সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোচবিহারে (Cooch Behar) জনসভা। আর সেখানে সম্প্রতি বিএসএফের গুলিতে নিরীহ মানুষজনের মৃত্যু যে ইস্য়ু করে হবে, তা আন্দাজ করা গিয়েছিল। তবে তা নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিজের ভিন্ন রূপ দেখালেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বিএসএফের (BSF) গুলিতে নিহত যুবক প্রেমকুমার বর্মনের পরিবারকে তুলে আনলেন মাথাভাঙার মঞ্চে। কান্নায় ভেঙে পড়া তাঁর মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিলেন নিজের রুমাল দিয়ে! এহেন মানবিক অভিষেককে দেখে অবাক অনেকেই। এরপর নিহতের বাবা, দাদাকে সভামঞ্চ থেকেই অভিষেক কথা দিলেন – ”এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য়ে কে? শেষ দেখে ছাড়ব।” পাশাপাশি যেহেতু বিএসএফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে কার্যত হুঁশিয়ারি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চাই।
গত ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ কোচবিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা গীতালদহে বিএসএফের গুলিতে তরুণের মৃত্যু ঘিরে বেশ শোরগোল তৈরি হয়েছিল। ভরবান্ধা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের প্রেমকুমার বর্মণ। তিনি বেঙ্গালুরুতে দিনমজুরি করতেন। ওইদিন সকালে প্রেম সীমান্তের দিকে গিয়েছিলেন। তখনই বিএসএফ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি (Shootout) চালায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন প্রেম। আশেপাশের লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত (Death)বলে ঘোষণা করেন।
[আরও পড়ুন: তাঁর গড়ে শুভেন্দুর সভা, অথচ থাকছেন না দুধকুমার মণ্ডল!]
এদিন মাথাভাঙা কলেজ ময়দানে জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে আনলেন অভিষেক। তাঁর দাবি, প্রেমকুমারকে এমন নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল, যে তাঁর শরীরে ১৮০ টি বুলেটের টুকরো পাওয়া যায়। এরপর অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, ”প্রেমকুমার কি জঙ্গি? সে কি পাচার করছিল? তাঁর কাছ থেকে গরু না সোনা – কী পাওয়া গিয়েছে যে এভাবে গুলি চালিয়ে দিল বিএসএফ?” প্রসঙ্গত কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু বিএসএফের এহেন কাজের পর একবারও কেন সাংসদ ওই পরিবারের খোঁজ নিলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। এরপরই হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কে? শেষ দেখেই ছাড়ব। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিন নিশীথ প্রামাণিক, জবাব দিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
[আরও পড়ুন: রোগ সারানোর নামে একরত্তির দাঁত ভেঙে মেঝেয় আছাড় ওঝার, মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য]
প্রেমকুমার বর্মনের পরিবারকে এদিন মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন অভিষেক। কাঁদতে কাঁদতেই তাঁরা মঞ্চে যান। নিজের পকেট থেকে সাদা রুমাল বের করে মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। প্রেমের দাদা, বাবাও ছিলেন মঞ্চে। তাঁদের জড়িয়ে ধরে অভিষেক বলেন, ”চিন্তা করবেন না। আমি আজই গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনার নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করব। আপনারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। কোনও অসুবিধা হলেই বলবেন।” তবে এদিনের মঞ্চে অভিষেকের এহেন মানবিক মুখ দেখে অনেকেই অবাক। রাজনৈতিক নেতা থেকে ক্রমশই তিনি জনতার নেতা হয়ে উঠছেন, মত সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের। আবার অনেকের মত, প্রেমকুমারের পরিবার রাজবংশী। তাই এভাবে রাজবংশীদের মন জয়ের চেষ্টা করলেন অভিষেক।