গোবিন্দ রায়: নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সহযোগিতা করছে না স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। মুর্শিদাবাদের গোথা হাই স্কুলের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনল রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। তা শুনে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর মন্তব্য, ‘‘তদন্তে সহযোগিতা না করলে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে তালা মেরে দিন।’’ এরাই তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। এদিনই পাহাড়ে বেআইনি নিয়োগ নিয়ে এক ব্যক্তি চিঠি দিয়েছেন বলে আদালতে উল্লেখ করেন বিচারপতি বসু। সেই ব্যাপারে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে তাঁর বক্তব্য কী তা জানতে চান। এজি কিশোর দত্ত জানান, ‘‘যে ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চান সেই ব্যক্তির অভিযোগের কতটা সত্যতা আছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।’’ কিন্তু বিচারপতি বসু জানান, ‘‘এ বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন।’’
মুর্শিদাবাদের সুতির গোথা হাই স্কুলে বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সেই স্কুলেরই ভুয়া শিক্ষক ছেলে। অনিমেষ তিওয়ারি নামে ওই শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে নেমে আরও একাধিক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে। এসএসসি-র পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যান শেখ সিরাজুদ্দিনের স্ত্রী জাসমিনার মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকেই চাকরি হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। বাঁকুড়ার ওই শিক্ষিকার স্বামী শেখ সিরাজুদ্দিন বাঁকুড়ার শালডিহা কলেজের অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। অন্যদিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের করণচাঁদ হাই স্কুলের এক শিক্ষক শুভেন্দু হাটুয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। এদিন তাঁর কথাও উল্লেখ করেন বিচারপতি। কীভাবে শুভেন্দু হাটুয়া এখনও চাকরি করছেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত।
[আরও পড়ুন: ‘হাত বেঁধেছে আদালত, নইলে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারে রাজ্য পুলিশই’, দাবি অভিষেকের]
বুধবার বিচারপতি বসুর এজলাসে সেই মামলারই শুনানিতে সিআইডির ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি। এখনও পর্যন্ত এফআইআরে নাম থাকা অভিযুক্তরা কেন গ্রেপ্তার হননি সেই প্রশ্ন তুলে বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি কি এখানে বসব, না কি আপনাদের সিটে যোগদান করব?’’ উত্তরে সিআইডির দাবি, ‘‘সব সময় স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না।’’ আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে প্রশ্ন তুলে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘সিআইডির উপর আমার আস্থা আছে, কিন্তু যদি এফআইআরে নাম থাকা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে কী তদন্ত হচ্ছে?’’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘যদি কোনও কর্মীর নথি কমিশন বা পর্ষদের কাছ থেকে না পাওয়া যায় তাহলে সরাসরি স্কুলে যান, সেখান থেকে নথি সংগ্রহ করুন। এটা কি বিরাট কোনও কাজ?’’ তার প্রেক্ষিতে তদন্তের জন্যে সিআইডি আরও ১৫ দিন সময় চেয়ে আবেদন করে সিআইডি। তা মঞ্জুর করে রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘যাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে তাদের কাছ থেকে বেতন ফেরত নেওয়া যায় কি না সেটা বিবেচনা করে দেখুন।’’ আগামী সোমবার ফের শুনানি।