shono
Advertisement

শহরের ৩ হাসপাতাল ঘুরেও বেড মিলল না, হিমোফিলিয়া আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে চূড়ান্ত নাকাল পরিবার

বর্ধমান থেকে কলকাতায় এসেও মিলল না ন্যূনতম চিকিৎসা।
Posted: 08:31 PM Oct 29, 2020Updated: 04:27 PM Oct 30, 2020

অভিরূপ দাস: রোগী প্রত্যাখ্যান বন্ধ করতে বারবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দফায় দফায় বৈঠক করে সে বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্তা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সাবধানও করেছেন তিনি। তবে এত কিছুর পরও হাসপাতালে রোগী হয়রানি কমেনি, ফের তার প্রমাণ পাওয়া গেল। কলকাতায় এসে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরেও বেড না পেয়ে ফিরে যেতে হল বিরল অসুখে আক্রান্ত বর্ধমানের নাবালিকা।

Advertisement

বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা বছর এগারোর বর্ষা জটিল হিমোফিলিয়া (Haemophilia) রোগে আক্রান্ত। এই অসুখে রক্ত জমাট বাঁধতে চায় না। শরীরের কোনও অংশে কেটে গেলে তাই রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। জটিল এই অসুখে আক্রান্ত শিশু, কিশোররা খুব দ্রুত অন্যান্য সংক্রমণের শিকার হয়। দিন সাতেক আগে চিকিৎসার জন্য প্রথমে বর্ষাকে বর্ধমানেরই একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। কয়েকদিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি থাকার পর বর্ষাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়।

[আরও পডুন: পরকীয়ায় জড়িয়েছে স্ত্রী! স্রেফ সন্দেহে খাস কলকাতায় মহিলাকে গুলি করে খুনের চেষ্টা স্বামীর]

অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘ ১০৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসএসকেএমে (SSKM) পৌঁছেই চক্ষু চড়কগাছ পরিবারের। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ সটান জানিয়ে দেয়, তাদের হাসপাতালে হিমোফিলিয়া বিভাগই নেই। প্রশ্ন উঠছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কি তা জানত না? না জেনেই কীভাবে তারা গুরুতর অসুস্থ নাবালিকাকে এখানে রেফার করে দিল?

বর্ধমানের মেমারি থেকে কলকাতার ভবানীপুর, দীর্ঘ পথ যাতায়াত করে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পরেছিল বর্ষা। তড়িঘড়ি তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta Medical College) রেফার করা হয়। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ওই কিশোরীর গায়ে তখন ধুম জ্বর। কোভিড আবহে মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত বিল্ডিংয়েই করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। ফলে সেখান থেকে খালিক হাতে ফিরতে হল। পরের গন্তব্য নীলরতন সরকার (NRS) মেডিক্যাল কলেজ। সেখানেও বেড না মেলায় অগত্যা এদিন বাড়িতেই ফিরে যেতে হল ঘোষ পরিবারকে। অসুস্থ শিশুর মা ঝুমা ঘোষের অভিযোগ, ”রক্ত না পেলে যে কোনও সময় আমার মেয়েটা মারা যাবে। সকাল থেকে চড়কির মতো পাক খাচ্ছি।”

বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন মেয়েকে নিয়ে মেমারি ফিরে যাচ্ছে ঘোষ পরিবার, তখন পেটের যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে শিশুটি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে বর্ষার পরিবারকে বলে দেওয়া হয়েছিল, অবিলম্বে ব্লাড ট্রান্সফিউশন প্রয়োজন। মায়ের দাবি, শহরে নামজাদা হাসপাতালে ন্যূনতম চিকিৎসাটুকুও মিলছে না।

[আরও পডুন: ‘ক্ষমতায় আসলে তৃণমূল কর্মীদের মামলাও প্রত্যাহার করে নেব’, আশ্বাস দিলীপ ঘোষের]

কোভিড আবহে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে বেরনোর ঝুঁকিও অনেক। জেলা থেকে চিকিৎসার জন্য শহরের হাসপাতালে এসে মাথা কুটে বেড না পাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনে জেলা হাসপাতাল এসএসকেএম, নীলরতনে রোগী রেফার করে দেয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সুপার স্পেশ্যালিটি বিভাগে রেফার করার প্রয়োজন না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানিয়েছেন, হয়তো মেডিসিন বিভাগেই চিকিৎসা সম্ভব। তা সত্ত্বেও রোগীকে নেফ্রোলজি, নিউরোলজি, কার্ডিওথোরাসিকের মতো বিভাগে পাঠানো হয়। শহরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রোগীর চাপ ভয়ংকর। রয়েছে করোনা চিকিৎসা। তার মধ্যে এ ধরনের ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগীর চিকিৎসা করতে তাঁদের আরও সমস্যা হচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement