সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রদীপের ঠিক নিচেই থাকে অন্ধকার! আলোর নিচে মুখ লুকিয়ে থাকে আঁধারের অভিশাপ!
একই কথা বলা যায় কোহিনূর হিরের ক্ষেত্রেও। প্রসিদ্ধি তার জগতের আলো হিসেবে। কিন্তু, দীর্ঘ দীর্ঘ শতক জুড়ে শাসকদলকে ভুগতে হয়েছে এই হিরের অভিশাপে!
কোহিনূরের মতো মূল্যবান রত্ন, যার সমাদরের জন্য নতমস্তক দুনিয়া, তার শরীরে কী ভাবে লেগেছিল অভিশাপের দাগ?
সে কথা আজ আর জানা যায় না। কেবল ১৩০৬ সালের এক পুঁথি বলছে, খনি থেকে পাওয়ার সময় থেকেই কোহিনূর অভিশপ্ত। সেই পুঁথির বয়ান বলছে, যে পুরুষ এই হিরে নিজের অধিকারে রাখবেন, তাঁকে সম্পত্তিচ্যুত হতে হবে। দুর্ভাগ্যের ছায়া নেমে আসবে তাঁর বংশে। কেবল ঈশ্বর বা নারীই ধারণ করতে পারেন এই রত্ন!
এবার তাহলে একটু ফিরে দেখা যাক কোহিনূরের হস্তান্তরের ইতিহাসে। তাহলেই বোঝা যাবে, এই অভিশাপ বৃথা নয়! মেকিও নয়!
ইতিহাস বলছে, দক্ষিণের মালওয়া রাজবংশ প্রথম খনি থেকে পেয়েছিল কোহিনূর। সেই হিরে অবশ্য তারা রাখতে পারেনি। সমর্পণ করতে বাধ্য হয় কাকতীয় শাসকদের হাতে। দেখতে দেখতে কাকতীয় শাসকদের সৌভাগ্যের সূর্য অস্তে যায়। সৌভাগ্য আর কোহিনূর- দুই দখল করেন দিল্লির মুসলমান শাসক মহম্মদ বিন তুঘলক। পরে হিরের মালিকানা যায় ইব্রাহিম লোদির হাতে।
নিয়তির পরিহাসে, দিল্লির সিংহাসনে সুলতানি অধিকার কায়েম থাকেনি। সে কি হিরের অভিশাপে? বিতর্ক উঠতেই পারে, কিন্তু ১৩০৬-এর পুঁথির ভবিষ্যদ্বাণী তো সত্যি হতে দেখা যাচ্ছে। তার পরে যখন মুঘলদের হাতে গেল কোহিনূর, তখনও দেখা গেল সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। হুমায়ুন, বাবর সারা জীবন সংগ্রাম করে গেলেন ভারতে রাজত্ব স্থাপনের জন্য। কিন্তু, পারলেন না। সারা জীবন যাযাবরের মতো ঘুরতে হল, জীবন কাটাতে হল যুদ্ধক্ষেত্রে। হুমায়ুনের মৃত্যুও হল অপঘাতে। কেন না, তাঁরা পেয়েছিলেন এই হিরে! তাঁদের পরে রাজা হলেন আকবর এবং জাহাঙ্গির। সৌভাগ্যবশত, দুজনের কারও হাতেই কোহিনূর ওঠেনি! কোহিনূর তখন ছিল পারস্যে। সেই জন্যই বোধ হয় আকবর-জাহাঙ্গির শান্তিতে রাজত্ব করতে পেরেছিলেন। এর পর যখন শাহজাহানের হাতে এল কোহিনূর, শুরু হল মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংসের ইতিবৃত্ত। মুঘল সাম্রাজ্যের পরবর্তী শাসক এবং কোহিনূরের মালিক ঔরঙ্গজেবের সময়ে যে ধ্বংসলীলা সাম্রাজ্যের চার দিকে শিকড় বিস্তৃত করেছিল।
এর পর কোহিনূর আবার যায় পারস্যে। নাদির শাহর কাছে। পরিণামে খুন হন নাদির শাহ। হাত ঘুরে হিরে আসে পাঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিৎ সিংয়ের কাছে।
রঞ্জিৎ সিং জানতেন এই হিরের অভিশাপের কথা। তাই তিনি এই হিরে উৎসর্গ করেন জগন্নাথ মন্দিরকে। কিন্তু জগন্নাথের শিরোভূষণ হওয়ার আগেই কোহিনূর ওঠে ব্রিটিশদের হাতে। দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করেন রঞ্জিৎ সিং। অতঃপর তাঁর নাবালক উত্তরাধিকারী দিলীপ সিং লন্ডনে গিয়ে মহারানি ভিক্টোরিয়াকে সঁপে আসেন কোহিনূর।
এই পর্ব থেকেই স্তিমিত হয়ে যায় কোহিনূরের অভিশাপ। কেন না, তখন সে নারীর শিরোভূষণ! ঠিক যেমনটা বলা ছিল পুঁথিতে। এবং, ব্রিটিশ রাজবংশ আজ পর্যন্ত সেই নিয়মের অন্যথা করেনি। তারাও জানে কোহিনূরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অভিশাপের কথা। তাই ভিক্টোরিয়ার প্রয়াণের পরে সব সময়েই এই হিরে সমর্পণ করা হয় বংশের নারীদের।
এখনও তাই কোহিনূর থেকে গিয়েছে বিদেশেই! অনেকেই দাবি করেন, এই প্রথম কোহিনূর ধারণের শর্ত পূর্ণ হয়েছে। তাই, শান্তির পরিবেশে থেকে গিয়েছে সে। তা বলে, অভিশাপ যে মুছে গিয়েছে তার গা থেকে, এমনটা নয়!
কেউ যদি ভুলেও নিয়ম ভাঙেন, তাহলেই হয়তো ফের শুরু হবে তার ধ্বংসলীলা!
The post এই হিরের গায়ে লেগে আছে এক অমোঘ অভিশাপ! appeared first on Sangbad Pratidin.