সোমনাথ রায় ও গোবিন্দ রায়: হাই কোর্টের নির্দেশে উচ্চ প্রাথমিকে ১৪ হাজারেরও বেশি শূন্যপদে নিয়োগের কাউন্সেলিং শুরু করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। এবার কাউন্সেলিং বন্ধের আরজি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, প্রথম প্যানেলে নাম থাকলেও নতুন প্যানেলে নাম নেই তাঁদের। ‘অস্বচ্ছ’ প্যানেল তৈরি করে কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
২০১৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিক প্রাথমিকের এসএলএসটি পরীক্ষা হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে মেধাতালিকা প্রকাশ করে রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই তালিকায় অসংগতি থাকার কারণে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের এজলাসে মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য ১১ ডিসেম্বর ২০২০ সালে মেধাতালিকায় অসংগতি থাকার কারণে তা বাতিল করে স্বচ্ছ নিয়োগের নির্দেশ দেন। রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশন কলকাতা হাই কোর্টের এই নির্দেশকে অমান্য করেই ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে প্রথম মেধা তালিকায় যারা ছিল তাদের নাম বাদ দিয়ে অনেকের অ্যাকাডেমিক নম্বর কম, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন এমন অনেকের নামও এই নতুন তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: উপাচার্য নিয়োগ মামলা: অব্যাহত জটিলতা, নির্দেশ পালন নয় কেন? ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের]
ইন্টারভিউ তালিকায় অসঙ্গতির অভিযোগ জানিয়ে প্রথম প্রকাশ হওয়া মেধাতালিকাভুক্ত প্রার্থীরা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের দারস্থ হন। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই তালিকা বাতিল না করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দেন মামলাকারীদের। পরবর্তী সময়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় মামলা। সেখানে প্রথম মেধাতালিকাভুক্ত প্রার্থীরা জানায়, এসএসসি যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে অসংগতি রয়েছে। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, তালিকাভুক্ত প্রার্থীরা এসএসসির কাছে অভিযোগ জানাবে এবং কোর্টের নজরদারিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে। যদিও পরবর্তী সময় বেঞ্চ বদল হয়ে মামলা চলে যায় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে।
বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ প্রথম মেধাতালিকা ভুক্ত প্রার্থীদের এবং এরকম অসংখ্য মামলাকারীদের বক্তব্য না শুনে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট এসএসসি প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দেন। এবং চূড়ান্ত অসঙ্গতি ও অস্বচ্ছতা থাকলেও মামলাকারীদের বক্তব্য না শুনে ডিভিশন বেঞ্চ কাউন্সেলিং-এর নির্দেশ দেয়। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী জানান, মামলাকারীরা প্রথম তালিকাভুক্ত প্রার্থী। তাঁদের নাম কেন বাদ দেওয়া হল, তার কোনও সদুত্তর নেই। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, অনেক প্রার্থীর অ্যাকাডেমিক নম্বর বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, টেট ওয়েটেজ বাড়িয়ে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলাকারীদের নাম কেন বাদ পড়ল, মেধাতালিকা থেকে তার সুস্পষ্ট কোন ইঙ্গিত দেয়নি এসএসসি। মামলাকারীদের বক্তব্য না শুনেই ডিভিশন বেঞ্চ এক তরফা রায় দিয়েছেন বলেও অভিযোগ আইনজীবীর।