মোটি বাতে’ ছবিতে। ওর সঙ্গে আরও কাজ করতে চাই।
- ঋদ্ধি সেনের সঙ্গে কথায় বারবার আপনার নাম উঠে এসেছে। তন্নিষ্ঠাদি নিয়ে বলতে শুরু করলে আর থামেননি ঋদ্ধি। দু’টো ছবিতে কাজ করেছেন ঋদ্ধির সঙ্গে। এ বছর ঋদ্ধি জাতীয় পুরস্কার পেলেন। কথা হয়েছে?
(হাসি) ঋদ্ধি তো আমার ছেলে। ‘পার্চড’, ‘চৌরঙ্গ’ দু’টো ছবিতেই আমার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিল। ওর সঙ্গে আমার একটা অন্য সম্পর্ক। ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের পর ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। খাওয়ালাম। আমি ওর জন্য খুব প্রাউড ফিল করি। খুব ব্রাইট ছেলে। সব সময় শিখতে চায়। যেটা আমাকে ওর প্রতি আকৃষ্ট করে। শুনে ভাল লাগল যে ও আমার কথা বলে। মাচ লাভ টু হিম।
[দীপিকার পর এবার বলিউডের এই তারকার মূর্তি বসবে মাদাম তুসোয়]
The post নওয়াজকে ডিরেক্ট করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং, কেন একথা তন্নিষ্ঠার মুখে? appeared first on Sangbad Pratidin.