রিংকি দাস ভট্টাচার্য: চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই বেবাক বদলে গেল আবহাওয়া। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা আর নেই। বরং দিনেমানে গায়ে সোয়েটার রাখাই দায়! কে বলবে, চলতি মাসেই টানা ১০ দিনের বেশি সময় কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ১০-১২ ডিগ্রির কোঠায়?
পশ্চিমি ঝঞ্ঝার সৌজন্যে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে আচমকা গুটিয়ে গিয়েছে শীতের মাতব্বরি। দু’দিনের মহানগরীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় দু’ ডিগ্রি সেলসিয়াস চড়ে বসেছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা আর বিশেষ নামার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ, এ বছরের শীতের মেয়াদ ফুরোল বলে। হয়তো আর ক’দিন। তারপরই লেপ-কম্বল সোয়েটার, টুপি কুলুঙ্গিতে তুলে রাখতে হবে।
মঙ্গলবার মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম। কিন্তু বৃহস্পতিবার তা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেড়ে পৌঁছয় ১৫.১ ডিগ্রিতে। শুধু মহানগর নয়, জেলাতেও ঊর্ধ্বমুখী পারদ। আগামী সপ্তাহের শুরু পর্যন্ত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দুই-ই বাড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, শীতের আর ফেরার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ২৯ জানুয়ারির পর থেকে ফের সামান্য নামতে পারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
[ স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরেই খুন! বেহালায় যুবকের রহস্যমৃত্যুতে নয়া মোড় ]
তাহলে কি জাঁকিয়ে শীতের ইনিংস শেষের পথে?
পরিষ্কার কিছু না বললেও হাওয়া অফিসের কর্তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজটা ঠিক তেমনই। সঞ্জীববাবু জানিয়েছে, পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব কেটে গেলে ফের কিছুটা শীত পড়তে পারে। তবে কনকনে ঠান্ডা বলতে যা বোঝায়, তা কার্যত বিদায় নিয়েছে। যার প্রমাণ অবশ্য মিলেছে এদিনই। এদিন মহানগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তিন ডিগ্রি বেড়ে পৌঁছয় প্রায় ২৯ ডিগ্রির ঘরে। উত্তুরে হাওয়া ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ায় হালকা পোশাকেই দিন কাবার হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন জেলা থেকে শহরে কাজ করতে আসা নিত্যযাত্রীরা। ফুল সোয়েটারে রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা হয়েছে তাঁদের। দপ্তরের এক কর্তার কথায়, সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়ে যাওয়ায় দিনের তাপমাত্রা এখন ক্রমশ বাড়বে। শহরে শুধু সকাল আর রাতের দিকে শীতভাব অনুভূত হবে। বাদবাকি সময় সেভাবে শীত মালুম হবে না।
শীত বস্তুটা আসলে কী, চলতি বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বঙ্গবাসী। টানা ২১ দিনের বেশি সময় শহরের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের নিচে। জেলায় জেলায় থাবা বসিয়েছিল শৈত্যপ্রবাহ। ডিসেম্বরের শুরুতে সেভাবে ঠান্ডার নজির না গড়লেও তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টানা শীতের ওম পুইয়েছে বাংলার মানুষ। কিন্তু পশ্চিমি ঝঞ্ঝা উত্তুরে হাওয়ার পথ আটকে দেওয়ায় হঠাৎই শীতের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। দিনে গরম। রাত বাড়তেই ঠান্ডা। ভোরে শিরশিরে হাওয়া। প্রতিবারের মতো এবারও বছরের এই সময়টা আবহাওয়ার এই ‘দ্বিচারী’ আচরণে কাবু শিশু থেকে বয়স্ক। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাযন্ত্রণা। পরিবর্তনের এই সন্ধিক্ষণে তাই একটু সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। জানিয়েছেন, শিশুদের সকাল ও রাতের দিকে গায়ে শীতপোশাক পরে থাকতে হবে। একইসঙ্গে সর্দিকাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্তদের ঈষদুষ্ণ গরম জলে স্নান করতে বলছেন চিকিৎসকরা।
[ তিন ছাত্রের সাসপেনশন প্রত্যাহার, প্রেসিডেন্সিতে উঠল অনশন ]
The post হাড় কাঁপানো শীতের বিদায়, শুরু সূর্যের উত্তরায়ণ appeared first on Sangbad Pratidin.