অর্ণব আইচ: রাতে ট্যাক্সির জুলুমের অভিযোগ। অতিরিক্ত ভাড়া চেয়েছিল ট্যাক্সিচালক। তা নিয়েই অসুস্থ বৃদ্ধ যাত্রীর সঙ্গে বচসা চালকের। গভীর রাতে এই ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাস্তায় তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিবারের লোকের অভিযোগ, বচসার জেরেই ট্যাক্সিচালক নির্মমভাবে গাড়ির ধাক্কা দেয় শান্তিরঞ্জন পোদ্দার(৬৪) নামে ওই বৃদ্ধকে। তাঁর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় ট্যাক্সির চাকা। ভেঙে যায় কোমরের হাড়। এভাবেই রাতে তিনি কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় পড়েছিলেন। সোমবার ভোরে পর্ণশ্রীর বনমালী নস্কর রোডে ওই ব্যক্তির বাড়ির কাছেই তাঁর দেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে শান্তিরঞ্জনবাবুকে খুনের অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে কোনও সিসিটিভির ফুটেজ না পাওয়ায় এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে এক রিকসাচালক দেখেছিলেন যে, ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে বচসা হচ্ছে ওই বৃদ্ধর। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, পিছন থেকে গাড়ি ওই ব্যক্তিকে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দেয়। গাড়ির চাকা তাঁর বাঁ পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। তাঁর বাঁ পায়ের হাড় ভেঙেছে। এছাড়াও জোরে ধাক্কার কারণে কোমর ও শরীরের আরও কয়েকটি জায়গার হাড় ভেঙে গিয়েছে। পথ দুর্ঘটনার ফলেই মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, ওই ট্যাক্সিটির ধাক্কায় তাঁর মৃতু্য হয়েছে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা করে ট্যাক্সিচালক তাঁকে ধাক্কা দিয়েছে না কি, দুর্ঘটনাবশত ঘটনাটি ঘটেছে, তা তদন্তসাপেক্ষ। আসল ঘটনাটি জানতে পুলিশ ওই ট্যাক্সিচালকের সন্ধান চালাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, রিকসাচালক বচসা হতে দেখেও ঘরে ঢুকে পড়লেন কেন? অসুস্থ স্বামীকেও বা তাঁর স্ত্রী রাতে একা ছাড়লেন কেন? সময়মতো হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার ফলেই তাঁর চিকিৎসার সুযোগও পাওয়া যায়নি, অভিযোগ এমনই।
[আরও পড়ুন : প্রচারে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ, কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধরনায় বসবেন মমতা]
শান্তিরঞ্জনবাবুর স্ত্রী অন্নপূর্ণা পোদ্দার জানান, তাঁর স্বামী প্রস্টেটের অসুখে ভুগছিলেন। তাই তাঁর ক্যাথিটার পালটানোর প্রয়োজন হত। রবিবার রাতে তিনি অসুস্থ বোধ করায় বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ক্যাথিটার পালটাতে যান। কিন্তু ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। রাত এগারোটার পর তিনি বাড়িতে আসেন। স্ত্রীর কাছ থেকে হাজার টাকা নেন। অন্নপূর্ণা জানান, তিনি স্বামীকে ট্যাক্সিতে যাতায়াত করতে বলেছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ তিনি স্ত্রীকে ফোন করে জানান, হাসপাতালে তাঁর কাজ হয়ে গিয়েছে। এবার পার্ক সার্কাস থেকে তিনি বাড়িতে ফিরছেন। এর পর তিনি স্ত্রীকে মোবাইলে জানান, অটো করে তিনি হাজরা মোড়ের কাছে এসেছেন। অপেক্ষা করছেন ট্যাক্সির জন্য। এর পর থেকে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
অন্নপূর্ণা পোদ্দার জানান, আলো ফুটতেই ভোর সাড়ে চারটের কিছু পর তিনি ও এক প্রতিবেশী শান্তিরঞ্জনবাবুর খোঁজে বের হন। বাড়ি থেকে একটু দূরে রাস্তার উপর স্বামী শান্তিরঞ্জন পোদ্দারকে পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে ওঠেন। তিনি জানান, স্বামী রাস্তার উপর উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন। দুই পা যে ভেঙে গিয়েছে, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। পা থেকে বের হচ্ছে রক্ত। তখনও ক্যাথিটারের প্লাস্টিক তাঁর সঙ্গে রয়েছে। একটু দূরে পড়ে রয়েছে তাঁর মানিব্যাগ। মানিব্যাগের ভিতর থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে টাকা ও অন্যান্য কাগজপত্র। এই দৃশ্য দেখেই অন্নপূর্ণা ও ওই প্রতিবেশী চিৎকার, চেঁচামেচি করে অন্য প্রতিবেশীদের ডাকেন। পর্ণশ্রী থানায় খবর যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
[আরও পড়ুন : নির্বাচনী বিধিভঙ্গের জের, ২৪ ঘণ্টার জন্য মমতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা কমিশনের]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, হাজরা মোড়ে শান্তিরঞ্জনবাবু তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। ফলে সেখান থেকেই সম্ভবত তিনি ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন। রাত দু’টোর পর ওই ব্যক্তি বনমালী নস্কর রোডে ট্যাক্সি নিয়ে আসেন। এক রিকসাচালক গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বেরিয়েছিলেন। তিনি দেখেন, ওই বৃদ্ধ ও চালকের মধ্যে বচসা চলছে। চালক তাঁর কাছে ৫০০ টাকা চাইছে। বৃদ্ধ বলছেন, এত অল্প রাস্তায় আসার জন্য তিনি ভাড়া বেশি এত টাকা দেবেন না। এর পর ওই রিকসাচালক ঘরের ভিতর ঢুকে পড়েন। তিনি জোরে একটি শব্দ শুনেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। গাড়ির আওয়াজও শুনতে পান। এলাকায় একটি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও তাতে কিছুই পাওয়া যায়নি। ফলে হাজরা, রাসবিহারী ও বেহালা অঞ্চলের কিছু সিসিটিভির ফুটেজ ঘেঁটে ট্যাক্সিটি শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।