নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: মার্কিন ড্রোন হামলায় শুক্রবার ইরানি জেনারেলের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই ইরানের বিদেশমন্ত্রী টু্ইট করে আমেরিকাকে বদলার হুমকিও দিয়েছেন। দুই তেল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বিরোধের ঘটনার উপর নজর রাখছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে দু’পক্ষকেই শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন করেছে। পরিস্থিতির উপর নয়াদিল্লির তরফ থেকে নজর রাখা হচ্ছে বলেই জানা গিয়েছে।
এই ঘটনার আঁচ যে ভারত-সহ বহু দেশের অর্থনীতির উপর পড়তে পারে এমন সম্ভাবনাই প্রবল। সে কারণেই যে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিন বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা লক্ষ করেছি, আমেরিকার আক্রমণে ইরানের এক শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতা নিহত হয়েছেন। এর ফলে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তাতে সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন ভারতও। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ওই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। পরিস্থিতি যেন হাতের বাইরে না চলে যায়। আমরা বিবদমান সব পক্ষকে সংযত হওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।”
[আর পড়ুন: বাজল যুদ্ধের দামামা, ফের ইরাকে ভয়াবহ হামলা আমেরিকার]
আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি অবশ্যই ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়াদিল্লির উদ্বেগের পিছনের কারণ অবশ্যই তেল। এদিন হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে যে চাপানউতোর তৈরি হওয়ার পরেই শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের প্রয়োজনীয় তেলের ৮৩ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এমনিতেই গত বছর তেলের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরপরে নতুন করে তেলের দাম বৃদ্ধি অন্য সমস্যা তৈরি করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল। তাদের মতে, কাঁচা তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি ভারতীয় পকেটেই টান বাড়াবে। এর ফলে প্রথম পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়বে। তাতে পরিবহনের খরচ বাড়বে এবং মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা আরও প্রকট হবে। এমনিতেই পিঁয়াজ, আলুর মত নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। এরপরে পরিবহনের খরচ বাড়লে সমস্ত খাদ্যবস্তুরই মূল্যবৃদ্ধি নিশ্চিত। তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যে আরও বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত না হলে মুল্যবৃদ্ধি তো বটেই দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বড়সড় প্রভাব পড়বে। এদিনই ডলার প্রতি টাকার মূল্য ৭১ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। যা বিগত দেড় মাসে সর্বনিম্ন। একইসঙ্গে ভারতের শেয়ার বাজারে পতন হয়েছে এবং সোনা ও রুপোর দাম তরতর করে বেড়েছে। শেয়ার বাজারের দর কমতে থাকলে আগামী দিনে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। তেল আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেলে দেশের আর্থিক ঘাটতির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে কেন্দ্র যখন আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যস্ত রয়েছে সেইসময় আর্থিক ঘাটতির বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির পক্ষে সুখকর হবে না।
The post সংঘর্ষের পথে আমেরিকা ও ইরান, সংযত হওয়ার আরজি উদ্বিগ্ন ভারতের appeared first on Sangbad Pratidin.