রমেন দাস: তিনি পেরেছেন! অবশেষে 'বিধায়ক' হয়েছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার শুষ্কমাটির 'সাংসদ' হওয়ার জল্পনা থাকলেও বরানগরের সেরা হয়েছেন অভিনেত্রী। বিজেপির সজল ঘোষ, বামপ্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য আবার বরানগর জুড়ে দলীয় 'কোন্দল' কাটিয়ে জয় পেয়েছেন বিধাননগরের পুলিশ পরিবারের মেয়ে।
বরানগর উপনির্বাচনে তাপস রায়ের ছেড়ে যাওয়া আসনে ৮ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন নায়িকা। কিন্তু সায়ন্তিকার (Sayantika Banerjee) এই জয়ের পথেও এসেছে বহু বাধা! কিন্তু 'মাইক মামণি', 'মার গুড় দিয়ে রুটি'- তকমা ছাড়িয়ে তিনিই হয়ে উঠেছেন মমতা ঘরানার আরও এক মহিলা জনপ্রতিনিধি। জিতেই দিদির কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েছেন। ফুলের তোড়া পেয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছ থেকে। জয়ের পর সেই সায়ন্তিকা বলছেন, ''কথা দিচ্ছি জিতেই পালিয়ে যাব না, হয়ে উঠব ঘরের মেয়েই। বাড়ি বাড়ি প্রচার করেছি, বহু সমস্যা ছিল, সব মিটেছে মানুষের আশীর্বাদে।''
[আরও পড়ুন: বিচারপতি সিনহার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন, মামলা ফিরল প্রধান বিচারপতির কাছে]
তবুও 'বিধায়ক' হয়েও খানিকটা যেন মনখারাপও হয়েছে তৃণমূল (TMC) নেত্রীর। টবিন রোডের কাছের অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ে বসে মিস্ করছেন তাঁর চার সন্তানকে। যাদের তিনজন ছিল আগেই, সদ্য সায়ন্তিকার সংসারে এসেছে আরও একজন। চার সারমেয়কে নিয়ে জমজমাট টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট এখন প্রায় ফাঁকা! বর্তমানে বরানগরের ভাড়াবাড়িতে রয়েছে দুজন। যাদের নিয়েই একটু আধটু অবসর কাটছে বরানগরের জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর।
পোষ্যদের সঙ্গে সায়ন্তিকা।
লোকসভায় বাঁকুড়ায় টিকিট না পাওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় জল্পনা, আবার বরানগরের প্রার্থীপদ (Baranagar)। দীর্ঘ এই যাত্রায় অভিনেত্রী বারবার পড়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার সমালোচনার মুখে। 'অপমানিত'ও হয়েছেন বারবার! ব্যক্তিগত আক্রমণ, 'মাইক মামণি'র মতো কুরুচিকর তকমাও সহ্য করেছেন। তবুও তিনি বলছেন, ''বরানগর বিধানসভার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে সব জবাব দিয়েছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করেছি। মানুষ ভালোবেসেছেন। আবার সবকিছুর পরেও ওরা (পোষ্য) আমায় ভালোবেসেছে নিরন্তর।''
তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর থেকেই পড়ে থেকেছেন বরানগরে। মা, বাবার সঙ্গেও প্রায় দেখা হয়নি তাঁর। মনখারাপ হয়েছে? অভিনেত্রীর কথায়, ''মায়ের সঙ্গে রোজ রাতে ফোনে কথা হয়েছে। মনখারাপ তো হয়েছে। দেখা হয়নি সেভাবে। বরানগরও আমার পরিবার। অনেক কাজ বাকি এখনও।''
[আরও পড়ুন: বধূর ‘শ্লীলতাহানি’, ফের কাঠগড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ]
বাড়ি ফিরলেই সারমেয়দের সঙ্গেও খুনসুটি চলে সায়ন্তিকার। কালুয়া থেকে শুরু করে বীরা, চার সারমেয়ের নামেও রয়েছে অভিনবত্ব। সায়ন্তিকার কাছের সিরাজ, টিকিও। গোল্ডেন রিট্রিভার প্রজাতির সিরাজ থেকে চাউ চাউ প্রজাতির কালুয়া। সায়ন্তিকার এক আকাশ জুড়ে থাকে ওরাই। অভিনেত্রী বলছেন, ''যখন আমি বাঁকুড়া ছিলাম, প্রথম প্রথম খুব মিস করতাম ওদের। আর পারিনি, নিজের সঙ্গেই নিয়ে যেতাম কাউকে কাউকে। ছোটবেলা থেকেই পোষ্য আমার খুব কাছের। আমি বিশ্বাস করি, সবাই কথা না রাখলেও সব পজিটিভিটি দেবে ওরাই। কেউ যদি আমায় ওদের মা বলেন, আমি ভীষণ খুশি হই।''
সন্তান স্নেহের সারমেয় থেকে অবসরে বই, সায়ন্তিকার বিধায়ক জীবন শুরুর প্রথম পর্ব থেকেই ওরাই যেন সব। বরানগরের সুখ, বাঁকুড়ার ক্ষত, সব পেরিয়ে নেত্রী সায়ন্তিকা বলছেন, কালুয়াদের জন্যও তো ভাবতে হবে আমাদেরই, তাই না!