অর্ণব আইচ: গোপাল কোথায়? গোপাল দলপতি অন্তর্ধান ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। দিল্লির তিহার জেলে চিটফান্ড কর্তা গোপাল দলপতির খোঁজ করতে গিয়েই মাথায় হাত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের। এতদিন যে গোপাল জেলবন্দি বলেই জানতেন ইডি আধিকারিকরা। আদৌ তিনি নেই জেলে। জামিন পেয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন গোপাল। অথচ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষের থেকে শুরু করে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডলের মুখে বারবার উঠে এসেছে এই গোপাল দলপতির নাম। সেই কারণেই গোপাল দলপতির খোঁজ চালাতে শুরু করে ইডি।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকেই গোপাল দলপতির বিরুদ্ধে চিটফান্ড সংস্থার মালিক হিসেবে বহু আমানতকারীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা তোলার অভিযোগ ওঠে। চিটফান্ডে টাকা তুলে প্রতারণার অভিযোগে ২০২০ সালে জানুয়ারিতে দিল্লি পুলিশ কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গোপালকে। ওই সময় গোপালের স্ত্রী সঙ্গে ছিলেন। গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পালানোর আগেই ধরা পড়েন দম্পতি। এরপর দিল্লির তিহার জেলে জায়গা হয় গোপালের। কিন্তু খোঁজ নেওয়ার পর ইডি’র গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, গত বছরই জামিনে জেল থেকে গোপাল দলপতি বেরিয়ে গিয়েছেন। এই খবর পাওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুরে ভূপতি নগরে গোপালের বাড়িতে ইডি’র আধিকারিকরা খোঁজ নেন। কিন্তু সেখানেও হদিশ মেলেনি ওই ব্যক্তির। এবার গোপালের হদিশ পেতে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে ইডি।
[আরও পড়ুন: ‘দেবের সিনেমায় এনামুলের টাকা’, সরাসরি অভিযোগ হিরণের, সাবধান করলেন মিঠুনকে]
সূত্রের খবর, গোপালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আদালতে আবেদন জানাতে পারেন ইডি আধিকারিক। এমনকি, প্রয়োজনে গোপালের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিসও জারি করা হতে পারে। ইডি’র গোয়েন্দাদের ধারণা, ভিনরাজ্যে কোথাও গা ঢাকা দিয়েছেন গোপাল। এমনকি নতুন করে কোথাও চিটফান্ডের কারবার খোলার ছক চেষ্টা করছেন, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, গোপাল দলপতি কে হাতে পেয়ে জেরা করলে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে আসতে পারে বহু তথ্য। সূত্রের খবর অনুযায়ী, চিটফান্ডের সূত্র ধরেই তাপস মণ্ডলের সঙ্গে গোপাল দলপতির পরিচয়। বেশ কয়েক বছর আগে তাপস মন্ডল নিজেও চিটফান্ড চালাতেন। পর পর চিটফান্ডগুলি ইডি, সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের নজরে আসার পর আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তোলা বন্ধ করে দিয়ে নিয়োগ দুর্নীতিতে হাত পাকাতে শুরু করেন তাপস, গোপালরা।
আর তারই জেরে নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা গোপাল দলপতির চিটফান্ডে লগ্নি করেছিলেন তাপস। এছাড়াও গোপাল নিজেও জড়িয়ে পড়ে নিয়োগ দুর্নীতিতে। তাপসের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে তাপসই গোপালকে কুন্তলের কাছে পাঠান। কুন্তল ও তাপস মণ্ডলের নিয়োগ দুর্নীতির টাকা মূলত যেত গোপালের কাছেই। সেই সূত্র ধরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য সঙ্গে গোপাল দলপতির যোগাযোগের তথ্য খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন ইডি’র গোয়েন্দারা। এদিকে, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করে গোয়েন্দাদের কাছে উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য। এবার গোপাল দলপতির সন্ধান পেতে অন্যান্য রাজ্যেও সন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি।